মায়ের ৫১ টি সতীপীঠ :
১. হিঙ্গুলা বা হিংলাজ-
সেই সাদাকালো বাংলা সিনেমার মরুতীর্থ হিংলাজ | পুরাণ অনুযায়ী এখানে সতীর মন বা মস্তিষ্ক পড়েছিল | পাকিস্তানের করাচি থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে এখানে দেবী দুর্গার নাম কোটারি | ভয়ঙ্কর তৃতীয় নয়নের জন্য শিব এখানে ভীমলোচন |
২. করবীপুর-
এই হিন্দুতীর্থও পাকিস্তানে | পাকিস্তানের কাছে এখানে সতীর তিনটি নয়ন পড়েছিল | দেবী এখানে মহিষমর্দিনী রূপে | এবং শিব আছেন ক্রোধীশ নামে |
৩. জ্বালামুখী-
কাংড়ার জ্বালামুখীতে সতীর জিভ পড়েছিল | হিমাচল প্রদেশের পাঠানকোটে এই তীর্থক্ষেত্রে দুর্গার নাম অম্বিকা | শিব আছেন উন্মত্ত রূপে |
৪.সুগন্ধা-
সতীর নাসিকা পড়েছিল | তাই নাম সুগন্ধা | বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠিতে আছে এই তীর্থক্ষেত্র | এই শক্তিধামে দেবীর দুর্গরা নাম সুনন্দা | মহাদেব এখানে ত্র্যম্বক |
৫. ভৈরব পাহাড়, অবন্তী-
সতীর ওষ্ঠ পড়েছিল এই পাহাড়ে | মধ্যপ্রদেশের অবন্তীর এই তীর্থে দেবী দুর্গা পরিচিত অবন্তী নামেই | আর শিব লম্বকর্ণ |
৬. অট্টহাস-
বীরভূমের এই শক্তিপীঠে সতীর অধর বা নিচের ঠোঁট পড়েছিল | দুর্গা এখানে ফুল্লরা নামে পূজিত | শিবের পরিচয় ভৈরববিশেষ্য বলে |
৭. প্রভাস-
মুম্বইয়ের কাছে এই জায়গাও একটি শক্তিপীঠ | এখানে সতীর পাকস্থলি পড়েছিল | দেবী দুর্গার নাম এখানে চন্দ্রভাগা | শিবের মূর্তি পূজিত বক্রতুণ্ড নামে |
৮. ইয়ানাস্থানা-
এই শক্তিপীঠে সতীর চিবুক পড়েছিল | বর্তমান করাচির কাছে পুণ্যভূমিতে দেবীর নাম ভ্রমরী এবং চিবুকা | শিবের নাম বিক্রকটাক্ষ এবং সর্বসিদ্ধিশ |
৯. গোদাবরী-
গোদাবরীর তীরে সতীর বাম গাল বা কপোল পড়েছিল বলে পৌরাণিক বিশ্বাস | দেবীর নাম এখানে বিশ্বমাতৃকা | মহাদেব পূজ্য দণ্ডপানি রূপে |
১০. গণ্ডকী-
সতীর ডান গাল বা কপোল পড়েছিল এই স্থানে | বিখ্যাত এই তীর্থক্ষেত্রে সতীর নাম গণ্ডকীচণ্ডী | আর শিবের পরিচয় চক্রপাণি |
১১.সূচিদেশ-
বহুল পরিচিত দন্তেওয়াড়া নামে | মাওবাদী সন্ত্রাসের তকমা লেগে গেলেও ছত্তিসগড়ের জগদলপুরে এই জায়গা আসলে শক্তি পীঠ | পুরাণ বলে, এখানে ছিটকে এসে পড়েছিল দেবীর উপরের পাটির দাঁত | দেবী এখানে নারায়ণী | মহাদেব পূজিত হন সংহার রূপে | পঞ্চসাগরে পড়েছিল সতীর নীচের পাটির দাঁত | সতী এখানে বরাহী এবং শিব মহারুদ্র | দু জায়গাতেই দেবীর আর এক নাম দন্তেশ্বরী | তবে পঞ্চসাগরের অবস্থান নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে | কোনও কোনও মত বলে, হরিদ্বারের কোনও এক যায়গায় রয়েছে এই পুণ্যভূমি |
১২. ভবানীপুর-
এই সতীপীঠ এখন বাংলাদেশে | রাজশাহীর করতোয়া নদীর তীরে এই স্থানে দেবীর বাঁ নিতম্ব এবং পোশাক পড়েছিল | দুর্গা এখানে পূজ্য অপর্ণা নামে | শিবের পরিচয় ভৈরব | কথিত, নাটোরের রাজা এই মন্দিরে ধ্যান করতেন | প্রতি বছর রামনবমী উপলক্ষে এখানে বড় মেলা বসে |
