Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

তিলক কী?, What is tilak?, আমরা কেন তিলক পরিধান করবো?, Why do we wear tilak?

★ তিলক_বিভ্রাট_নিরসন

★কোন_তিলক_নিষিদ্ধ?


★শাস্ত্র ও গৌড়ীয় সিদ্ধান্ত


..........


                  Wearing tilak, তিলক ধারণ করা 





প্রধান চার বৈষ্ণব সম্প্রদায় সকলেই ঊর্ধ্বপুন্ড্রক ধারণ করেন। তথাপি তাদের মধ্যে তিলক ধারণে অল্প-বিস্তর পার্থক্য লক্ষণীয়। একই বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভিতরেও শাখা উপশাখা ভেদে তিলকের মূল কাঠামো ঠিক রেখে সামান্য কিছু পার্থক্য চোখে পড়ে। প্রত্যেকেই নিজ নিজ গুরুপরম্পরা অনুসারে নিজের আরাধ্যকেও অনুরূপ তিলক করান। সকলেই যথাযথ। 


কিন্তু ঊর্ধ্বপুন্ড্রক হওয়া সত্ত্বেও শাস্ত্রে বিশেষ কিছু তিলককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা আসুরিক। অসুরগুরু শুক্রাচার্য্য মোহন সৃষ্টির জন্য এ সকল তিলকের প্রচলন করেছিলেন। তাই তিলক ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা আবশ্যক।


পদ্মপুরাণের উত্তরখন্ডে সদাশিব বৈষ্ণবধর্ম ব্যাখাকালে পার্বতীকে ঊর্ধ্বপুন্ড্রক ধারণবিধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে কোন প্রকার ঊর্ধ্বপুন্ড্রক ধারণ কর্তব্য, কোন প্রকার ধারণ অকর্তব্য তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন। 


অশ্বত্থপত্রসঙ্কাশো বেণুপত্রাকৃতি স্তথা। 

পদ্মকুমলসঙ্কাশো মোহনং ত্রিতয়ং স্মৃতম্।। 

[পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ডম, অধ্যায় ২২৫, শ্লোক ৫৬]

বঙ্গানুবাদ:

অশ্বত্থ পত্রাকৃতি, বংশপত্রাকৃতি তথা পদ্মকলিকাকৃতি এই ত্রিবিধ তিলক শাস্ত্রে মোহন বলিয়া জানিবে। 


এ শ্লোকটি শ্রীহরিভক্তিবিলাসে [#হরিভক্তিবিলাস, ৪র্থ বিলাস, শ্লোক ১৯০(চৈতন্য গৌড়ীয় মঠ), শ্লোক-৭৭(মহেশ প্রকাশনি,কলকাতা)] শ্রীল #গোপালভট্ট প্রভু উদ্ধৃতি করেছেন। শ্রীল #সনাতন_গোস্বামীপাদ উক্ত শ্লোকের টীকায় বলেছেন-


টীকা--- 

এবমোর্দ্ধপুণ্ড্রধারণস্য বিহিতত্বাৎ অগ্রে চ বক্ষো বাহুমূলাদৌ খঙ্খচক্রাদি মূদ্রাধারণস্য বিহিতত্বাদবৈষ্ণব স্মার্ত্তসম্মতম্। অশ্বত্থপত্রাকারাদিকং বক্ষঃস্থলাদৌ ন বিধেয়মিতি লিখ্যতে অশ্বত্থেতি। মোহনং অসুরানুসারি শুক্রাদি মায়াবিহিতমিত্যর্থঃ।


অনুবাদ-- 

এইপ্রকারে ঊর্দ্ধপুণ্ডধারণের বিহিত বলিয়া অগ্রে বক্ষঃস্থল বাহুমূলাদিতে শঙ্খচক্রাদি মূদ্রাধারণ বিহিত হইলেও অশ্বত্থপত্র, বংশপত্রাকৃতি ও পদ্মকলিকাকৃতি ত্রিবিধি তিলক অবৈষ্ণবস্মাৰ্ত্তসম্মত। কারণ অশ্বত্থ পত্র, বেণুপত্র তথা পদ্মকলিকাকৃতি তিলক বক্ষঃস্থল প্রভৃতি অঙ্গে ধারণ বিহিত নহে ইহাই লিখিত হইতেছে। কারণ ইহা মোহন অর্থাৎ অসুর অনুসারি শুক্রাদি মায়া বিহিত।


