:-অতীন্দ্রিয় প্রেম-:
একটা শিশুর ঘুমন্ত অবস্থাই হল আমাদের মধ্যে অব্যক্ত প্রেম। প্রথমে
শিশুর মা ওই ঘুমন্ত শিশুটিকে একটা চুম্বন দিল। তখন শিশুর সত্তা হালকা
ভাবে জেগে উঠল যাকে ভগবানের সৎ অবস্থা বলে। সত্তাকে সৎ বলে,
চেতনাকে চিৎ বলে এবং আনন্দসহ ওই চিৎসত্তার জাগরণকেই সচ্চিদানন্দ বা
ভগবৎ প্রেম বলে। ঘুমন্ত শিশুর মধ্যে মাতৃস্পর্শে সত্তা জেগে উঠলাে। তারপরে
মা তাকে জাগাতে নানা ভাবে আদর করতে থাকল। এতে শিশুটি জেগে
উঠল—যাকে সৎ হতে চিৎ-এর জাগরণ বলে। এইভাবে শিশুটিকে জাগিয়ে
মা এবার তাকে কোলে তুলে নিয়ে নানা ভাবে আনন্দ বিনিময় করতে
থাকল—যাকে আনন্দের জাগরণ বলে। একইভাবে আমাদের মধ্যে ভগবৎ
সত্তা অব্যক্ত অবস্থায় বিরাজ করছেন। তাকে পাওয়ার জন্য ভক্ত তাকে ডাকতে
থাকে। একাগ্র চিত্তে এইভাবে ডাকতে ডাকতে ক্রমে আমাদের মধ্যে ভগবৎ
সত্তার অনুভব বা হালকা আনন্দের জাগরণ হয়। আরও ভালবাসতে বাসতে
ক্রমে আনন্দের স্ফুরণ হতে থাকে যাকে আনন্দের চিৎ অবস্থা বলে। পরিশেষে
আরও গভীর ভালবাসায় ওই জাগরণ নিত্যানন্দ হয়ে সর্বদা অন্তরে বিলাস
করে। এইভাবেই ভগবানের অপ্রাকৃত প্রেম লাভ করে ভক্ত পূর্ণ হয়ে যায়।
আনন্দই হল ভগবানের প্রকৃতি, আনন্দই হল ভগবানের প্রেম। সেইজন্যে
আনন্দকেই হ্লাদিনী শক্তি বলে। এই আহ্লাদ বা আনন্দই হল ভগবানের সাথে
মিলন রসের বিলাস। এটিই কৃষ্ণসুখ বা অতীন্দ্রিয় প্রেম। এই প্রেমে বাহ্য ও
অন্তর ইন্দ্রিয় ভেসে যায় বলেই একে অতীন্দ্রিয় ভালবাসা বলে।
(দিব্যবন্ধু)