১৩. শ্রী পর্বত-
দেবীর ডান নিতম্ব ছিটকে এসে পড়েছিল এখানে | দেবীর নাম এখানে সুন্দরী | শিবের নাম সুন্দরানন্দ |
১৪. কর্ণাট –
পুরাণ বলে, নারায়ণের সুদর্শন চক্রের ঘায়ে সতীর দুই কান এসে পড়ে এখানে | সেখান থেকেই নাম কর্ণাট | শিব পূজিত হন অভিরুক নামে | মনে করা হয় কর্ণাট নাম থেকেই কর্ণাটক নামের উৎপত্তি | বর্তমানে এই তীর্থক্ষেত্রটি মাইসোরে চামুণ্ডি পাহাড়ের উপরে |
১৫. বৃন্দাবন-
বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র হলেও এর আর এক পরিচয় শক্তি পীঠ বলে | সতীর কেশরাশি পড়েছিল এখানে | দেবী এখানে উমা | শিব পূজ্য ভূতেশ নামে |
১৬. কিরীটেশ্বরী-
মুকুট-সহ দেবীর শিরোভূষণ পড়েছিল এখানে | বর্তমান অবস্থান মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে | মূল মদির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ নতুন করে মন্দির নির্মাণ করেন | দেবীর পরিচয় এখানে কিরীটেশ্বরী বা মুকুটেশ্বরী নামে | শিব পূজিত হন সংবর্ত রূপে |
১৭. শ্রীহট্ট-
এই নামই এখন সিলেট | সুরমা নদীর তীরে বাংলাদেশের অন্যতম জেলা | এখানেই পড়েছিল সতীর ঘাড়ের একাংশ | দুর্গার নাম এখানে মহালক্ষ্মী | শিব সর্বানন্দ | শিবরাত্রি এবং অশোক-অষ্টমী উপলক্ষে প্রতিবছর মেলা হয় |
১৮. নলহাটি-
বীরভূমের এই স্থানও শক্তিপীঠ | কথিত, সতীর কণ্ঠনালী পড়েছিল এখানে | দেবী দুর্গা এখানে কালিকা এবং শিব হলেন যোগেশ |
১৯. কাশ্মীর –
সতীর ঘাড়ের আর এক অংশ পড়েছিল এখানে | দেবীর নাম এখানে মহামায়া এবং ত্রিসন্ধ্যাস্ভর | আরও সোজা ভাষায় বললে, তীর্থের নাম অমরনাথ | এই শৈব তীর্থ আসলে একটি শক্তিপীঠও বটে |
২০. রত্নাবলী-
এই শক্তিপীঠের অবস্থান নিয়ে রয়েছে দ্বন্দ্ব | কোনও কোনও মতে, এই তীর্থক্ষেত্র তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে | কোনও কোনও মতে এই তীর্থক্ষেত্র বাংলার হুগলিতে | রত্নাকর নদীর তীরে | দেবী দুর্গা এখানে কুমারী এবং শিব হলেন ভৈরব |
২১. মিথিলা:
সতীর বাঁ কাঁধ ছিটকে এসে পড়ে এখানে | দেবী এখানে মহাদেবী এবং শিব পূজিত হন মহোদর রূপে | বর্তমানে জনকপুর স্টেশনের কাছে এই তীর্থস্থান |
২২. চট্টগ্রাম :
কথিত, সতীর ডান হাত পড়েছিল এখানে | দেবী এখানে ভবানী এবং শিব এখানে চন্দ্রশেখর | পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, কলি যুগে সীতাকুণ্ডের কাছে এখানে চন্দ্রশেখর পাহাড়ে নিয়মিত আসেন মহাদেব |
২৩.মানবক্ষেত্র :
বলা হয়, সতীর ডান হাত বা হাতের তালু পড়েছিল এখানে | গুসকরা স্টেশনের কাছে কোগ্রামের এই পুণ্যভূমিতে সতীর পরিচয় দাক্ষ্যায়ণী | শিব পরিচিত সিদ্ধিদায়ক রূপে |
২৪. উজ্জয়িনী:
