আদম হাওয়ার আসল সত্য*
* “আমরা উদ্যানের বৃক্ষসকলের ফল ভক্ষণ করতে পারি বটে, কিন্তু উদ্যানের মধ্যস্থলে স্থিত
বৃক্ষটির ফল সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেছেন, তুমি অবশ্যই এ ফল ভক্ষণ করবে না, এমন কি স্পর্শও
করবে না; তাহলে তােমার মৃত্যু ঘটবে।” – জেনেসিস ৩ ৪ ২-৩ (বাইবেল)।
“যে স্ত্রীলােককে আমার সঙ্গিনী হবার জন্যে দিয়েছিলেন, সে-ই বৃক্ষ থেকে আমায় ফল দেয়
এবং আমি তা ভক্ষণ করি। স্ত্রীলােকটি বলে, সর্পটি আমায় প্রলুব্ধ করে, তাইতেই আমি ফলটি
ভক্ষণ করেছিলাম।” -- জেনেসিস ৩ ঃ ১২-১৩ (বাইবেল)।
“সুতরাং ঈশ্বর মানবকে নিজ প্রতিরূপে সৃষ্টি করলেন এবং তাহাদিগকে পুরুষ ও নারীরূপে সৃষ্টি
করলেন। ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করলেন এবং তাদেরকে বললেন, ফলবান হও এবং বংশবৃদ্ধি
কর, পৃথিবী সম্পদে পূর্ণ কর এবং তাকে শাসন কর।” – জেনেসিস ১ ৪ ২৭-২৮ (বাইবেল)।
জেনেসিস ২ : ৭
* “এবং প্রভু ঈশ্বর ভূমির মৃত্তিকা হতে মনুষ্যজাতির সৃষ্টি করলেন এবং তার নাসিকায় প্রাণ বায়ু
প্রবিষ্ট করালেন। তখন মানব একটি সজীব আত্মায় পরিণত হল।”
(বাইবেল)।
“এক্ষণে সর্প (যৌনশক্তি) হল ভূমির যে কোন জন্তু (শরীরের যে কোন ইন্দ্রিয়বােধ) অপেক্ষা
অধিকতর চতুর ও ধূর্ত।” – জেনেসিস ৩ ঃ ১ (বাইবেল)।
* “এবং প্রভু ঈশ্বর ইডেনের (স্বর্গোদ্যানের) পূর্বদিকে একটি উদ্যান রচনা করলেন; এবং তথায়।
জেনেসিস ২ ঃ ৮ (বাইবেল)।
তাঁর সৃষ্ট মানবকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।”
“অতএব প্রভু ঈশ্বর তাকে পাঠালেন সেই ভূমিকৰ্ষণ করতে যেখান হতে সে সৃষ্ট
হয়েছিল।” – জেনেসিস ৩ : ২৩ (বাইবেল)
“ঈশ্বসৃষ্ট প্রথম দিব্যমানবের জ্ঞান তার কপালের (পূর্বদেশ) সর্বদর্শী একটি মাত্র চক্ষুতেই
কেন্দ্রীভূত থাকত। ঐ বিন্দুতে নিবদ্ধ নিখিলসৃজনক্ষমতাবিশিষ্ট তার ইচ্ছাশক্তি, মানুষ যখন তার
জড়প্রকৃতির “ভূমিকৰ্ষণ” করবার চেষ্টা শুরু করলে, তখনই তা লােপ পায়।
হিন্দুদের “আদম ও ইভ” গল্পটি সুপ্রাচীন ‘শ্রীমদ ভাগবতে উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম নর ও
নারী (জড়দেহধারীরূপে) স্বয়ম্ভুব (সৃষ্টিকর্তা হতে জাত) মনু আর তার স্ত্রী শতরূপা বলে কথিত
হয়েছে।
তাদের পাঁচটি সন্তানসন্ততি প্রজাপতিগণের (পূর্ণ জীব, যাঁরা জড়াকৃতি ধারণ করতে
সক্ষম) সঙ্গে বিবাহের আদান-প্রদান প্রচলন করেছিলেন; সেই প্রথম ঈশ্বরীয় পরিবার হতেই
মানবজাতির উৎপত্তি।
কি পূর্ব, কি পশ্চিম কোথাও আমি শ্ৰীযুক্তেশ্বর গিরিজীর মত এমন গভীর আধ্যাত্মিক
অন্তর্দৃষ্টিবলে খ্রিস্টিয়শাস্ত্র ব্যাখ্যা করতে কখনও শুনিনি। গুরুদেব বলতেন, “তত্ত্ববিদ পণ্ডিতগণ,
আমিই একমাত্র পথ, সত্য ও জীবন; আমা ভিন্ন কেউই পিতার নিকট আগমন করতে পারে না,
–জন ১৪ ও ৬ (বাইবেল), খ্রিস্টের এই সব পঙক্তিগুলির ভুল ব্যাখ্যা করে গেছেন। যীশুখ্রিস্ট
কখনও একথা বলেননি যে, তিনিই ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র; তিনি এই কথা বলেছিলেন যে, কোন >
