Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

মানবদেহে কুলকুণ্ডলিনী, ষটচক্র, নাড়ী ও বায়ুর অবস্থিতি:। Kundalini Shakti,

 মানবদেহে কুলকুণ্ডলিনী, ষটচক্র, নাড়ী ও বায়ুর অবস্থিতি:

মানবদেহে কুলকুণ্ডলিনী, ষটচক্র, নাড়ী ও বায়ুর অবস্থিতি:


যোগশাস্ত্র মতে কুলকুণ্ডলিনী হচ্ছে সমস্ত শক্তির আধার। প্রাচীনকালের সিদ্ধিপ্রাপ্ত যোগী-ঋষিরা মানবদেহ ও মনের কুণ্ডলিত শক্তি-উৎস সম্পর্কে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে মত অনুসরণ করেই যুগে যুগে সাধকপুরুষরা যোগসাধনায় ব্যাপৃত থেকে এই শক্তিকে জাগরিত করে সিদ্ধিলাভের অন্বিষ্ট খুঁজেছেন।

বিমুক্তিসোপান গ্রন্থে বলা আছে-

গুহ্যেলিঙ্গে তথা নাভৌ হৃদয়ে কণ্ঠদেশকে।

ভ্রূমর্ধ্যহেপি বিজানীয়াৎ ষট্চক্রান্তু ক্রমাদিতি।।

অর্থাৎ ভ্রূমধ্যে, কণ্ঠদেশে, হৃদয়ে, নাভিমূলে, লিঙ্গদেশে ও গুহ্যস্থানে ষটচক্র বিরাজ করেন।এই মূলাধার প্রদেশেই মুখব্যাদান করে ব্রহ্মদ্বারে সর্পাকৃতি কুলকুণ্ডলিনীর অধিষ্ঠান । এখানকার বীজমন্ত্র হলো "লং" ।এই বীজের ঠিক নীচে একটি ত্রিকোণ আছে । সেখানেই সুপ্তভাবে কুন্ডলিনী বিরাজ করেন।একটি ধুসর লিঙ্গকে সাড়ে তিন পাকে জড়িয়ে তিনি সুপ্তভাবে থাকেন নিদ্রিতরূপে। এই শক্তি যতক্ষণ নিদ্রিত থাকে ততক্ষণ মানুষও পশুর মত থাকে।তার উত্তরণের শুরু হয় এই শক্তি জাগ্রত হলে।এখান থেকেই সুষুম্না নাড়ির উদ্ভব ঘটে।এর বাঁ দিক থেকে ওঠে ইড়া নাড়ি এবং ডানদিক থেকে পিঙ্গলা নাড়ি ।ইড়া নাড়ি চন্দ্র্স্বরূপা, পিঙ্গলা নাড়ি সূর্যস্বরূপা এবং সুষুম্না নাড়ি চন্দ্র,সূর্য ও অগ্নি স্বরূপা। এই চক্রের চারটি পাঁপড়িনির্দেশ করে ধর্ম,অর্থ,কাম,মোক্ষ।এখান থেকেই সবার সাধনার শুরু।এর তত্ত্ব হলো পৃথিবী এবং এর ইন্দ্রিয় ঘ্রানেন্দ্রিয়।

সুষুম্নার এই সূক্ষ্ম, জ্যোতির্ময়, সূত্রাকার ও প্রাণময় পথই মুক্তির পথ। মুক্তির এই পথ দিয়েই কুণ্ডলিনীকে উর্ধ্বদিকে চালিত করতে হয়।

কুণ্ডলিনীর অবস্থান সম্বন্ধে সিদ্ধ-যোগীদের বক্তব্য হচ্ছে- ‘মেরুদণ্ডের নিম্নদেশে যে মূলাধার চক্র আছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানটি হচ্ছে প্রজননশক্তি বীজের আধার। একটি ত্রিকোণ মণ্ডলে একটি ছোট সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে- যোগীরা এঁকে এই প্রতীকে প্রকাশ করেছেন। এই নিদ্রিত সর্পই কুণ্ডলিনী । এঁর ঘুম ভাঙানোই হচ্ছে রাজযোগের একটিমাত্র লক্ষ্য।’