মধ্যপ্রদেশের এই স্থানে পড়েছিল দেবীর কনুই | তিনি পূজিত হন মঙ্গলচণ্ডী এবং শিব পূজিত হন কপিলাম্বর রূপে |
২৫. পুষ্কর:
দেবীর হাতের তালু থেকে কনুই অবধি অর্থাৎ মণিবন্ধ পড়েছিল এখানে | সতী এখানে পূজিত হন গায়ত্রী নামে | শিবের নাম সর্বানন্দ |
২৬. প্রয়াগ:
ইলাহাবাদের ত্রিবেণী তীর্থে পড়েছিল সতীর হাতের দশ আঙুল | দেবীর নাম এখানে ললিতা এবং শিব হলেন ভবা |
২৭. বহুলা:
বর্ধমানের কেতুগ্রামের কাছে বহুলায় দেবীর বাঁ হাত পড়েছিল বলে বিশ্বাস | দুর্গার নাম এখানে বহুলা | শিবের পরিচয় ভীরুক নামে |
২৮. জলন্ধর:
পাঞ্জাবের এই অঞ্চলে পড়েছিল সতীর ডান স্তন | দেবী এখানে পূজিত হন ত্রিপুরমালিনী | শিবের রূপ ভীষণ |
২৯. রামগিরি:
ছত্তিসগড়ে বিলাসপুর স্টেশনের কাছেই এই তীর্থক্ষেত্র | বলা হয়, দেবীর বাঁ স্তন পড়েছিল এখানে | সতীর পরিচয় এখানে শিবানী এবং শিবের পরিচয় চণ্ড হিসেবে |
৩০. বৈদ্যনাথ:
জশিডির কাছেই বিখ্যাত এই শৈব তীর্থক্ষেত্র আবার সতীর ৫১ পীঠের অন্যতম | বিশ্বাস, এখানেই পড়েছিল সতীর হৃদয় | দেবীর নাম এখানে 'জয়দুর্গা' | শিব হলেন বৈদ্যনাথ |
৩১. উৎকল:
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কাছেই এই শক্তি পীঠ | কথিত, এখানে পড়েছিল সতীর নাভিদেশ | দেবীর নাম এখানে বিমলা এবং শিব পূজিত হন জগন্নাথ রূপেই |
৩২. বোলপুর:
কোপাই নদীর তীর নাকি পড়েছিল সতীর কঙ্কাল | তিনি এখানে দেবগর্ভ | শিবের নাম রুরু |
৩৩. কালমাধব:
অসমের শক্তি পীঠ | এখানে পড়েছিল সতীর ডান দিকের নিতম্ব | দুর্গা এখানে কালী | শিব পূজিত হন অসিতানন্দ রূপে |
৩৪.শোণ:
মধ্যপ্রদেশের শোণ নদীর তীরে পড়েছিল সতীর বাঁ দিকের নিতম্ব | দেবী এখানে পূজিত হন নর্মদা এবং শিব পূজিত হন ভদ্রসেন পরিচয়ে |
৩৫. কামাখ্যা:
অসমের গুয়াহাটিতে ব্রহ্ম পুত্র নদীর তীরে নীলাচল পাহাড়ের উপরে দেবী কামাখ্যার মন্দির | পুরাণ বলে, এখানে দেবীর যোনি পড়েছিল | দেবীর নামও এখানে কামাখ্যা | জাগ্রত এই মন্দিরের কাছেই ব্রহ্ম পুত্রের চরে আছে উমানন্দ মন্দির | শিবের নাম এখানে উমানন্দ |
৩৬. নেপাল:
দেবীর দুই হাঁটু পড়ে এখানে | দেবী এখানে মহশিরা | শিব হলেন কাপালি |
৩৭. শ্রীহট্ট :
সেকালের শ্রীহট্ট বা একালের সিলেট | এখানে একাধিক শক্তি পীঠ আছে | দেবীর ঘাড়ের পাশাপাশি পড়েছিল বাঁ থাই | দেবী এখানে জয়ন্তী এবং শিব কর্মধীশ্বর |
৩৮. পাটনা:
এখানে নাকি পড়েছিল সতীর ডানদিকের থাই | দেবী এখানে সর্বনন্দোদরী | শিব হলেন ব্যোমকেশ |
৩৯. ত্রিপুরা :
সতীর নাম এখানে ত্রিপুরাসুন্দরী | শিব হলেন ত্রিপুরেশ্বর | প্রচলিত বিশ্বাস, দেবীর ডান দিকের পায়ের পাতা পড়েছিল এখানে |
৪০. ক্ষীরগ্রাম:
বর্ধমানের এই গ্রামে পড়েছিল সতীর আঙুল-সহ ডান পায়ের পাতা | সতী এখানে যোগদায়া | শিবের নাম ক্ষীরকান্ত |
৪১. কালীঘাট :
