Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

ঠাকুর শ্রীনিবাস | all monk biography in Bengali,

                                            ঠাকুর শ্রীনিবাস 



১৪৪১ সালে চাখণ্ডি গ্রামে বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম হয়েছিল এক রূপবান শিশুর । পিতা গঙ্গাধর ভট্টাচার্য আর জননী লক্ষ্মীপ্রিয়াদেবী । গঙ্গাধর পরম বৈষ্ণব । শ্রীগৌরের দর্শনের জন্য মাঝে মধ্যে উন্মত্ত হয়ে যেতেন । শ্রীগৌরসুন্দরের সন্ন্যাস গ্রহণের খবর শুনে কেশব ভারতী আশ্রমে ছুটে এসেছিলেন । সেখানে চৈতন্যভাবে চৈতন্যপদতলে মুছিত হয়ে যান । মন্ত্রোচ্চারণের মতাে তার মুখ থেকে শুধুই চৈতন্য নাম নির্গত হতে থাকে । তখন থেকেই গঙ্গাধর চৈতন্যদাস নামে পরিচিত হলেন । তিনি নবজাতক পুত্রের নামকরণ করেছিলেন শ্রীনিবাস । চঞ্চল শিশুর মন , কিন্তু ‘ গৌর নাম শুনলেই বড়াে হয়ে ওঠে , শুরু হল শিক্ষা । পরম পণ্ডিত ধনঞ্জয় বাচস্পতি হলেন তার প্রথম শিক্ষক । বিদ্যাদেবী বােধহয় স্বয়ং তাঁকে আশীর্বাদ করেছিলেন । অসাধারণ মেধা ছিল শ্রীনিবাসের । কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাকরণ , কোষ , অলঙ্কার , কাব্য এবং দর্শনশাস্ত্রে অদ্বিতীয় পণ্ডিত হয়ে উঠলেন । উপনয়নের সময় মস্তক মুণ্ডন করলেন । ব্রহ্মচারী বেশে যখন এসে দাঁড়ালেন , তখন তার নয়ন মনােহর রূপ দেখে মা - বাবা অবাক । হয়ে গিয়েছিলেন । একমাত্র চৈতন্য মহাপ্রভুর এমন রূপ ছিল । যৌবনে পদার্পণ করার পর তার মনে গৌরচিন্তা আরও প্রবল হয়ে ওঠে । পথে দেখা হল নরহরি সরকার ঠাকুরের সঙ্গে । তিনি চিরকুমার ব্রহ্মচারী এবং ভক্তিরসজ্ঞ । মহাপ্রভুর সেবায় মগ্ন থাকতেন । শ্রীনিবাসের মধ্যে তিনি গৌরসুন্দরকে খুঁজে পেয়েছিলেন । এই মিলনের পর শ্রীনিবাসের জীবনের গতি একেবারে পরিবর্তিত হয় । এমন সময় হঠাৎ পিতৃদেব ইহধাম পরিত্যাগ করেন । অল্প বয়সে পিতাকে হারিয়ে অসহায় হয়েছিলেন শ্রীনিবাস । তখনও দাদামশাই বলরাম আচার্য জীবিত । মাকে নিয়ে মামার বাড়িতে উঠলেন । ১৯৫৪ সালে ফান মাস । প্রেমােম্মাদ অবস্থা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । পরের বছর মাঘ মাসে গৌর দর্শনের পিপাসায় ছুটলেন নীলাচলের পথে । হঠাৎ পথিমধ্যেই হঠাৎ এল গৌরসুন্দরের দেহ ত্যাগের সংবাদ । তিনি আর ধৈর্য ধারণ করতে পারলেন না । পথের ধুলার ওপরেই বসে পড়লেন । শােকের সাগরে নিমজ্জিত । চৈতন্যদেবকে আর দেখতে পাবেন । ? হঠাৎ এক অলৌকিক দৃশ্য দেখতে পেলেন । তিনি দেখলেন মহাপ্রভু সপরিবারে বসে আছেন । গদাধর পণ্ডিত শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করছেন । এই জ্যোতির্ময় মহাপুরুষকে দেখে তিনি শান্ত হলেন । আবার শুরু হল । পদযাত্রা । শ্রীক্ষেত্রে এসে উপস্থিত হলেন । জগন্নাথকে দর্শন করে এলেন । ডােমেশ্বর কোটায় । গদাধর পণ্ডিতকে প্রণাম করলেন । কিছুদিন সেখানে থাকার পর শ্রীধাম বৃন্দাবনের পথে যাত্রা করলেন । পৌছােলেন বৃন্দাবনে । শ্রীগােবিন্দজীর মন্দিরে শ্রী শ্রীজীব গােস্বামীজীর সঙ্গে দেখা হল । তখন শ্রীজীব গােস্বামী ছিলেন ভারতের অদ্বিতীয় পণ্ডিত । শ্রীনিবাস তার কাছে শ্রীমদ্ভাগবত্ এবং অন্যান্য ভক্তিশাস্ত্র অধ্যয়ন করতে শুরু করলেন । অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সমস্ত ভক্তিশাস্ত্র আয়ত্ত করেন । তার পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে শ্রীজীব গােস্বামী তাকে আচার্য ঠাকুর উপাধি দান করেছিলেন । এক শুভদিনে আচার্য ঠাকুর ছয় গােস্বামীর অন্যতম গােপালভট্টকে প্রণাম করলেন । শ্রীনিবাস তাকেই গুরু হিসাবে বরণ করলেন । শ্রীরাধার মন্দিরে বিগ্রহের সামনে গােপালভট্ট নিবাসকে দীক্ষা দিলেন । এক শুভক্ষণে শ্রীনিবাসের সঙ্গে নরােত্তমঠাকুর এবং শ্যামানন্দ গগাস্বামীর মিলন হল । শ্রীজীব এবং ব্রজের পণ্ডিতমণ্ডলীর আদেশে তারা গৌড়দেশ অভিমুখে যাত্রা করলেন । সুদীর্ঘ ছাব্বিশ বছর গৌরমণ্ডলে অবস্থান করে শ্রীনিবাস আচার্য চৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তিত প্রেমধর্ম প্রচার করেন । প্রেমধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা সকলের সামনে উপস্থাপিত করেন । তারপর বঙ্গভূমির লীলা সাঙ্গ করে ফিরে চললেন শ্রীধাম বৃন্দাবনে । শ্রীকৃষ্ণের হাতছানি তাকে ব্যাকুল করে তুলল । তখন তার বয়স চুয়ান্ন বছর , জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বৃন্দাবন ধামে অতিবাহিত করেছিলেন । শ্রীনিবাসের তিন পুত্র এবং তিন কন্যা - বৃন্দাবনচন্দ্র , রাধাকৃষ্ণ , গীতগােবিন্দ , হেমলতা , বিষ্ণুপ্রিয়া ও কাঞ্চনলতা । জ্যেষ্ঠকন্যা হেমলতা জনমানসে অর্ধকালী হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন । ১৫২৫ সালে কার্তিক মাসে শুক্লা অষ্টমী দিবসে চুরাশি বছর বয়সে শ্রীনিবাসের মৃত্যু হয় ।


Power by © YogiKathaOfficial

www.yogsiddhi.in

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.