মহাসর্প অনন্ত যেমন রত্ন-নিধিসমাকীর্ণা পৃথিবীর একমাত্র আধার, তেমনি কুণ্ডলিনী শক্তি হঠ্তন্ত্রের আধার। ঐ কুণ্ডলিনী শক্তি জাগরিতা হলে শরীরে ষট্চক্রস্থিত অখিল পদ্ম ও গ্রন্থি ভেদ হয়ে যাওয়ায় প্রাণবায়ু সুষুম্নাচ্ছিদ্র দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। প্রাণায়াম অভ্যাসে যা বিশেষ প্রয়োজন।

প্রণয়মূলক চিন্তা বা পাশব-কার্য থেকে যে যৌনশক্তি উত্থিত হয়, তাকে উর্ধ্বদিকে মানব শরীরের মহাবিদ্যুৎ আধার মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারলে সেখানে সঞ্চিত হয়ে যৌনশক্তি ‘ওজঃ’ বা আধ্যাত্মিক শক্তিলাভে সাহায্য করে। এই ‘ওজস’ হচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব- একমাত্র মনুষ্যশরীরেই এই শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব। যাঁর ভেতর সমস্ত পাশব যৌনশক্তি ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে, তিনি মহাপুরুষ বা দেবতার পর্যায়ে উন্নীত হন।

যোগীরা মনে মনে কল্পনা করেন যে এই কুণ্ডলিনী সর্প সুষুম্না পথে স্তরে স্তরে চক্রের পর চক্র ভেদ করে মস্তিষ্কের সহস্রধারে উপনীত হয়। মনুষ্য শরীরের শ্রেষ্ঠ শক্তি যৌন-শক্তি যে পর্যন্ত না ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়, সে পর্যন্ত নারী বা পুরুষ কেউই ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে পারে না।

কোন শক্তিই সৃষ্টি করা যায় না, তবে তাকে শুধু ঈপ্সিত পথে চালিত করা যেতে পারে। এটাই রাজযোগের উদ্দেশ্য। কিন্তু এটা সাধারণ গৃহীদের কাজ নয়। একমাত্র যোগীরাই যোগ প্রভাবে এই সমস্ত নাড়ী সম্বন্ধে সবিশেষ জানতে পারেন এবং তা অনুভবও করেন। রাজযোগ অভ্যাস করতে হলে প্রথমে হঠযোগ আয়ত্তে আনতে হয়। হঠযোগই রাজযোগের সোপান। আর এই হঠযোগের একটা বিরাট অংশ হলো অষ্টাঙ্গযোগ । কারণ এর অঙ্গ হলো আটটি- (১) যম (২) নিয়ম (৩) আসন (৪) প্রাণায়াম (৫) প্রত্যাহার (৬) ধারণা (৭) ধ্যান ও (৮) সমাধি ।

বলা হয়ে থাকে, আমাদের শরীরের মধ্যে মৃণালতন্তুর ন্যায় সূক্ষ্ম জগন্মোহিনী আদ্যাশক্তি ও প্রাণশক্তির মূল কুলকুণ্ডলিনী শক্তি নিজের মুখব্যাদান করে ব্রহ্মদ্বারের মুখ আবৃত করে জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মধ্যবর্তী কুন্দস্থানে সর্বদা নিদ্রিত রয়েছেন। এ স্থানকে বলে মূলাধারচক্র। এটা সুষুম্না নাড়ীর একটি গ্রন্থি। আমাদের স্নায়ুরজ্জুর প্রধান ধারক মেরুদণ্ড মস্তিষ্কের নিম্নাংশ থেকে বের হয়ে গুহ্যদেশে এসে শেষ হয়েছে। যোগ-শাস্ত্রকারীদের মতে মেরুদণ্ডের বাঁদিকে ইড়া, মধ্যে সুষুম্না ও ডানদিকে পিঙ্গলা নাড়ী বিরাজমান। আমাদের সঞ্চারণমান প্রাণবায়ু ইড়া-পিঙ্গলা নাড়ীর মধ্যে দিয়ে চক্রাকারে সতত আবর্তিত হচ্ছে। সুষুম্না একটি অতি সূক্ষ্ম, জ্যোতির্ময়, সূত্রাকার ও প্রাণময় পথ- মেরুদণ্ডের পথে যার অবস্থান। সুষুম্না নাড়ীর এই প্রাণময় পথে ছয় স্থানে ছয়টি চক্র বিরাজ করছে, যাকে ষটচক্র বলা হয়। এগুলি হলো :