কলকাতার ল্যান্ডমার্কগুলোর মধ্যে অন্যতম এই মন্দির | প্রচলিত বিশ্বাস, এখানে ছিটকে পড়েছিল সতীর ডান পায়ের পাতা | শিব এখানে নকুলিশ বা নকুলেশ্বর |
৪২. কুরুক্ষেত্র :
কুরু-পাণ্ডবদের রণাঙ্গন আবার শক্তি পীঠও বটে | এখানে পড়েছিল সতীর ডান পায়ের গোড়ালি | তাঁর নাম এখানে সাবিত্রী বা স্থানু | শিব এখানে অশ্বনাথ |
৪৩ . বক্রেশ্বর :
বাংলার আর এক বিখ্যাত শক্তিপীঠ | বীরভূম জেলার এই তীর্থক্ষেত্রে পড়েছিল সতীর দুই ভ্রূয়ের মধ্যবর্তী অংশ |সতী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পূজিত হন | শিব হলেন বক্রনাথ | বলা হয়, ঋষি অষ্টাবক্র এখানে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন |
৪৪: যশোর :
সতী এখানে যশোরেশ্বরী | শিব এখানে চন্দ্রধর | পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী সতীর দু হাতের কিছু অংশ পড়েছিল এখানে |
৪৫. নন্দীপুর:
কোনও এক সময়ের নন্দীপুর গ্রাম মিলিয়ে গেছে কালের গর্ভে | এখন দেবী নন্দিনী অধিষ্ঠিতা সাঁইথিয়া শহরে | বিশ্বাস করা হয়, সতীর কণ্ঠহার পড়েছিল এখানে | শিব এখানে পূজিত হন নন্দীকিশোর রূপে |
৪৬. বারাণসী:
পুরাণে কথিত, মহাপ্রলয়ের পরেও অস্তিত্ব টিকে থাকবে এই প্রাচীন শহরের | বাবা বিশ্বনাথের জন্য বিখ্যাত হলেও কাশীধাম একটি শক্তি পীঠ | মনে করা হয়, সতীর কর্ণ কুণ্ডল বা কানের দুল পড়েছিল এখানে | তিনি এখানে বিশ্বলক্ষ্মী | মহাদেব এখানে কাল |
৪৭. কন্যাকুমারী:
দক্ষিণ ভারতে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর এবং বঙ্গোপোসাগরের ত্রিবেণী সঙ্গমে দাঁড়িয়ে আছেন কন্যা দেবী | তিনি কুমারী | ভগবতী বা ভদ্রকালী হিসেবেও তিনি পূজিতা | শিব এখানে নিমিষা |
৪৮ . জাফনা:
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জাফনার আর এক পরিচয় সতীপীঠ রূপে | পৌরাণিক মত অনুযায়ী,প্রাচীন সিংহলের এই অঞ্চলে পড়েছিল সতীর পায়ের মল | সতী এখানে ইন্দ্রাক্ষ্মী | শিব হলেন রক্ষশেশ্বর | পৌরাণিক মত অনুযায়ী ইন্দ্রাক্ষ্মীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র |
৪৯ . বৈরাট :
রাজস্থানের জয়পুরের কাছে বৈরাট | সতী এখানে অম্বিকা | শিব হলেন অমৃত | পৌরাণিক বিশ্বাস মতে এখানে দেবীর পায়ের কিছু অংশ পড়েছিল |
৫০. বিভাস:
বঙ্গদেশের আর এক সতীপীঠ | পূর্ব মেদিনীপুরের কাছে তমলুকের এই তীর্থক্ষেত্রে পড়েছিল দেবীর বাঁ পায়ের গোড়ালি | সতী এখানে ভীমরূপা | শিব হলেন সর্বানন্দ |
৫১. ত্রিসোতা :
জলপাইগুড়িতে তিস্তার তীরে শালবাড়ি গ্রামে পড়েছিল সতীর বাঁ পায়ের পাতা | তিনি এখানে ভ্রামরী | শিব পূজিত হন ঈশ্বর রূপে | সতীর ৫১ পীঠ নিয়ে আছে বহু মত, দ্বিমত | কথা, উপকথা অনুসারে যুগে যুগে পল্লবিত হয়েছে বিশ্বাস | এবং সেই সনাতনী বিশ্বাসেই মিলিয়ে গেছে বস্তু | না'ই বা হল তর্কের দূরত্ব মেপে দেখা |
জয় মা দূর্গা।।🙏