সুতরাং পূর্ব্বোক্ত ত্রিবিধ তিলক শুক্রমায়া বিহিত বিবেচনা করে বৈষ্ণবের তাহা ধারণ যোগ্য নয়। বক্ষঃস্থল বাহুমূলে যদি তারা অধার্য্য হয় তাহা হলে দ্বাদশ তিলক সম্পূর্ণ হয় না। সুতরাং এই জাতীয় তিলক রচনা অবৈষ্ণবীয় বিধায় অকর্তব্য। বিশেষতঃ এরা আসুরিক শুক্রমায়া বিহিত অর্থাৎ পুরাকালে দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য্য মোহনের জন্য এই আসুরিক তিলক বিধান করিয়াছিলেন।


বর্তমানে গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণে শাখা প্রশাখা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রকার তিলক সেবা দেখিতে পাওয়া যায়।


নবদ্বীপের 'ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দির' এ মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সেবিত 'ধামেশ্বর মহাপ্রভু'র বিগ্রহ আছে। 

১) ধামেশ্বর_মহাপ্রভুর সে সেবিত বিগ্রহ

তুলসীপত্রাকৃতির তিলক ধারণ করেন। মহাপ্রভুর আদর্শ অঙ্গীকার করেই শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের স্থাপিত ৬৪ গৌড়ীয় মঠ ও মিশন ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ, ইস্কন তুলসীপত্র তিলক করে।


২) শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুরও তুলসীপত্রতিলক ধারণ করেন। 


৩)কৃ্ষ্ণদাস  কবিরাজ পরিবারেও তুলসীপত্র তিলক ধারণ দেখা যায়।


৪) গোস্বামীপাদের সেবিত বিগ্রহ 'রাধা-মদনমোহন' এর সেবায়েত মাধব দাস বাবাজী ও তার অনুসারীগণ তুলসী পত্র তিলক ধারণ করেন। 


এভাবে অসংখ্য গৌড়ীয় শাখা উপশাখা বিশুদ্ধ তুলসী পত্রের তিলক ধারণ করেন।


নরোত্তম দাস ঠাকুর ছিলেন অদ্বৈত ধারার, তিনি তুলসীপত্র তিলক ধারণ করতেন, কিন্তু বর্তমানের অদ্বৈত পরিবার তুলসীপত্রাকৃতি তিলক ধারণ না করে বটপত্রাকৃতি তিলক ধারণ করেন। অনুমিত হয়, অদ্বৈত পরিবারে বর্তমানে যে বটুপত্রাকৃতি তিলক, তা পরবর্তীকালে সংযোজিত।  গুরু মাধবেন্দ্র পুরী ও শিষ্য অদ্বৈত প্রভুর তিলকেও সামান্য পার্থক্য আছে।


আচার্য্য প্রভুর পরিবারে তিলপুষ্পাকৃতি, গৌরীদাস পণ্ডিতের পরিবারে রসকলিকাকৃতি ইত্যাদি নানা বৈষ্ণবদলে নানা প্রকার তিলক প্রচলিত আছে। এই সঞ্চল তিলক নাসিকাপৃষ্ঠে করা হয়ে থাকে । এছাড়াও ঐ সকল বৈষ্ণব পরিবারের ললাটদেশেও নানা- রূপ ঊর্দ্ধপুন্ড্র দেখা যায় ।


★সংশয়:

যদি প্রশ্ন উঠে নিত্যানন্দ পরিবার তো বংশীপত্র তিলক ধারণ করে, এটার কি হবে? 


এর উত্তরে বলতে হয়-

১) বর্তমানে নিত্যানন্দ পরিবার যে বংশীপত্র ধারণ করেন, তা নিত্যানন্দ প্রভু অনুমোদন করেছেন এমনটি কোথাও পাওয়া যায় না, এমনকি নিত্যানন্দ প্রভু নিজেও ওরূপ তিলক ধারণ করতেন বলে কোন গ্রন্থাদিতে বর্ণনা নেই। তিনি যদি ওরূপ বংশীপত্রাকৃতি তিলক ধারণ সত্যি সত্যিই করতেন, তবে গোপালভট্ট প্রভু স্মৃতিরাজ 'হরিভক্তিবিলাস' এ তার বৈধতা সম্পর্কে বলতেন কিংবা সনাতন গোস্বামীপাদ টীকায় ওই তিলকের বিরোধীতা করতেন না। 


২) মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া সেবিত ধামেশ্বর মহাপ্রভু তুলসীপত্রাকৃতি তিলক ধারণ করেন। মাধবেন্দ্রপুরীর শিষ্য নিত্যানন্দ ও ঈশ্বরপুরী। ঈশ্বরপুরীর শিষ্য মহাপ্রভু। তাহলে নিত্যানন্দ প্রভু ও চৈতন্য মহাপ্রভুর তিলক একই হওয়ার কথা। 