আজ্ঞাচক্র : এই চক্রটি দুই ভ্রূরুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। তান্ত্রিকদের মতে— এই চক্র থেকে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদির অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়। এই চক্রের খুব কাছেই আজ্ঞা চক্রের উপরেই রয়েছে মনস ও সোম নামক দুটি ক্ষুদ্র চক্র। তান্ত্রিকদের মতে এই চক্রের মাধ্যমে গুরু আজ্ঞা বা নির্দেশ আসে। এই কারণে এর নাম আজ্ঞাচক্র।

বিশুদ্ধচক্র : এর অবস্থান মেরদণ্ড সংলগ্ন কণ্ঠমূল বরাবর। তান্ত্রিকরা মনে করেন, এই চক্রের মাধ্যমে মানুষ শুদ্ধ হয়।

অনাহত চক্র : হৃদপিণ্ড বরাবর নাভিপদ্মের উপরে মেরুদণ্ড সংলগ্ন অঞ্চলে এই চক্রটি অবস্থিত। তান্ত্রিকদের মতে, এই চক্রের মাধ্যমে সাধকরা অনাহত নাদ শুনতে পারেন।

মণিপূর চক্র : নাভিদেশের কেন্দ্রে এই চক্রের অবস্থান। গোতময়ী তন্ত্রের মতে এই স্থানে অসীম এবং শক্তিশালী তেজ অবস্থান করে। এই তেজকে মণির সাথে কল্পনা করে এর নামকরণ করা হয়েছে মণিপূরকচক্র।

স্বাধীষ্টান চক্র : এর অবস্থান নাভিচক্রের নিচে।

মূলাধার চক্র : এই চক্রে রয়েছে সকল নাড়ির মূলবিন্দু। জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত স্থানকে বলা হয় কুন্দস্থান। এই কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান প্রধান নাড়িগুলো উৎপন্ন হয়েছে। এই চক্রে সকল শক্তির আধার বিদ্যমান থাকে। এই শক্তিকে বলা হয় কুলকুণ্ডলিনী। কুন্দস্থানে এই কুলকুণ্ডলিনী নিদ্রিত সাপের আকারে বিরাজ করে। হিন্দু তন্ত্রমতে— শরীরের পদ্মসূত্রের মতো সূক্ষ্ম আদ্যাশক্তি ও প্রাণশক্তির মূল কুলকুণ্ডলিনী শক্তি কুন্দস্থানে ঘুমিয়ে আছেন। সেই মত অনুসরণ করে যোগীরা এই কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগরিত করে সিদ্ধিলাভ করার চেষ্টা করে থাকেন।

আমাদের শরীরের মধ্যে আবার অসংখ্য নাড়ী আছে, তার মধ্যে ১৪টি প্রধান। এগুলো হলো- ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, সরস্বতী, বারূণী, পূষা, হস্তিজিহ্বা, যশস্বিনী, বিশ্বোদরী, কুহূ, শঙ্খিনী, পরদ্বিণী, অম্লম্বুষা ও গান্ধারী।

কূহূ : কুহূনাড়ি জননেন্দ্রিয়ের সমস্ত কাজ সুসম্পন্ন করে। এর অবস্থান সুষম্নার বাম দিকে।

বিশ্বোদরা : ইড়া ও সুষম্নার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই নাড়ি অবস্থিত। এই নাড়ি উভয় নাড়ির সমান্তরলাভাবে বিস্তৃত।

গান্ধারী : সুষম্নার বাম দিককার সহযোগী স্নায়ুমণ্ডলীর মধ্যে এই নাড়ি অবস্থিত। বাম চোখের প্রান্তের তলদেশ থেকে বাম পা পর্যন্ত এই নাড়ি অবস্থিত।

হস্তীজীহ্বা : সুষম্নার সম্মুখভাগে এই নাড়ি অবস্থিত। বাম চোখের প্রান্তভাগ থেকে বাম পায়ের বুড়ো আঙুল পর্যন্ত এই নাড়ি অবস্থিত।