মানবই সেই নিগুণ পরমব্রহ্ম, সেই ইন্দ্রিয়াতীত ঈশ্বর, যিনি স্বয়ম্ভ, সৃষ্টির অতীত, সেই পিতার
| ভাব প্রাপ্ত হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে প্রথমে সেই ‘পুত্রভাব' অর্থাৎ সৃষ্টির মধ্যে সক্রিয়।
| বিশ্বচৈতন্যের ভাবপ্রদর্শন করতে পারে। যীশু কুটস্থচৈতন্যের সঙ্গে একীভূত হয়ে গিয়েছিলেন,
কারণ তার জীবাত্মবােধ একেবারেই লুপ্ত হয়েছিল।”
যখন পল লিখলেন, “ঈশ্বর ... যীশুখ্রিস্ট দ্বারা সকল বস্তু সৃষ্টি করলেন,
- এফিসিয়ান্স ৩ ঃ ৯ (বাইবেল), এবং যখন যীশু বললেন, “এব্রাহামের পূর্ব থেকেই আমি।
আছি”,
কিছুটা ধর্মীয় ভীতির কারণে অনেক মানুষই স্বচ্ছন্দে এই বিশ্বাস করে থাকে যে, ঈশ্বরপুত্র।
- জন ৮ঃ ৫৮ (বাইবেল), তখন কথাগুলির সার অর্থ বােঝায় সম্পূর্ণ নৈর্ব্যক্তিকতা।
বলতে কেবলমাত্র একজন মানুষকেই বােঝায়। তারা যুক্তি দেখায় ঃ “খ্রিস্ট এক অসাধারণ সৃষ্টি
তাহলে আমার মত নশ্বর মানব কিভাবে তার অনুকরণ করতে পারে ?” কিন্তু আসলে সমস্ত
মানুষই ঐশীসৃষ্ট; তাই তাদের একদিন না একদিন খ্রিস্টের এই আদেশ অবশ্যই পালন করতে
হবে ঃ “পরমেশ্বর যেরূপ নিষ্কলঙ্ক, তুমিও সেরূপ নিষ্কলঙ্ক হও।” (ম্যাথু ৫ ৪৮ বাইবেল), “ঐ
দেখ, পিতা আমাদের কতটা ভালবাসেন যে আমরা নিজেদের ঈশ্বরপুত্ররূপে পরিচয় দিতে
পারি।” (জন ৩ঃ১ বাইবেল)
কর্মবিধি ও তার অনুসিদ্ধান্ত উপলব্ধি করতে পারলে দেখা যাবে যে, পুনর্জন্মের বিষয়
বাইবেলের অসংখ্য পঙক্তিতে উল্লেখ করা আছে যথা, “যে কেহ মানুষের রক্তপাত করবে,
মানুষের দ্বারাই তার রক্তপাত হবে।” – জেনেসিস ৯ ও ৬ (বাইবেল)। প্রত্যেক নরহন্তা যদি
‘মানুষ দ্বারাই’ হত হয়, তা হলে প্রতিক্রিয়ার নিয়মে স্পষ্টতঃ বহুক্ষেত্রে একাধিক জীবনের
প্রয়ােজন হয়। সমসাময়িক কোন শাস্তিবিধান সদ্য সদ্য হয়ত পাওয়া যায় না বলেই।
আদি খ্রিস্টীয় ধর্মসম্প্রদায়, জ্ঞেয়বাদী এবং সুবিখ্যাত অরিজেন, অ্যালেকজান্ড্রিয়ার
ক্লিমেন্ট (উভয়ই ৩য় শতকের) এবং সেন্ট জেরােম (৫ম শতাব্দী) সমেত বহু খ্রিস্টীয়
ধর্মযাজকগণ কর্তৃক ব্যাখ্যাত পুনর্জন্মবাদ তত্ত্ব গ্রহণ করেছিল। ৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে
কনস্ট্যান্টিনােপলের দ্বিতীয় কাউন্সিল কর্তৃক এই মতবাদ প্রচলিত ধর্মমতের বিরুদ্ধচারী বলে
ঘােষিত হয়। সেই সময় বহু খ্রিস্টানই ভেবেছিলেন যে, পুনর্জন্মবাদ মানুষকে সদ্যমুক্তি লাভের
প্রচেষ্টায় উৎসাহিত করতে দেশ আর কালের একটা অতি বড় সুযােগ দান করেছিল। কিন্তু সত্য
চাপা দেওয়ার কুফলে হয় একগাদা ভূলের সৃষ্টি। লক্ষ লক্ষ লােক তাদের একটি জীবন কাল”
ঈশ্বরানুসন্ধানে ব্যয় করেনি, – ব্যয় করেছে দুর্লভরূপে প্রাপ্ত এই সংসারকে ভােগ করবার জন্য,
যা শীঘ্রই চিরতরে হারিয়ে যাবে। সত্য হচ্ছে এই যে, মানুষ ততক্ষণ পৃথিবীতে পুনর্জন্মগ্রহণ
করে, যতক্ষণ না সে সজ্ঞানে ঈশ্বরের পুত্ররূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হতে পারছে।
Power by: YogiKathaOfficial