সনাতন গোস্বামী এবং রুপ গোস্বামী মহাপ্রভুর আদেশে দক্ষিণ ভারতের কিছু সাধক দের নিয়ে তখন বৃন্দাবনে পুন প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন পুরাতন যে সমস্ত শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ পাওয়া গেল সেখানে রাধা কোন বিগ্রহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
![]() |
রুপ ও সনাতন গোস্বামী |
আমার নিতাই এর নির্দেশে মহাপ্রভু কৃষ্ণের সাথে রাধাকে প্রতিষ্ঠিত করলেন । কৃষ্ণের আহ্লাদিনী শক্তি এর আগে শুধু প্রকৃত বৈষ্ণব দের মধ্যেই এই শক্তির বিষয় জ্ঞান ছিল। রাধার অষ্টরসাত্ত্বিক ভাব আছে।
আটটা ভাগের মধ্যে একটা ভাব যদি কোন ভক্তের বা সাধকের মধ্যে প্রকাশ পায় তাহলে তার জীবন ধন্য হয়ে যায় কৃষ্ণ প্রেমে।
সাধক নিজের মনের ভেতর বুঝতে পারছে যে, কৃষ্ণকে না পেয়ে আমার অস্তিত্ব নিরর্থক হয়ে যাচ্ছে, কৃষ্ণকে না পেলে আমি আর এক তিলও বাঁচতে পারব না, এই মানসিকতাটার নাম হলো রাধামানসিকতা।
অর্থাৎ আরাধনা ছাড়া সে আর কিছুই জানেনা। এই রাধা মানসিকতার চরম বিকাশ পাচ্ছি ব্রজের কৃষ্ণে- আর কোথাও নয়।
মানুষের মন যখন পরমপুরুষকে পাবার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়, যখন সে সব কাজে পরমপুরুষকে দেখবার চেষ্টা করছে ও শেষ পর্যন্ত দেখছে, এই যে পাবার আকুতি, এটাকে সংস্কৃতে বলে “আরাধনা”(আ+রাধ্+অনট্+আ = আরাধনা)
∥আর যে আরাধনা করে সেই হলো রাধা। রাধা হচ্ছে ভক্তের মন।∥
এই যে রাধাভাব, এটা হচ্ছে মধুর ভাব। কারণ, জীবনের যা কিছু মধুর অভিব্যক্তি, যা কিছু মাধুর্য্যময় কর্মচর্চা ও কর্ম অনবয়, সেগুলো কৃষ্ণের মধ্যে পাই এই মধুর রাধাভাবের মাধ্যমে।
মধুর ভাবটা কী?
আমি আমার সর্ব সত্তা- শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক; আমার সর্বসত্তাকে কেন্দ্রীভূত করে তাকে এক বিন্দুতে পর্যবসিত করে আমার সকল আনন্দ ঐ কৃষ্ণের ভিতর দিয়ে পাব- এই যে মধুর ভাব, এই হলো রাধা ভাব।
অর্থাৎ কৃষ্ণরূপী মহাবিশ্বের প্রাণকেন্দ্র বা মধ্যমনির মধ্যে আমার অর্থাৎ সকল সাধক বা সাধিকার মন যখন এক বিন্দুতে পর্যবসিত হয়ে আনন্দ লাভ করবে, সাধক সাধিকাদের সেই অবস্থার আনন্দময় সুমধুর ভাবটাই হলো রাধাভাব।
বিশ্বের সকল মানুষ, জাতি, বর্ণ, ধর্ম, দেশ, ভাষা নির্বিশেষে, সকলেই এক একজন সম্ভাবনাময় রাধা। ব্যাপকার্থে সকল নারী সকল পুরুষই রাধা, যদি তার মন, তার সর্বসত্তা উপরোক্ত মানস অবস্থাপ্রাপ্ত হয়।
তাই সকল দেশ সকল ধর্মমত বা তথাকথিত সম্প্রদায়ের নর-নারীকে সেই মধুর রাধাভাবকে অর্জনের জন্যে পরমপুরুষকে স্মরণ-মনন নিধি ধ্যানাসনের মধ্যে দিয়েই এগোতে হবে। তবেই মানস আধ্যাত্মিক রাধাভাবকে অর্জনকরা যাবে।
স্মরণ-মনন নিধিধ্যানাসনের মধ্য দিয়ে পরমপুরুষের দিকে এগিয়ে যাওয়াটাকেই বলে মানস আধ্যাত্মিক সাধনা বিজ্ঞান।
এই মানস আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের পথে অর্জিত ‘রাগাত্মিকা ভক্তি’র দ্বারা বিন্দুতে পর্যবসিত মনের যে মধুর ভাবাবস্থাই হলো মানস আধ্যাত্মিক রাধা ভাব।
🙏জয় গুরুদেবের জয় 🙏