Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

ধারণার পরিপক্ক অবস্থাই ধ্যান। samadhi,

 ধারণার পরিপক্ক অবস্থাই ধ্যান। 


‘‘যে বস্তুতে মনকে আবদ্ধ করা হয়, সেই বস্তুবিষয়ক জ্ঞান নিরন্তর এক ভাবে প্রবাহিত হইতে থাকিলে উহাকে ধ্যান বলে। মনকে কোন বস্তু-বিশেষে ধারণ করিয়া তদ্‌বিষয়ক কতকগুলি বিশেষ বৃত্তি উৎপাদনের চেষ্টা করিলে অন্যান্য বহু বৃত্তি মনে উপস্থিত হয়। এই শেষোক্ত বৃত্তিগুলিকে অধ্যবসায়সহকারে দমন করিতে পারিলে উহারা নষ্ট হয় এবং প্রথমোক্ত বৃত্তিগুলি প্রাধান্য লাভ করে। শেষে বহু বৃত্তিও নষ্ট হইয়া একটি বৃত্তিমাত্রে পর্যবসতি হইলে ধ্যান সিদ্ধ হয়। স্বামী বিবেকানন্দ বলিয়াছেন, ‘‘যদি মনকে কোন স্থানে বার সেকেন্ড ধারণ করা যায়, তাহাতে একটি ধারণা হইবে; এই ধারণা দ্বাদশগুণিত হইলে একটি ধ্যান এবং এই ধ্যান দ্বাদশ গুণ হইলে এক সমাধি হইবে।’’ ধ্যানই পরিপক্ক হইলেই সমাধি হয়। এই জন্য ধ্যান যোগীর সর্বোচ্চ লক্ষ্য সমাধিলাভের প্রধান উপায়। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলিয়াছেন, ‘‘ধ্যানই জীবগণের বন্ধন ও মুক্তির কারণ।’’ ধ্যান না করিলে জীব বদ্ধ থাকে এবং ধ্যান করিলে মুক্ত হয়। যিনি যে ধর্মমতে বিশ্বাস বা যে ধর্মপথেই সাধন করুন না কেন, সাক্ষাৎ বা পরোক্ষ ভাবে ধ্যানের আশ্রয় গ্রহণ সকলের পক্ষেই বিশেষ আবশ্যক। হিন্দুর সকল ধর্মসম্প্রদায়েই ধ্যানযোগ সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনরূপে পরিগণিত।

ধ্যান প্রধানতঃ স্থূলধ্যান জ্যোতির্ধ্যান ও সূক্ষ্মধ্যান ভেদে ত্রিবিধ। হঠযোগিগণ সাকার ইষ্টদেবদেবী ও গুরুর ধ্যানকে স্থূলধ্যান ও জ্যোর্তিময় ব্রহ্মের ধ্যানকে জ্যোতির্ধ্যান এবং বিন্দুময়ী কুণ্ডলিনী শক্তির ধ্যানকে সূক্ষ্মধ্যান বলেন। এই তিনটি পর্যায়ক্রমে অধম মধ্যম এবং উত্তম। কিন্তু স্থূলধ্যানে পরিপক্কতা না জন্মিলে সূক্ষ্মধ্যানে অধিকার হয় না। রাজযোগমতে আত্মস্বরূপের ধ্যানই সূক্ষ্মধ্যান। এতদ্ভিন্ন সগুণধ্যান ও নির্গুণধ্যান নামক দুই প্রকার ধ্যান আছে। হৃদয়পদ্মে ইষ্টদেবদেবী অবতার ও গুরুর ধ্যানকে সগুণধ্যান এবং আপনাকে সচ্চিদানন্দস্বরূপ ব্রহ্ম বা আত্মরূপে চিন্তা করাই নির্গুণধ্যান। সগুণধ্যান অপেক্ষা নিগুর্ণধ্যান শ্রেষ্ঠ। শূন্যধ্যানই নির্গুণধ্যান। ইহা অতি উচ্চাঙ্গের ধ্যান বলিয়া স্বীকৃত। ইহা বৌদ্ধমতের শূন্য নহে। যোগশাস্ত্রে আছে, ‘‘যে যোগী অবস্থানকালে গমনকালে শয়নকালে ও ভোজনকালে অহর্নিশি শূন্যধ্যান করেন তিনি আকাশময় হইয়া চিদাকাশে লয় প্রাপ্ত হন।’’ এই ধ্যান অত্যন্ত কঠিন। ইহাতে সর্বশূন্যরূপ নির্বিষয়ের ধ্যান করিতে হয় বলিয়া মনকে একেবারে বিষয় বা বৃত্তিশূন্য করা আবশ্যক। এতদ্ভিন্ন যোগশাস্ত্রে বহুবিধ ধ্যানের প্রণালী বর্ণিত আছে।

