Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

রাসলীলা কী?,কেন রাসলীলা পালন করা হয়?,শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের সাথে কেন রাসলীলা করতো?, What is Rasalila?, Why is Rasalila observed?, Why did Shri Krishna perform Rasalila with the gopis?,

 রাসলীলাঃ


গোপীদের সাথে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা,
         Rasalila of Lord Krishna with the Gopis,


ভূমিকাঃ--

শ্রীমদ্ভগবতের বিশেষ একটি অংশ রাসলীলা। পাঁচটি অধ্যায়ে এটি বর্ণিত রয়েছে, তাই এর নাম রাস পঞ্চাধ্যায়। শ্রীকৃৃষ্ণ গোপীদদের সঙ্গে যমুনা পুলিনে নৃত্য করেছিলেন। মহাপবিত্র তরুন তাপস শুকদেব ঈশ্বরীয় পরা ব্যক্তির এই আখ্যান বর্ণনা করেছেন - শুনছেন মৃত্যুপথ যাত্রী রাজা পরিক্ষিত। কোন অপবিত্র ভাব এই লীলা মধ্যে থাকতে পারে না। ঈশ্বরীয় প্রেমের অতি উচ্চন্তরের একটি রূপক হল রামলীলা।


লীলা কথাঃ--

শ্রীকৃৃষ্ণ অষ্টম বর্ষে পদার্পন করেছেন, তিনি যোগেশ্বর, অনেক আলৌকিক শক্তি ছিল তাঁর। পুতনা বধ, কালিয় দমন, গিরি গোবর্ধন ধারণ প্রভূতি ঘটনার মধ্যে আমরা দেখছি। 


গোপিনীরা কাত্যায়নী পূজা করে দেবীর নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, জগতের পতি শ্রীকৃষ্ণকে নিজেদের পতিরূপে পাওয়ার জন্য, আজ তাদের বাসনা পুর্ণ হবে।


পূর্ণিমা অপরূপ শোভা হয়েছে যমুনা পুলিনে। বিকশিত পদ্মের মতো অখণ্ডমন্ডল হয়ে চাঁদ আকাশে শোভা পাচ্ছে। মনের আনন্দে শ্রীকৃৃষ্ণ বাঁশী বাজাতে আরম্ব করলেন। সেই বেনুধ্বনি শুনে গোপীরা সব গৃহকর্ম ফেলে যমুনার দিকে ছুটলেন। শ্রীকৃৃষ্ণ তাঁদেরকে দেখে বললেন, তোমরা এসময় এ বনে এলে কেন? এখানে হিংস্র প্রাণী থাকতে পারে, তোমরা অবলা, তোমাদের এখানে থাকা উচিত নয়। বনের শোভা দেখার জন্য যদি এসে থাক তা তো দেখা হল। আমার প্রতি যদি অনুরাগ থাকে তাতেও দোষ নেই, কারণ সব প্রাণীই আমার প্রতি অনুরক্ত হয়ে থাকে। এখন তোমরা ঘরে ফিরে চাও, পতি - পুত্রেই সেবা স্ত্রীলোকের ধর্ম।


গোবিন্দের এই কঠোর বাক্য শুনে গোপীরা দুঃখিত হলেন, তাঁরা বললেন, আমরা সমস্ত বিষয় - সংসার ছেড়ে তোমার শ্রীচরণ ভজনা করছি। আমরা তোমার পদ্মযুগল আশ্রয় করছি আমাদের ত্যাগ করো না। ভগবান ভক্তকে যেভাবে গ্রহণ করেন, সেরকম তুমি আমাদের গ্রহণ করো। হে পদ্মপলাশ লোচন, তোমার শ্রীচরণর খোঁজে স্বয়ং লক্ষী দেবী ব্যস্ত।


আমরা সামান্য বনচারী ব্রজবাসী, তোমার চরণম্পর্শ করে ধন্য হয়েছি। এখন আর কি পতি - পুত্র নিয়ে তোমাকে ভুলে থাকতে পারি। নিশ্চয়ই করে আমরা জানি, যে রকম ব্রহ্মা দেবলোকের রক্ষাকর্তা, তুমিও তেমনি ব্রজভূমির রক্ষক। হে পীড়িতের বন্ধু, কৃপা করে আমাদের মস্তকে তোমার কমল হস্ত ম্পর্শ করো, আমরা তোমার শ্রীচরণের দাসী। 


ভগবানের শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে গোপীরা ক্রীড়ার প্রবৃত্ত হলেন। যমুনাতীরে তাঁদের নিয়ে গোবিন্দ ইতস্ততঃ বেড়াতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণের কাছে এত আদর, এত সম্মাণ পেয়ে গোপীদের মনে অহংকার হল, আমরা সামান্য নই, পৃথিবীর স্ত্রীলোকের মধ্যে আমরা শ্রেষ্ঠ। যেমনী গোপীদের মনে এই অহংকার এল, তেমনি তাঁদের গর্ব দুর করে শুদ্ধ পবিত্র করবার ইচ্ছায় শ্রীকৃৃষ্ণ হঠাৎ অন্তহিত হলেন। 


শ্রীকৃৃষ্ণকে দেখতে না পেয়ে ব্রজ নারীরা খুবই ব্যাকুল হলেন। কোথায় কৃষ্ণ, হা কৃষ্ণ বলে চতুর্দিকে খুঁজতে লাগলেন। তাঁরা তখন পাগলের মতো বনের ফুলগুলিতে জিজ্ঞাসা করেন, ওগো অশোক, ওগো চম্পক, তোমরা কি শ্রীহরিকে দেখেছো? ওগো তুলসী, তুমি গোবিন্দের এত প্রিয় কোথায় গেলেন আমাদের গোবিন্দ? গাছগুলিকে তাঁরা ডেকে বলেন, ওগো পিয়াল, পনস, আস্ত তোমরা তো পরের জন্য জীবন পাত করছ - শ্রীকৃৃষ্ণ কোন পথ দিয়ে গেলেন সেটি আমাদের বলে দাও। তাঁর বিরহে আমাদের চিন্ত শূন্য রেখে যাচ্ছে।