শঙ্খিনী : আর আর শঙ্খিনী নাড়ি দেহের মলাদি নির্গমনে সহায়তা করে।

জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান নাড়ীগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। এদের মধ্যে কুহূনাড়ী জননেন্দ্রিয়ের সমস্ত কাজ সুসম্পন্ন করে আর শঙ্খিনী নাড়ী দেহের মলাদি নির্গমনে সহায়তা করে। এই কুন্দস্থানেই কুলকুণ্ডলিনী নিদ্রিত সাপের আকারে বিরাজ করছেন।

বায়ু ও নাড়ী তত্ত্ব :-

মানুষের পঞ্চভূতের দেহের মধ্যে বায়ু অন্যতম। আমাদের দেহে পাঁচ ধরনের বায়ু কাজ করে।

১)প্রাণ বায়ু ২)অপান বায়ু ৩)সমান বায়ু ৪)ব্যান বায়ু এবং ৫) উদান বায়ু।

১) প্রাণ বায়ু : আমাদের শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাসের বায়ুকে প্রাণ বায়ু বলে। প্রাণই এ শ্বাস-প্রশ্বাসের মূল শক্তি। এ প্রাণকে প্রানায়ামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা যায়। আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি সুতোর মত। এটি ধারন বা সংযম করতে পারলে স্মায়ুবিক শক্তিপ্রবাহরুপ শক্ত সুতো, তারপর মনোবৃত্তিরুপ শক্ত দড়ি, পরিশেষে প্রাণরুপ রজ্জুকে ধরতে পারা যায়। প্রাণকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলেই মুক্তিলাভ হয়ে থাকে। প্রানায়েমের মাধ্যমে শরীর এবং মনকে সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রনে আনা যায়। প্রাণ বায়ুর গতি মুখ ও নাক পর্যন্ত এবং বৃত্তি হৃদয় পর্যন্ত।

প্রানায়ামের মাধ্যমে প্রাণকে নিয়ন্ত্রন করেই সাধকরা অষ্টসিদ্ধি লাভ করে প্রায় ঈশ্বরীয় ক্ষমতা ভোগ করতে পারে।

২) অপান বায়ু : মানুষের নাভির নিচে এ বায়ুর অবস্থান। এ বায়ু দুষিত হলেই মানব দেহে নানাপ্রকার রোগের সৃষ্টি হয়। এ অপান বায়ু শুদ্ধির প্রক্রিয়াটি সাধকরা জানার ফলে তারা কখনো অসুস্থ হন না। এ অপান বায়ুর বৃত্তি নাভিমূল থেকে পায়ের নীচ পর্যন্ত।

৩) সমান বায়ু : আমাদের দেহের নাভিমুলে সমান বায়ুর অবস্থান। এ সমান বায়ু প্রাণ এবং অপান বায়ুকে আলাদা করেছে। সমান বায়ু শরীরে সমতা নিয়ে আসে(স্থাপন করে)। এ বায়ুর প্রভাবে দেহ জ্যোতিস্মান ও তেজীয়ান হয়।

৪) ব্যান বায়ু : ব্যান বায়ু সমস্ত শরীরে ব্যাপ্ত থাকায় তা ব্যান বায়ু।

৫) উদান বায়ু : নাভিমূল থেকে মস্তক পর্যন্ত উদান বায়ুর বৃত্তি।আমাদের কথা বলার সক্ষমতা এ বায়ুর কারনেই হয়ে থাকে।উদান বায়ুর সমস্যার কারনে মানুষ তোতলা বা বোবা হয়। মানুষের বোধরুপ স্নায়ুতন্ত্র উদান বায়ুর আশ্রয়।

প্রাণ বায়ুর সাথে অপান বায়ুর মিলন ঘটিয়ে সাধকরা ইচ্ছামৃত্যু লাভ করতে পারে।কিন্তু এজন্য দীর্ঘকাল সাধনার প্রয়োজন। এ যুগে মানুষের আয়ু ১১৬ বছর। কিন্তু সাধকরা দীর্ঘকাল সাধনার দ্বারা প্রাণ ও অপান বায়ুর মিলন ঘটায়ে এ আয়ু আরো অনেক বছর বাড়াতে পারেন।লোকনাথ ব্রহ্মচারী নিজে ১৬০ বছর বেঁচেছিলেন ।

