Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

ভারত কেন তন্ত্র সাধনার দেশ?, Why is India a country of Tantra practice?,


 তন্ত্র কীঃ..............



তন্ত্র, Tantra 



তন্ত্র সাধনার দেশ ভারতবর্ষ। সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে ভক্ত তার সিদ্ধিলাভের জন্য তন্ত্র সাধনা করে আসছেন। যে সব দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে তন্ত্র সাধনা হয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবী হলেন কালী। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সাধক-সাধিকারা মা কালীর নানা রূপের সাধনা করেন। খুব নিষ্ঠাভরে এই তন্ত্র সাধনা করতে হয়। কোনওরকম দোষ-ত্রুটি হলে সর্বনাশ হতে পারে। তাই সঠিক পথে নিষ্ঠাভরে তন্ত্রের বিভিন্ন নিয়ম মেনে সঠিক সাধনা করতে পারলে মা কালী তাঁর ভক্তকে অমিত শক্তি প্রয়োগ করে থাকেন বলা হয়।


‘তনু’ থেকে ‘তন্ত্র’ কথাটি এসেছে। তন্ত্র সাধনার মূল দাঁড়িয়ে আছে ‘পঞ্চ ম’-এর ওপর। তবে তন্ত্র সাধনা আর তান্ত্রিক কালীপুজোর মধ্যে বিশেষ করে লোকচক্ষুর সামনে মা কালীর যে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুজো হয়ে থাকে তার মন্ত্র, মুদ্রা ও আচারআলাদা। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মা কালীর পুজোয় জীব বলি দেওয়া হয় ও মৎস্য ভোগও নিবেদন করা হয়। মাকে সুরা নিবেদন করা হয়। 


মা কালী হলেন বিশ্ব প্রসবিনী মা মহাশক্তি মহামায়ারই ভিন্ন রূপ, ভিন্ন ভিন্ন কর্মসাধনের জন্য পরমা প্রকৃতি আদ্যাশক্তি মহামায়া ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে জগতের কল্যাণে ও অসুর বিনাশে লিপ্ত হয়েছেন। সাধারণত  কাপালিক, অঘোরী, তান্ত্রিক প্রভৃতি, যাঁরা তন্ত্রের দ্বারা কালী সাধনা করে থাকেন। তন্ত্রসাধনা বেশ কষ্টকর। প্রথমে পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে বশে আনতে হবে। নিজের কুলকুণ্ডলিনীকে জাগাতে হবে। তন্ত্র সাধনা করতে গেলে সাধক বা সাধিকা ভূত-প্রেত ও নানা রকম ভয় ও প্রলোভনকে জয় করে তবেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারেন। সন্ন্যাস নিয়ে বা গৃহে থেকেও সঠিক গুরুর পরামর্শে সাধক বা সাধিকা তন্ত্র সাধনায় মা কালীকে তৃপ্ত করতে পারেন।


তন্ত্র কী এই নিয়ে একটু বিশদে আলোচনা করা যাক। মনে করা হয় সনাতন ধর্মে এই তন্ত্র সাধনা খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের প্রথম দিকে উদ্ভব ঘটেছিল। তন্ত্র হল এক বৃহৎ ও গভীর গোপন বিষয়। প্রকৃত গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে গুরু নির্দেশিত পথে তন্ত্র সাধনা করতে হয়। তন্ত্রের মানে অনেক ব্যাপক, তবে সংক্ষেপে বলতে হলে বলা যায় তন্ত্র হল সৃষ্টি পরিচালনার নিয়ম। তাই তন্ত্র বিষয়টির তাৎপর্য বিশাল। তন্ত্র অতিপ্রাচীন বৃহৎ গুপ্ত একটি বিষয়। তন্ত্র সাধকরা মনে করেন এই মহাবিশ্ব শিবশক্তি ও মাতৃশক্তির অপার লীলা। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের কর্মকাণ্ড অর্থাৎ সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে তন্ত্র বলা হয়। প্রথমে শিব ও অন্যান্য দেবতাদের তন্ত্রের মাধ্যমে সাধনা করতে করতে নারী শক্তির সাধনায় তন্ত্রের বিকাশ ব্যাপক হয়েছে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন। 


দশ মহাবিদ্যার প্রথমা বিদ্যা হলেন মা কালী। পরমা প্রকৃতি বিশ্ব প্রসবিনী মা মহামায়ারই বিভিন্ন রূপ দশ মহাবিদ্যা। তার মধ্যে মা কালী তন্ত্র সাধনার মধ্যমণি বলা যায়। গুপ্ত যুগের শেষ দিকে তন্ত্রের প্রচলন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছিল। তারপর চৈনিক পরিব্রাজকরা অনেক তন্ত্রের পুঁথি তাঁদের দেশে নিয়ে যান এর ফলে বৌদ্ধধর্মে তন্ত্রের প্রবেশ ঘটে। তন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছে মন্ত্র ও যন্ত্র। যন্ত্র হল দর্শন আর পুজো হল পদ্ধতি। অবিদ্যাকে গ্রাস করে জ্ঞানশক্তির উন্মোচন করে তন্ত্র। আর প্রাকৃতিক শক্তিকে চৈতন্যময় করাই তন্ত্রের উদ্দেশ্য। তন্ত্র অসীম শক্তির আধার। তন্ত্র সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের পরিচালনা শক্তি। তাই তো তন্ত্র বিদ্যা অতি গোপন বিদ্যা। এক বৃহৎ ও গোপন বিষয় তন্ত্র। তাই দীক্ষা ছাড়া গুরু কাউকে এই পথের সন্ধান দিতে চান না। তন্ত্র হল সনাতন হিন্দু সমাজে প্রচলিত প্রাকবৈদিক উপাসনার একটি পদ্ধতি। তন্ত্রের উদ্দেশ্যই হল মানুষকে অজ্ঞানতা ও পুনর্জন্মের হাত থেকে মুক্ত করা। অনেকেই তন্ত্র বলতে মারণ, উচ্চাটন, বিদ্বেষণের মত কুকর্ম বলে ভয় পান ও প্রচার করেন। আসলে তন্ত্র হল আত্মারাম হওয়ার একটি উপায় মাত্র। 


আগামী মাসে, পুজোর ঠিক আগেই প্রকাশিত হতে চলেছে 'ভালো থাকার উপায় টোটকা' ও 'কালীসাধনা' বই দুটি। একটি প্রেসে গিয়েছে আর একটির লেখা চলছে। আশাকরি অনেকের উপকারে আসবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.