সাধকের সাধনা
সাধারণ অবস্থায় ভাব বা ভালোবাসার আন্তরিক অভাব থাকে। গুরুসঙ্গ করতে করতে ক্রমে ভালবাসা বাড়ে। ভালবাসা যত বাড়ে তত মন একাগ্র
হয়ে ওঠে। প্রথম অবস্থায় ভালবাসা বিক্ষিপ্ত মনে হয়। যত ভালবাসা গভীর
হয়, তত মন একমুখী হতে থাকে। আর মন যত একমুখী হয় তত ভালবাসার
রাজ্যে প্রবেশ হয়। ভালবাসার পাঁচটি স্তর, যথা—শান্তভাব, দাস্যভাব, সখ্যভাব,
বাৎসল্য ভাব ও মধুর ভাব। আসলে এই ভাবগুলি ভালবাসারই ক্রম গভীর
স্তর। মন যত একনিষ্ঠ হয় তত ভালবাসা গভীর হতে গভীরতর হয়ে গভীরতমে
প্রবেশ করে। তাই যে ভালবাসায় মন শান্তভাবে ওই ভালবাসার প্রতি একনিষ্ঠ
থাকে তাকে শান্তভাবে বলে। যত মনে শান্ত ভালবাসার উদয় হয় তত
ভালবাসার গভীরে প্রবেশ হয়। এই গভীর ভালবাসা শুরু হয় দাস্যভাব দিয়ে।
দাস্যভাব মানে তুমি প্রভু বা গুরু, আমি দাস বা শিষ্য। দাস্যভাবে কিছুটা
দূরভাব থাকে। যেমনি প্রভুর প্রতি চাকরের শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা ও শরণাগতি
থাকলেও—মনের দিক দিয়ে কিছুটা দূরভাব থাকে। তবে ক্রমে ভালবাসার
গাঢ়তায় মন নিকট হতে থাকে এবং দূরভাব দূরে চলে যায়। যত দূরভাব চলে
যায় তত আপন বােধ জাগতে থাকে। এই আপন বােধের শুরু হয় সখ্যভাব
দিয়ে। অর্থাৎ এতকাল দাস্যভাবে একটু তফাৎ বােধ ছিল, এবার বন্ধুভাবে
নিকট বােধ জেগেছে। সর্বদা ভগবানের নিকটে থাকাকে সখ্যভাব বলে।
সাধক অবস্থা এই সখ্যভাব পর্যন্ত। এরপরে সিদ্ধাবস্থা বাৎসল্য হতে মধুর
ভাবে গিয়ে পূর্ণতা লাভ করে।
(দিব্যবন্ধু)