এছাড়া আরও পাঁচ প্রকা‌রের সুক্ষ বায়ু আছে, তা হলো –

নাগ– যা চক্ষু, মুখ ইত্যা‌দি‌কে বিস্তার কর‌তে সাহায্য ক‌রে, তা‌কে ব‌লে নাগ বায়ু।

কৃকর– যে বায়ু ক্ষুধা বৃ‌দ্ধি ক‌রে, তা‌কে ব‌লে কৃকর বায়ু।

কূর্ম– যে বায়ু সং‌কোচ‌নে সাহায্য ক‌রে, তা‌কে ব‌লে কূর্ম বায়ু।

দেবদত্ত– যে বায়ু হাই তোলার মাধ্য‌মে ক্লা‌ন্তি দূরীকর‌ণে সাহায্য ক‌রে, তা‌কে ব‌লে দেবদত্ত বায়ু।

ধনঞ্জয়– যে বায়ু পু‌ষ্টি সাধ‌নে সাহায্য ক‌রে, তা‌কে ব‌লে ধনঞ্জয় বায়ু।

এবার জানা যাক জ্ঞান-সঙ্কলিণী তন্ত্র বায়ু ও নাড়ী তত্ত্ব সম্মন্ধে কি বলছে :-

দেবী বললেন – হে দেব শক্তি কে? এবং শিব কে? তা আগে আমাকে বলুন তারপর জ্ঞানের বিষয়ে বলবেন।

মহাদেব বললেন – হে দেবী চিত্ত যখন অস্থির তখন তাতে শক্তি অবস্থান করেন এবং চিত্ত যখন স্থির হয় তখন তাতে শিব অবস্থান করেন। চিত্ত স্থির হলে জীব দেহ ধারণ করেই সিদ্ধি বা মোক্ষ লাভ করে থাকে।

দেবী জিজ্ঞেস করলেন – শরীরের কোন স্থানে তিন প্রকারের শক্তি , ছয় প্রকারের চক্র, একুশ টি ব্রহ্মাণ্ড ও সাত প্রকারের পাতাল অবস্থিত আছে তা আমাকে বলুন।

মহাদেব বললেন- উর্দ্ধশক্তি কণ্ঠে, অধোশক্তি গুহ্যদেশে এবং মধ্য-শক্তি নাভিতে অবস্থিত। আর যিনি এই তিন শক্তির বাইরে তাকেই নিরঞ্জন ব্রহ্ম বলে। গুহ্য চক্রকে আধার, লিঙ্গ-চক্রকে স্বাধিষ্ঠান, নাভি-চক্রকে মনিপুর, হৃদয়-চক্রকে অনাহত, কণ্ঠ-চক্রকে বিশুদ্ধ এবং মস্তক-চক্রকে সহস্রদল বলে। যিনি এই ছয় চক্রকে ভেদ করতে পারেন তিনি চক্রাতীত ও নমস্য ব্যক্তি। শরীরের উর্দ্ধ দিক হল ব্রহ্মলোক। এবং শরীরের নীচের দিক হল পাতাল লোক। এই শরীর বৃক্ষের মত কিন্তু এর উর্দ্ধদিক হল সেই বৃক্ষের মূল স্বরূপ এবং নিম্নদিক হল সেই বৃক্ষের শাখা স্বরূপ।

দেবী বললেন – হে শিবশঙ্কর, আমাকে বলুন এই দেহের মধ্যে কি ভাবে দশ প্রকার বায়ু অবস্থিত এবং যে দশটি দরজা আছে সেগুলি কি কি ?

মহাদেব বললেন – হৃদয়ে প্রাণবায়ু, গুহ্যদেশে অপাণবায়ু, নাভিদেশে সমান বায়ু, কণ্ঠে উদানবায়ু, দেহের ত্বকে ও সারা দেহ জুড়ে ব্যান বায়ু অবস্থিত। নাগ বায়ু উর্দ্ধপান হতে আগত এবং কূর্ম্মবায়ু তীর্থ দেশে আশ্রিত। কৃকর বায়ু মানসিক ক্ষোভে, দেবদত্ত বায়ু হাই তুললে এবং ধনঞ্জয় বায়ু গভীর চিৎকার করলে নিবেশিত হয়ে সাম্য রক্ষা করে। এই দশ প্রকার বায়ু নিরালম্ব (অবলম্বন শূন্য) এবং যোগীগণের যোগ সম্মত। আমাদের শরীরের নবদ্বার প্রত্যক্ষ করা যায় এগুলি হল দুটি চোখ, দুটি কান, দুটি নাসারন্ধ্র, মুখ, গুহ্

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.