মাতা দুর্গার পরিবারের বাহনের তাৎপর্য
#দুর্গার_বাহন_সিংহ– সিংহ হলো দুর্গার তেজ, ক্রোধ ও হিংস্রতার প্রতীক (পদ্মপুরাণ মতে দুর্গার ক্রোধ থেকে সিংহের জন্ম) যেকোনো যুদ্ধে জয়ী হতে গেলে সিংহের মতো শক্তি, রাগ, ক্ষিপ্রতা ও হিংস্রতার দরকার। সিংহকে সাথে রেখে দুর্গা পূজারীকে সেই মেসেজই দিচ্ছেন।
🌺#গণেশের_বাহন_ইঁদুর– গণেশকে বলা হয় সিদ্ধিদাতা (সিদ্ধি অর্থ সফলতা) হিসেবে এবং গণেশের বাহন ইঁদুর। গণেশের বাহন ইঁদুর, মানুষকে এই বার্তা দেয় যে সফলতার পথে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং সাফল্য পেতে চাইলে সেই ষড়যন্ত্রের জালকে ছিন্ন করে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, ঠিক ইঁদুরেরই মতো। কারণ, জাল দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব প্রাণীকে আটকানো গেলেও ইঁদুরকে কেউ আটকাতে পারে না। এজন্যই গণেশের সাথে ইঁদুর থাকে।
🌺#মহাদেবের_বাহন_নন্দী_ষাঁড়– মহাদেবের দুটি রূপ– রুদ্র রূপ এবং শান্ত রূপ। মহাদেব রুদ্ররূপে সংহারকর্তা। যে সংহার করবে, সে হবে বিশেষ শক্তিসম্পন্ন। একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ষাঁড় গোরুর দেহে যে পরিমাণ শক্তি থাকে, তাতে কিছু ক্ষণের মধ্যে সে সব লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। এখানে ষাড় শক্তির প্রতীকী রূপ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
🌺#কার্তীকের_বাহন_ময়ূর– কার্তীকের সাথে থাকে একটি ময়ূর এবং ময়ূরের পায়ের কাছে থাকে একটি সাপ। কার্তীক হলো যুবক, যোদ্ধা ও সৌন্দর্যের প্রতীক। ময়ূর, কার্তিকের এই তিনটি গুণেরই প্রতিনিধিত্ব করে। কেননা, কার্তীক চিরযুবা, তেমনি আমৃত্যু ময়ূরের সৌন্দর্য ও তারুণ্য নষ্ট হয় না। এছাড়াও ময়ূর সকল পাখির মধ্যে ভয়ংকর যোদ্ধা, যেমন ভয়ংকর যোদ্ধা কার্তীক।
সাপ হলো ষড়যন্ত্রের প্রতীক এবং যে কোনো যুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র থাকবেই। ময়ূরের পায়ের নীচে সাপের অর্থ হলো, শুধু যুদ্ধ করলেই হবে না, যুদ্ধের এই গোপন ষড়যন্ত্রকেও দমন করতে হবে, ঠিক যেমন ভাবে ময়ূর নিমেষের মধ্যে একটি সাপের দেহকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলতে পারে।
🌺#সরস্বতীর_বাহন_হাঁস– দেবী সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস। যার এই ক্ষমতা আছে যে, দুধ ও জল মিশিয়ে দিলেও সে শুধু দুধকেই পান করতে পারে বা গ্রহণ করতে পারে। বিদ্যার দেবী সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস সমাজে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই বার্তা দেয় যে, সমাজে ভালো-মন্দ সব ধরণের জ্ঞানই আছে, এর মধ্যে থেকে শুধু ভালো জিনিসটাকেই গ্রহণ করতে হবে।
🌺#লক্ষ্মীর_বাহন_পেঁচা– পেঁচা রাতের ঘোর অন্ধকারেও দেখতে পায়। ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা শিক্ষা দেয় যে, যদি ধনসম্পদ থাকে তাহলে বিপদ যত বড় হোক না কেন, রাতের আঁধার ভেদ করে পেঁচা যেমন তার পথ দেখতে পায়, তেমনি ধন-সম্পদের জোরে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিও ঠিক পথ খুঁজে পাবে এবং তা থেকে উদ্ধার পাবে।
পেঁচার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো গোপনীয়তা। গোপন থাকার কারণেই পেঁচা দিনের বেলা বের হয় না, লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা মানুষকে এই শিক্ষা দেয় যে, অর্জিত ধনসম্পদকে রাখতে হবে গোপনে। নইলে সেই সম্পদ নানা রকম সমস্যা বা বিপত্তির সৃষ্টি করবে।
তাছাড়া এর পেছনে পণ্ডিতদের অন্য মতও রয়েছে। যেমন- যিনি লক্ষ্মীর গুণ অর্থাৎ সত্য, প্রেম, পবিত্রতা, তপস্যা, ক্ষমা, সেবাভাব, তিতিক্ষা পেতে চান, তাঁকে পেচক-ধর্ম পালন করতে হবে। অর্থাৎ জাগতিক বস্তু থেকে একটু দুরে থেকে নির্জনে যোগৈশ্বর্য ও সাধন-ভজনরূপ সম্পদ রক্ষা করতে হবে।
জয় মা দুর্গা 🙏🙏❤️🌺🌺🌺