সমাধি

ধ্যান গভীর হইলে যখন ধ্যানজ্ঞান পর্যন্ত থাকে না এবং চিত্ত ধ্যেয় বস্তুতে লীন হইয়া ধ্যেয়াকার প্রাপ্ত হয়, তখন সমাধি লাভ হইয়া থাকে। মহর্ষি পতঞ্জলি বলেন, ‘‘ধ্যান যখন কেবল-মাত্র ধ্যেয় বস্তুকেই প্রকাশ করে, তখন উহাকে সমাধি বলে।’’ সমাধি সম্প্রজ্ঞাত ও অসম্প্রজ্ঞাত ভেদে দুই প্রকার। যে সমাধিতে বিতর্ক বিচার আনন্দ ও অস্মিতা অনুগত থাকে ইহা সম্প্রজ্ঞাত সমাধি। এই সমাধিতে ধ্যেয় বা ভাব্য বস্তুর স্পষ্ট জ্ঞান থাকে। এই জন্য ইহাকে সমক্য জ্ঞানযুক্ত সমাধি বলে। এই সমাধি বিতর্ক বিচার আনন্দ ও অস্মিতা এই চারিপ্রকার। বিতর্ক মানে প্রশ্ন। বিতর্ক সমাধি আবার সবিতর্ক ও নির্বিতর্ক ভেদে দ্বিবিধ। যে সমাধিতে দেশ-কালের অন্তর্গতরূপে বাহ্য স্থূল ভূত ধ্যেয় ইহাকে সবিতর্ক বলে। ইহাতে শব্দ অর্থ এবং তৎপ্রসূত জ্ঞান থাকে। এই জন্য ইহাকে সবিতর্ক বা বিতর্কযুক্ত সমাধি বলা হয়। যে সমাধিতে দেশ-কালের অতীতরূপে ভূতের স্বরূপ চিন্তা করা হয় ইহাকে নির্বিতর্ক সমাধি বলে। এই সমাধি লাভ করিলে স্মৃতি শুদ্ধ হয় বলিয়া স্মৃতিতে ত্রিগুণের (সত্ত্ব রজঃ তমঃ) সম্পর্ক থাকে না এবং ইহা ধ্যেয় বস্তুর অর্থ মাত্র প্রকাশ করে। এই জন্য ইহাকে নির্বিতর্ক বা বিতর্কশূন্য সমাধি বলা হয়। যখন ভূত তন্মাত্রগুলিকে দেশ-কালের অন্তর্গতরূপে চিন্তা করা হয়, তখন ইহাকে সবিচার সমাধি এবং যখন ভূত-তন্মাত্রগুলিকে দেশ-কালের অতীতরূপে ভাবা হয়, তখন ইহাকে নির্বিচার সমাধি বলে। এই সমাধির পরবর্তী অবস্থায় স্থূল সূক্ষ্ম উভয় ভূত এবং ইহাদের তন্মাত্রগুলির চিন্তা ত্যাগ করিয়া কেবল অন্তঃকরণ-কে ধ্যানের বিষয় করিতে হয়। অন্তঃকরণকে রজঃ ও তমঃ গুণযুক্তরূপে চিন্তা করিলে ইহাকে সানন্দ সমাধি এবং অন্তঃকরণকে রজঃ ও তমঃলেশশূন্য শুদ্ধসত্ত্বরূপে চিন্তা করিলে এবং সমাধি সুগভীর হইলে স্থূলসূক্ষ্ম ভূতের চিন্তা ছাড়িয়া মনের স্বরূপাবস্থা যখন ধ্যেয় হয় ও সাত্ত্বিক অহংকার মাত্র অন্যান্য বিষয় হইতে পৃথক হইয়া বিদ্যমান থাকে, তখন ইহাকে সাম্মিত সমাধি বলে। এই অবস্থা লাভ করিলে যোগী বিদেহ হন। বিদেহ যোগীর স্থূল দেহজ্ঞান থাকে না। তিনি আপনাকে স্থূলদেহী মনে না করিয়া সূক্ষ্মদেহী বলিয়া মনে করেন। এই অবস্থায় লয়প্রাপ্তিকে প্রকৃতলয় বলে। যে যোগী এইরূপ সূক্ষ্মভোগেও সন্তুষ্ট হন না তিনিই চরম লক্ষ্য অসম্প্রজ্ঞাত সমাধিতে অধিষ্ঠিত হইয়া মুক্তি লাভ করেন।

Tags

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.