Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

গৌরীবাঈ রহস্যময় সাধনার জীবন | Sadhika GouriBai biography in Bengali | All Indian sadhu biography in Bengali

গৌরীবাঈ রহস্যময় সাধনার জীবন

 গৌরীবাঈ 

আমাদের দুর্ভাগ্য যে , আমাদের সাধ্বী তাপসীদের জীবনচরিত লেখার প্রচলন ছিল না । তাই অনেক মহাত্মা ব্যক্তির জীবন রহস্যে আবৃত । তবে আমাদের সৌভাগ্য যে , গুজরাটের কবি এবং সন্ন্যাসিনী গৌরীবাঈ সম্পর্কে আমরা অনেক কথা জানতে পেরেছি । গত শতাব্দীতে তার প্রামাণ্য জীবনচরিত লেখার কাজ শুরু হয় । তখনও তার পরিবারের দুজন বংশধর জীবিত ছিলেন । তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে । গৌরীবাঈ ১৭৫৯ খ্রিস্টাব্দে গুজরাট এবং রাজপুতানার সীমান্ত অঞ্চলের গিরিপুর নামে একটি আধা শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন । গিরিপুরের আর এক নাম হল ভুবনগড়পুর । যে সম্প্রদায়ে তিনি জন্মেছিলেন তাকে বারনগর নাগর গৃহস্থ সম্প্রদায় বলা হয় । এই সম্প্রদায় গুজরাটের সামাজিক ইতিহাসে অত্যন্ত উঁচু স্থান অধিকার করে আছে । এই সম্প্রদায়ের সকলেই শিক্ষায় আলােকপ্রাপ্ত । এমনকি যখন সারা ভারতবর্ষে মহিলাদের অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা হত তখনও এই সম্প্রদায়ের মেয়েরা শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়ে আসছেন । এই সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকজন ফার্সিতে দারুণ বুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন । হিন্দু এবং মুসলমান রাজত্বকালে এঁরা রাজ প্রশাসনে উচ্চপদে আসীন হয়েছিলেন । গৌরীবাঈয়ের মা - বাবা সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না । তবে জানা যায় যে , চম্পু নামে তার একজন বােন ছিল । এই বােন ফুল । শংকর নামে এক পুত্রের জননী । চাতুরি এবং যমুনা নামে দুই কন্যা ছিলতার । এই দুই কন্যার মধ্যে চাতুরি বিয়ের একবছর পরেই বিধবা হন । যমুনার বিয়ে হয় বেল শংকর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে । প্রভাশংকর ও রূপশংকর নামে তাদের দুই পুত্র এবং তুলজা নামে এক কন্যা ছিল । প্রভাশংকরের বিয়ে হয়েছিল মঝুকুম্ভের সঙ্গে । দ্বিজলাল এবং কৃষ্ণলাল । নামে তাদের দুই সন্তানের জন্ম হয় । তারা উনিশ শতকের শেষের দিকে কখনও গুজরাট , কখনও বারাণসীতে বসবাস করতেন । তারাই গৌরীবাঈয়ের জীবনকথাকে পরবর্তীকালে জীবনীকারদের হাতে তুলে দিয়েছেন । তখনকার প্রথা অনুসারে পাঁচ - ছ'বছর বয়সেই গৌরীবাঈ বাগদত্তা হন । বিয়ের চারবছর আগে চক্ষুরােগে আক্রান্ত হন । তাই চোখ বাধা অবস্থাতেই তার বিয়ে হয়েছিল । বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে স্বামী দেহত্যাগ করলেন । পরিবারের সকলে তখন শােকালাপ করছেন । অথচ গৌরীবাঈ উদাসীন চিত্তে এই মারাত্মক ঘটনাটিকে গ্রহণ করলেন । প্রশ্ন করা হলে তিনি নির্বিকার ভাবে উত্তর দিতেন— “ ঈশ্বরই আমার প্রভু , জন্ম থেকেই আমি তার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছি । ” ওই সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুসারে তখন তিনি পিতা - মাতার সঙ্গে বসবাস করছেন । ছােটোবেলা থেকে তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী মেয়ে ছিলেন । বালবিধবার পক্ষে যা ভালাে বলে বিবেচনা করা হত , সেইভাবে তিনি পূজার্চনা করে সময় কাটাতে লাগলেন এবং অবসরে ধর্মগ্রন্থ । পাঠ করতেন । ঈশ্বরের প্রতি তার শ্রদ্ধা , ভক্তি এবং ভালােবাসা আরও প্রখর হয়ে উঠল । ঈশ্বরের স্তব থেকে শ্লোক রচনা করতে শুরু করলেন । হিন্দু সমাজে উচ্চবর্ণের বিধবারা আর বিবাহের আসরে বসতে পারে । তারা পবিত্র জীবনযাপন করবেন । এটাই প্রার্থনা করা হয় । তেরাে বছর বয়সেই গৌরীবাঈ বুঝতে পেরেছিলেন যে , ধর্মকর্মে আত্মনিয়ােগ করাই হবে তার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ । তাই আরও বেশি করে ধর্মগ্রন্থ পাঠে সময় কাটাতে লাগলেন । ঈশ্বর সাধনায় আত্মনিমগ্না হলেন । তখন গিরিপুরের অধীশ্বর ছিলেন রাজা শিবসিংহ । তাকে আমরা এক ধর্মপ্রাণ এবং শিক্ষিত নৃপতি হিসেবে চিহ্নিত করেছি । তিনি অন্যায় রাজকর রহিত করে দিয়েছিলেন । তিনি যখন জানতে পারলেন যে , বণিকরা নানা ওজনের বাটখারা ব্যবহার করছে , তিনি তখন নির্দিষ্ট একটি আকারের । ওজন প্রবর্তন করেন । কূপ খনন করেছিলেন । সরাইখানা এবং মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । ওই কাজকর্মের জন্য রাজার নাম এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে । এই রাজার কানে গৌরীবাঈয়ের পবিত্র জীবনকথা পৌঁছে গেল । তিনি স্বয়ং গৌরীবাঈয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন । বিভিন্ন বিষয়ে গৌরীবাঈ - এর জ্ঞানের বিস্তার দেখে রাজা অবাক হয়ে গেলেন । তিনি গৌরীবাঈয়ের সম্মানে একটি সুন্দর মন্দির নির্মাণ করলেন । গৌরীবাঈ তার গৃহদেবতার বিগ্রহগুলি এই মন্দিরে নিয়ে এলেন । মহা সমারােহে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দের মাঘ মাসে শুক্লা ষষ্ঠীতে এই মন্দিরের দ্বার উঘাটিত হল । গৌরীবাঈ সাংসারিক জীবন ত্যাগ করে এই মন্দির প্রাঙ্গণে চলে । এলেন । এখন থেকে এখানেই তিনি বসবাস করবেন । শুরু হল ঈশ্বর আরাধনা । ভগ্নি কন্যা চাতুরীও এলেন তার সঙ্গে থাকতে । কিছুদিন বাদে এলেন অপর ভগ্নিকন্যা যমুনা এবং তার কয়েকজন বৃদ্ধা আত্মীয়া । মন্দিরটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হত । ধীরে ধীরে চারপাশে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়ল । তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এই মন্দির দর্শন করতে আসতেন । বিগ্রহের পাশাপাশি তারা জীবন্ত বিগ্রহ । গৌরীবাঈয়ের সান্নিধ্যে আসতেন । গৌরীবাঈ প্রায়শই ধর্ম আলােচনা সভার আয়ােজন করতেন । কাব্য রচনার দিকে তখন তার কৃতিত্ব ক্রমশই প্রকাশিত হচ্ছে । গৌরীবাঈ - এর লেখা এক একটি পদ মানুষ সশ্রদ্ধচিত্তে উচ্চারণ । করছেন । রাজা শিবসিংহজী ভিক্ষাজীবী ধার্মিক ব্যক্তিদের জন্য মন্দিরের আঙিনায় একটি দাতব্য ভােজনশালা স্থাপন করেছিলেন । স্থানীয় ভাষায় একে সদাব্রত বলা হত । এখানে অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ আহার সংগ্রহের জন্য আসতেন । একবার এক সুপুরুষ সাধু পণ্ডিত সেখানে এলেন । তিনি গৌরীবাঈয়ের সঙ্গে ধর্মালােচনায় যােগ দিলেন । গৌরীবাঈয়ের ধার্মিক জ্ঞানের বহন দেখে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । যাবার আগে গৌরীবাঈকে আশীর্বাদ করে বলেছিলেন— “ মা , তুমি তাপসী মীরাবাঈয়ের প্রতিমার মতাে । অত্যন্ত । ভক্তিমতী হলেও একজন সাধু - নারীর যতদূর জ্ঞান থাকা দরকার , মীরাবাঈয়ের তা ছিল না । সেই ত্রুটি সংশােধন করার জন্যই বােধ হয় । ঈশ্বর তােমাকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন । আমি তােমাকে উপদেশ দেওয়ার জন্য এসেছি । অতিরিক্ত জ্ঞান তােমার যা দরকার তুমি তা আমার কাছ থেকে পাবে । ” এই কথা বলে ওই সদাশয় পণ্ডিত গৌরীবাঈকে নিয়ে গেলেন । ব্রহ্মজ্ঞান এবং আত্মজ্ঞান বিষয়ে তাকে সদুপদেশ দান করলেন । গৌরীবাঈয়ের মতাে একজন নারীর পক্ষে সঠিক পথ কী হবে , তা বলে দিলেন । যাবার আগে তিনি বালগােপালের একটি ছােটো বিগ্রহ গৌরীবাঈয়ের হাতে উপহার স্বরূপ তুলে দিলেন । ওই পণ্ডিত ব্যক্তির সান্নিধ্যে গৌরীবাঈয়ের জ্ঞানের বহর গভীরতা বেড়ে গেল । তখন থেকে শুরু হল নিরন্থ উপবাস করে সমাধি মগ্ন অবস্থায় দিন যাপন । একবার তিনি নাকি এই অবস্থায় পনেরাে দিন । আত্মনিমগ্ন ছিলেন । তার ধ্যান এত গভীর হত যে , বাহ্যিক জ্ঞান ভুলে তিনি নিশ্ৰুপ হয়ে বসে থাকতেন । বৃদ্ধা হরিজন মনে করতেন , এই সমাধিস্থ অবস্থা একটা ছলনা মাত্র । তিনি একদিন পরীক্ষার জন্য গৌরীবাঈয়ের গায়ে সূচ ফুটিয়ে ছিলেন ।তখন গৌরীবাঈ সমাধিস্থ অবস্থায় ছিলেন । তার চেতনা ভগ্ন হল না । সমাধিভঙ্গ হবার পর গৌরীবাঈকে স্নান করানাের সময় চাতুরি এই সঁচগুলি । আবিষ্কার করলেন । কে দোষী সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু হল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ দোষ স্বীকার করল না । অনতিবিলম্বে হরিজন কুষ্ঠরােগে আক্রান্ত হলেন । তখন তিনি গৌরীবাঈয়ের পায়ে পড়ে সব দোষ স্বীকার করেছিলেন । গৌরীবাঈ হাসতে হাসতে পাপীকে ক্ষমা করে দেন । তিনি বলতেন— “ পাপকে আমরা ঘৃণা করব । কিন্তু যে মানুষ পাপ কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছে তাকে কেন ঘৃণা করব ? ” তার আশীর্বাদে হরিজন কুষ্ঠ রােগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন । তবে তার শরীরে সাদা দাগ থেকে গিয়েছিল । গৌরীবাঈ সম্পর্কে আর একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে । তিনি ছিলেন । দূর দ্রষ্টা সম্পন্ন মহামানবী । চোখ বন্ধ করলে ভবিষ্যতের ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করতেন । এইভাবেই অনেক মানুষের ভবিষ্যৎ দর্শন করেছিলেন । শােনা যায় , তিনি হাজার হাজার ভক্তিমূলক স্তোত্র এবং গান রচনা । করেছিলেন । তার মধ্যে একটা সহজাত আকর্ষণী ক্ষমতা ছিল । নিষ্ঠাব্রতী , জ্ঞানী এবং সরল হৃদয় নারী হিসেবে পরিচিত হলেন । কখনও ক্রোধে বিচলিত হতেন না । যে কোনাে রূঢ় বাক্য হাসিমুখে সহ্য করতে পারতেন । তার চোখ থেকে দীপ্তির ছটা উদ্ভাসিত হত । কোনাে ভক্ত যখন সরাসরি তার চোখের দিকে তাকাতেন , তখন সেই ভক্ত কেমন যেন হয়ে যেতেন । সাদা থান পরিধান করতেন । একমাত্র অলংকার ছিল তুলসীর মালা । প্রথমবার সমাধি লাভ করার পর থেকে তিনি দুধ ছাড়া আর কোনাে আহার্য গ্রহণ করেননি । ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বেঁচেছিলেন । জীবনের শেষের প্রহর ঘনিয়ে আসার সময় বুঝতে পেরে পবিত্র ব্রজভূমি অর্থাৎ গােকুল এবং বৃন্দাবনে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । রাজা শিবসিংহজী এই কথা শুনলেন । তিনি গৌরীবাঈয়ের কাছে এসে তাকে গিরিপুরে থাকতে বললেন ।  অনেক টাকা উপঢৌকন দিতে চাইলেন । কিন্তু গৌরীবাঈ পার্থিব সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না । তিনি ছিলেন নিজের সিদ্ধান্তে অটল । যােগ্য সাধুর ওপর মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করলেন । এবার নিজের ব্যক্তিগত বালগােপালের দেববিগ্রহ এবং ভগ্নিকন্যাদের নিয়ে বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন । দলটি এল জয়পুরে । সেখানকার রাজা নিজে এলেন তাদের অভ্যর্থনা জানাতে । তিনি আগেই গৌরীবাঈয়ের খ্যাতির কথা শুনেছিলেন । মহারানি । তাঁকে দর্শন করতে এসে পাঁচশাে স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে প্রণাম করলেন । গৌরীবাঈ হাসিমুখে এই স্বর্ণমুদ্রা মহারানির হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন— “ আমি সংসার ত্যাগী তাপসী । এই পার্থিব সম্পদে আমার কোনাে প্রয়ােজন নেই । ” শেষ পর্যন্ত রাজ দম্পতি বারবার অনুরােধ করায় তিনি সেই দান গ্রহণ করলেন । সেই স্বর্ণমুদ্রাগুলি দরিদ্র ব্রাহ্মণদের মধ্যে বিতরণ করলেন । জয়পুরের মহারাজা গৌরীবাঈয়ের বিদ্যাবত্তা দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন । তবে তিনি গৌরীবাঈয়ের পরীক্ষা নিলেন । পুরােহিতকে রাজপ্রসাদের মন্দিরের গােবিন্দ বিগ্রহকে প্রচুরভাবে সজ্জিত করে দরজা বন্ধ করতে বললেন । গৌরীবাঈকে আমন্ত্রণ করে এনে মন্দিরের বাইরের চত্বরে বসালেন । সেখানে ভাগবত পাঠ শুরু হল । এটি ছিল । রাজার ছলনা । পাঠ শেষ হবার পর তিনি গৌরীবাঈয়ের কাছে বিনীত কণ্ঠে জানতে চাইলেন— “ দেববিগ্রহ কীভাবে অলংকৃত হয়েছে তা বর্ণনা । করতে হবে । ” দরজা বন্ধ ছিল , গৌরীবাঈয়ের পক্ষে দেখা সম্ভব ছিল না দেববিগ্রহটি । গৌরীবাঈ ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বললেন বিগ্রহের মধ্যে কী কী অলংকার এবং পরিধেয় বস্ত্র আছে । তিনি বলেছিলেন , সেখানে একটি মাত্র ত্রুটি আমি দেখতে পাচ্ছি , বিগ্রহের মাথায় কোনাে মুকুট নেই । রাজা এবং তাঁরা পারিষদবর্গ এই কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । কারণ শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিতে সত্যিই মুকুট নেই , এমন কথা কখনও শােনা যায় । । মন্দিরের দরজা খােলা হল । দেখা