গোপীরা কৃৃষ্ণকে কাছে পেয়েছিলেন, এখন তাঁকে হারিয়ে তাঁরা হয়েছেন উদ্মদবৎ। তাঁরা নিজদিগকে শ্রীকৃৃষ্ণ বলে মনে করছেন। এবং কৃৃষ্ণলীলা অনুকরণ করে কখন পুতনা বধ, কখনও কালিয়ে দমনের অভিনয় করেছেন। এইসব করতে করতে হঠাৎ এক জায়গায় তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের পদচিহ্ন দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। 


শ্রীকৃষ্ণের পদচিহ্ন চিনতে অসুবিধা নেই, তাঁর পায়ে যে বজ্রাঙ্কুশ চিহ্ন আছে, তাঁর ছাপ পড়েছে। কিছুদূর গিয়ে তাঁরা দেখতে পেলেন আরও একটি পদচিহ্ন? যিনি ভগবানকে আরাধনা করে হয়েছেন রাধারাণী। আর এই তিন অবতা (ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর) বরে তিনি ভাগ্যবতী। গোবিন্দ আমাদের সকলকে ছেড়ে আজ তাঁকে নিয়ে কোথাও গেলেন, কিন্তু শ্রীকৃৃষ্ণ কোথায়? অনুন্ধান চলল জোর। 


কৃৃষ্ণচিন্তা করতে করতে তাঁরা শ্রীকৃৃষ্ণে তন্ময় হয়ে তাঁর লীলাস্মরণ ও তাঁর কথা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলেন, তোমার কথা স্মরণ করে আজ আমরা কত আনন্দ পেয়েছি। তোমার কথা যে অমৃতের মতো, তা শোনামাত্রই মঙ্গল সাধন করে - কোন সাধন ভজনের অপেক্ষা রাখে না। যারা তোমার অমৃত কথা বিতরণ করে, তাঁরা এ জগতে দাতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দাতা।


তব কথামৃতং তপ্তজীবনং, কবিভিরীড়িতং কল্মষোপহম্।

শ্রবণ মঙ্গলং শ্রীমদাততং, ভুবি গৃণন্তি তে ভুরিদা জন্যঃ।।

(শ্রীমদ্ভগবত ১০/৩১/৯)


হে কান্ত, হে নাথ, যখন পদচারণ করতে করতে তুমি ব্রজে চলে যাও, তোমার পাদকমল পাছে কোন বেদনা পায় তাঁর জন্য আমাদের মন ব্যাকুল হয়। আর এখন তুমি কোথায়! তুমি আমাদের প্রাণ, আমাদের পরমায়ু, তোমার প্রাণমাতানো বংশীধ্বনি শুনে আমরা পতি - পুত্র - জাতি ভ্রাতা ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি, তুমি দেখা দাও। 


নানা স্তব-স্ততি করে গোপীরা যখন উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে লাগলেন, তখন গীতবসন মুরলীধারী তাঁদের সামনে হঠাৎ আবির্ভুত হলেন। তাঁর দর্শনে, আনন্দে পাগল হয়ে গেলেন গোপিনীরা। মদনমোহন সেই গোপিনীদের নিয়ে খেলা করতে লাগলেন যমুনা তীরে। ফুলের মিষ্টি গন্ধে মৌমাছিরা গুণ গুণ করে মধুর গান করেছে, ফুলে ফুলে ভরে আছে যমুনার তীর, শরতের জ্যোৎস্না মল্লিকা ফুলের মত ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। তিন বুবনের সকল শোভা সম্মিলিত হয়ে আজ যেমন শ্রীকৃৃষ্ণ রূপে আবির্ভুত হয়েছেন এবং তিনি শোভা পাচ্ছেন গোপীমণ্ডলের মাঝে।


গোপিনীরা আনন্দে পরস্পরে বাহুবন্ধনে মিলিতা হলেন। গোপীমণ্ডল - মণ্ডিত যোগেশ্বর শ্রীকৃৃষ্ণ তাঁদের প্রতি দুইজনের মধ্যে প্রবেশ করে রাস মহোৎসব আরম্ব করলেন। প্রত্যেক গোপী দেখলেন শ্রীকৃৃষ্ণ তাঁর হাত ধরে আছেন।


রাসোৎসব সম্প্রবৃত্তা গোপীমণ্ডলমণ্ডিতঃ।

যোগেশ্বর কৃষ্ণেন তাসাং মধ্যে দ্বয়োর্দ্বয়ো।।

(শ্রীমদ্ভগবত ১০/৩৩/৩)


প্রত্যেক গোপী ভাবলেন, যিনি জগতের পতি, যিনি জগতের আশ্রয়, তিনি আমারও পতি এবং আমারও আশ্রয়। তিনি যে আমার একান্ত আপনার, এতক্ষণ তাঁরা ধ্যান করে শ্রীকৃৃষ্ণকে অন্তরে উপলদ্ধি করেছিলেন - এবার দেখলেন তিনি তাদের কাছেই রয়েছেন। 


গোপীদের মনের ভিতর শ্রীকৃৃষ্ণ।

🙏🏻হরে কৃষ্ণ 🙏🏻

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.