*কথা প্রসঙ্গে* _(সপ্তম খন্ড)_
জিজ্ঞাসু :-- আমি রোজ সকাল সন্ধ্যে দু'বার ধ্যান করি। মাঝে মাঝে উজ্জ্বল আলোর মতো flashing হয়। এমনটা যেদিন হয়, সেইদিন বেশ মনটায় আনন্দ লাগে। কিন্তু সবদিন এমন হয় না কেন ?
গুরুমহারাজ :-- ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে এই একই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উনি বলেছিলেন_ 'ছিপ নিয়ে মাছ ধরতে গেলে ধৈর্য ধরে বসে থাকতে হয়, সবদিনই মাছ পাওয়া যাবে বা মাছে টোপ গিলবে এমন হয় না। কোনো কোনো দিন পাওয়া যায় আবার কোনো কোনো দিন মাছের ঘোরাফেরা লক্ষ করা যায় – তাতে বোঝা যায় যে 'চারে' মাছ রয়েছে।' উদাহরণটা বুঝতে পারছো নিশ্চয়ই। সকাল সন্ধ্যায় কোনো নির্জন স্থানে, একটু পবিত্র ভাব নিয়ে কিছুক্ষণ 'সহজ প্রাণায়াম' করে নিতে হয়। এরপরে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে এলে যোনীমুদ্রা, খেচরীমুদ্রা - ইত্যাদি মুদ্রায় কিছুক্ষণ কাটালে দেখবে মনও কেমন শান্ত হয়ে আসে। এই অবস্থায় চোখ বন্ধ করে ভ্রুমধ্যে চোখের মণিগুলিকে স্থাপন করে মনোযোগ করলে জ্যোতিদর্শন হয়, যেটাকে তুমি 'flashing' বললে !
কিন্তু বাবা__এটাই তো সাধকের চূড়ান্ত লক্ষ্য বা সাধনার perfection নয় ! এরপরেও অনেক স্তর অতিক্রম করতে হয় ! যেমন ঐ অবস্থার পর মনকে আরও অধ্যয়ন করতে থাকলে__ দেখবে ঐ উজ্জ্বল আলোর মধ্যে নীল বিন্দু রয়েছে ! এবার এগুলির মধ্যে ধীরে ধীরে যদি তুমি তোমার চিত্ত সমাহিত করতে পারো__ তখন তোমার একটা অন্যরকম অবস্থা হবে। তখন তোমার আর স্থান-কাল-পাত্রের জ্ঞান থাকবে না ! এক অপার্থিব আনন্দময় জগতে তোমার বিচরণ হবে!
এতোক্ষণ যতটা বললাম__তুমি অতদূর পৌঁছানোর চেষ্টা করো। ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়াই ভালো। তোমার দ্বারা যোগ-সাধনা হবে,তাই তোমাকে এতো কথা বলছি। তুমি যদি আমার কথা অনুযায়ী চেষ্টা করো__অভীষ্ট ফল লাভ হবেই হবে।।
দ্যাখো, এইজন্যই যোগীরা একটা ক্রমের কথা বলে থাকেন । যোগীর প্রথম লক্ষণ হোলো চক্ষুস্থির, চক্ষুস্থির ব্যক্তির-ই প্রাণ স্থির হয়। আর প্রাণ স্থির হলে মন শান্ত হয়, আর মন শান্ত হলে নিরুদ্ধ চিত্ত হওয়া যায় এবং এটাকেই সমাহিত অবস্থা বলা হয়।
সংকলক শ্রীধর ব্যানার্জি