 অতএব, পদ্মপুরাণে বৈষ্ণব মহাজন ভগবান শিব ও গৌড়ীয় আচার্য্যগণের সিদ্ধান্ত হতে এটি অনুমিত যে, নিত্যানন্দ পরিবার বর্তমানে যে আসুরিক ও শুক্রমায়া বিহিত বংশীপত্রাকৃতি তিলক ধারণ করেন, তা পরবর্তীকালে সংযোজিত। উপরন্তু তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারাও এর সদুত্তর দিতে পারেন না। এছাড়াও অনেক বাবাজী নামধারীগণ অশ্বত্থপত্র, পদ্মকলিকাকৃতি ধারণ করেন এবং শিষ্যদেরও ধারণ করতে বলেন, কিন্তু শাস্ত্র তা অনুমোদন করে না।


৩) যদি বলো ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের গুরু বিপীনবিহারী মহাশয় অন্যরূপ তিলক ধারণ করতেন, তাদের জেনে রাখা প্রয়োজন নিত্য ভগবৎপার্ষদ ভক্তিবিনোদ মহাশয় বিপীনবিহারীর অশাস্ত্রীয় কোন কার্যকেই সমর্থন করেন নি এবং তিনি তার সঙ্গও ত্যাগ করেছিলেন। ভক্তিবিনোদ ঠাকুর, তার দুই পুত্র বিমলাপ্রসাদ ও ললিতপ্রসাদ ঠাকুর সকলেই তুলসীপত্রের তিলকই করতেন।


অতএব, গৌরের অনুগামী বৈষ্ণবগণের উচিত, পদ্মপুরাণোক্ত তিন প্রকার তিলক অর্থাৎ অশ্বত্থ পত্র, বেণুপত্র তথা পদ্মকলিকাকৃতি তিলক বর্জন করে সনাতন গোস্বামী ও গোপালভট্ট প্রভুর পদাঙ্ক অনুসরণ করা, ধামেশ্বর মহাপ্রভুর চরণাশ্রয়ে শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তির প্রয়াশ করা এবং বৈষ্ণব নিন্দা তথা বৈষ্ণব অপরাধ হতে নিজেকে ও অপরকে রক্ষা করা।


এক্ষণে বিশেষ বিবেচনা করুন-


*কেন_তুলসীপত্রাকৃতি_তিলক?


হরিপদাকৃতি অর্থ 'U' আকৃতি। ঊর্ধ্বপুন্ড্রককে হরিপদের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যা হরিভক্তগণ দ্বাদশ অঙ্গে ধারণ করেন। শ্রীহরির পাদপদ্মে কোন পত্র শোভা পায়? হরিপদে অশ্বত্থপত্র, বংশীপত্র, বাঁশপত্র ইত্যাদি দিতে দেখেছেন কখনো নাকি কোন শাস্ত্রে হরিপদে ওসব পত্র নিবেদনের মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে? হরিপদে যে তুলসীপত্রই নিবেদনযোগ্য তা সকলেরই জ্ঞাত এবং শ্রীহরির পাদপদ্মে তুলসীপত্র নিবেদনের মাহাত্ম্য পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, গরুড়পুরাণাদি মুহুর্মুহু বর্ণনা আছে, হরিভক্তিবিলাস তার প্রমাণ। 


তাছাড়া গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ তুলসীর আনুগত্যে সেবা করেন তাই তুলসী নিবেদন সমুচিত। ঠিক যেমন অন্য সম্প্রদায়ীগণ তিলকের ভেতর কুঙ্কুম বা ফোঁটা অঙ্কন করে শ্রীদেবী বা শ্রীমতির আনুগত্য স্বীকার করে৷ তাই হরিপদাকৃতির ঊর্দ্ধপুন্ড্রকের তলে যদি কোন পত্র অঙ্কিত করতেই হয়, তবে তুলসীপত্র অঙ্কনই সর্বোত্তম। কিন্তু বংশীপত্রাদিতে স্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা ধারণ উচিত নহে, তা আসুরিক। নবদ্বীপে মাতা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী সেবিত 'ধামেশ্বর মহাপ্রভু' আজও তুলসীপত্রাকৃতি তিলক ধারণ করছেন। 


অতএব, যারা হরিপদে অশ্বত্থপত্র ও বেণুপত্র প্রদান করেন, এ সমস্ত বিধি স্বয়ং বৈষ্ণবাচার্য্য শিবজী, নারায়ণাবতার বেদব্যাসজী ও ষড় গোস্বামী আচার্য্যগণই অশাস্ত্রীয় বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হরিপদে তুলসীপত্রেরই মাহাত্ম্য সর্বশাস্ত্র পরিলক্ষিত।


🙏হরে কৃষ্ণ🙏

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.