গেল , সত্যি মুকুটটি মাথা থেকে খসে পড়ে গেছে । রাজা বুঝতে পারলেন গৌরীবাঈ অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন এবং মহামানবী । তিনি গৌরীবাঈয়ের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন । গৌরীবাঈ হাসি মুখে রাজাকে ক্ষমা করেছিলেন । রাজা চেয়েছিলেন , গৌরীবাঈ যেন জয়পুরেই থেকে যান । তার অনুরােধে গৌরীবাঈ একটি প্রাসাদে কিছু দিন ছিলেন । কিন্তু সেখানকার সমস্ত খরচ নিজেই নির্বাহ করতেন । তিনি আরও একবার বৃন্দাবনে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন । শেষ পর্যন্ত রাজা বারবার অনুরােধ করাতে গৌরীবাঈ তার পূজার বিগ্রহটি প্রাসাদে রেখে দিলেন । রাজাকে বললেন , নিত্য পূজার ব্যবস্থা করতে । মথুরা , গােকুল , বৃন্দাবনে কিছুদিন অতিবাহিত করার পর গৌরীবাঈ সদলবলে এলেন কাশীতে । বারাণসীর রাজা সুন্দর সিংহের কানেও গৌরীবাঈয়ের ধর্মপরায়ণতার কাহিনি পৌঁছে গিয়েছিল । রাজা নিজে ভক্তিসঙ্গীত রচনার অনুরাগী ছিলেন । তিনি এবং গৌরীবাঈ একত্রে বসে অনেক মুখে মুখে ভক্তি পদাবলী রচনা করলেন । গৌরীবাঈ রাজাকে ধ্যানের প্রণালী শিখিয়ে দিয়েছিলেন । রাজা সুন্দর সিংহের অনুরােধে গৌরীবাঈ পঞ্চাশ হাজার টাকা দান হিসেবে গ্রহণ করেন । পুরাে টাকাই বিতরণ করলেন বারাণসী বসবাসকারী নিঃসঙ্গ মানুষদের মধ্যে । এবার এলেন পুরীতে , জগন্নাথ দর্শন করলেন । সেখান থেকে ফিরে এসে কাশীতে স্থায়ীভাবে বাস করতে থাকলেন । সাতদিন সমাধিস্থ অবস্থায় কেটে গেল । ভবিষ্যৎদ্রষ্টা গৌরীবাঈ বুঝতে পারলেন , শেষের সেদিন । সমাগত । যমুনা তীরে দেহত্যাগ করার বাসনা করলেন । পুরাণে লেখা । আছে বালক ধ্রুব সেখানেই মহাতপস্যায় রত হয়েছিলেন । গৌরীবাঈ আগে থেকেই বলেছিলেন যে , রামনবমীর দিন তার মৃত্যু হবে । রাজা সুন্দর সিংহ তার এই শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন । তিনি যমুনাতীরে গৌরীবাঈকে বসবাসের ব্যবস্থা করলেন । সেখানে কয়েকদিন সমাধিমগ্ন অবস্থায় থেকে ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চাশ বছর বয়সে গৌরীবাঈয়ের মৃত্যু হয় । গৌরীবাঈয়ের দৈবশক্তি ছিল একথা অনেকে বিশ্বাস করবে চাইবেন না । কিন্তু তার সরলতা , ভক্তি এবং এই তিনের সংমিশ্রণে তিনি এক মহান জীবন যাত্রার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন । তার বেশিরভাগ কবিতা গুজরাটিতে লেখা । তবে রাজস্থানের কাছাকাছি । অঞ্চলে জন্মেছিলেন বলে , কিছু কিছু রাজস্থানী শব্দ তাতে লক্ষ্য করা যায় । বেশ কিছুদিন বৃন্দাবন , গােকুল এবং বারাণসীতে থাকার ফলে হিন্দি শব্দ তাঁর কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে । গৌরীবাঈ সম্পর্কে একটি চমৎকার মূল্যায়ন করেছেন তার এক প্রিয় শিষ্য । তিনি বলেছেন— “ গৌরীবাঈ ছিলেন পবিত্র গঙ্গার মতাে । যে তার শরণ নিয়েছে , সে - ই পবিত্র হয়ে গেছে । ” এটাই হল গৌরীবাঈ সম্পর্কে সঠিক বিশ্লেষণ ।


Power by © YogiKathaOfficial

www.yogsiddhi.in

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.