Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

Adi Shankara biography in Bengali, all Indian monk biography in Bengali, famous Hindu monk,

                      আচার্য শঙ্করাচার্য 

 


শঙ্করাচার্যের আবির্ভাব হয়েছিল ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে । তখন অন্তর্দ্বন্দ্বে হিন্দু ধর্মের অবস্থা শােচনীয় । হিন্দুধর্ম হয়ে পড়েছে আচারসর্বস্ব । এই সময় শঙ্করাচার্য আবির্ভূত হয়ে হিন্দুধর্মকে অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন । তিনি যে শুধু একজন নিষ্ঠাবান পণ্ডিত এবং আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তা নয় , তার ছিল অতুলনীয় সাংগঠনিক প্রতিভা । তিনি হিন্দুধর্মকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতির শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেন । পরবর্তীকালে ভারতবর্ষে হিন্দুধর্মের জনপ্রিয়তা যে উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে তার অন্তরালে আছেন শঙ্করাচার্য ।। অষ্টম শতাব্দীর শেষ এবং নবম শতাব্দীর প্রথম ভাগ । জৈন এবং বৌদ্ধধর্মের মধ্যে নানা কুসংস্কার প্রবেশ করেছে । অদ্বৈতবাদের ধারা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে । বাহ্য আচার - অনুষ্ঠানকেই মানুষ ধর্মীয় অন্বেষণা বলে ভুল করছে । বেদকে মনে করা হচ্ছে ধর্ম প্রতিপাদক শাস্ত্র । সংক্ষেপে বলা যায় , সনাতন হিন্দুধর্ম তখন গভীর বিপদের সম্মুখীন । এই সময় এলেন শঙ্করাচার্য । তিনি বললেন — ‘ অহং ব্রহ্মাস্মি ’ অর্থাৎ আমি । সেই ব্রহ্ম । সেই সর্ব ব্যাপী , সর্বশক্তিমান ঈশ্বর । জীবের অন্তঃকরণেই পরমাত্মা প্রতি মুহূর্তে প্রতিবিম্বিত হন । শঙ্করাচার্য বলেছিলেন ব্রহ্মা সত্য , জগৎ মিথ্যা । তিনি আরও বলেছিলেন , ' একমেবাদ্বিতীয় অর্থাৎ একটি মাত্র বস্তুই আছে , দুটি নেই । সেই এক সত্তা ভিন্ন ভিন্ন বস্তুতে প্রতিবিম্বিত হয়ে নানারূপে আমাদের কাছে উপলব্ধ হচ্ছেন । কিন্তু বাস্তবিক তিনি এক ও অভিন্ন । আমি বা তুমি বলে কোনাে বিভেদ বা বিভাজন নেই ।  শঙ্করাচার্যের সাধনা নির্গুণ নির্বিশেষ ব্রহ্মের সাধনা । এই ব্রহ্মই একমাত্র পরমার্থ তত্ত্ব । মানুষকে ব্রহ্মের স্বরূপ জানতে হবে । জীবনে তার দাক্ষিণ্য উপলব্ধি করতে হবে । তিনি উপনিষদ এবং ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য রচনা করে বৈদিক জ্ঞানের ধারাকে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । জ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে এক নতুন আলােড়নের সৃষ্টি করেছিলেন । ৭৮৮ খৃষ্টাব্দের বৈশাখী শুক্লা পঞ্চমীতে দাক্ষিণাত্যের কেরল রাজ্যের কালাতি নামের একটি ক্ষুদ্র গ্রামে শঙ্করাচার্যের জন্ম হয় । তার পিতা ছিলেন শিবগুরু এবং মাতা সুভদ্রা বা বিশিষ্টাদেবী । শিবগুরু ছিলেন এক শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত । সারা জীবন ধরে শিবের উপাসনা করে গেছেন । ওই গ্রামে চন্দ্রমৌলীশ্বরের মন্দিরে জাগ্রত শিবলিঙ্গের অবস্থান । একটি পুত্রসন্তানের জন্য সেখানে প্রত্যেকদিন স্বামী এবং স্ত্রী প্রার্থনা করতেন । তাদের আরাধনায় শেষপর্যন্ত শিব সন্তুষ্ট হলেন । একদিন তারা দৈববাণী শুনতে পেলেন — শিব বলছেন , আমি তােমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি । তােমরা এক মহাজ্ঞানী পুত্রসন্তান লাভ করবে । শিবের আশীর্বাদে এই সন্তানের জন্ম হয়েছিল বলে নামকরণ করা হল শঙ্কর । জনশ্রুতি আছে , স্বয়ং মহাদেবই নাকি শঙ্করাচার্য হিসাবে ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন । শৈশব থেকেই শঙ্কর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র । যা একবার শুনতেন , সঙ্গে সঙ্গে তা স্মৃতির আধারে ধরে রাখতে পারতেন । গ্রামের চতুষ্পঠীর শিক্ষক তার অসাধারণ মেধার পরিচয় পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন । পাঁচ - ছয় বছরের মধ্যেই তিনি সর্বশাস্ত্রে বিশারদ হয়ে ওঠেন । সকলের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত গর্বের বস্তু । কিন্তু এই সময় শঙ্করের ভাগ্যাকাশে কালাে মেঘের আবির্ভাব দেখা । গেল । হঠাৎ তার পিতার মৃত্যু হল । ইতিমধ্যে শঙ্করের উপনয়নের কাজ  শেষ হয়ে গেছে । তার নাম এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে । এবার একদল শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত এলেন কালাড়ি গ্রামে । তারা স্মৃতিধর বালক শঙ্করের সাথে শাস্ত্রালাপ করবেন । তারা ভেবেছিলেন , এই বালক বােধহয় শাস্ত্রের কিছুই জানেন না । কিন্তু শঙ্কর যখন শাস্ত্রের একটির পর একটি দুরূহ ব্যাখ্যা সহজ সরলভাবে উপস্থাপিত করতে লাগলেন , তখন তারা । মুগ্ধ এবং বিস্মিত হয়েছিলেন । তারা এবার শঙ্করের মায়ের কাছে গিয়ে তার জন্মকুণ্ডলি দেখতে চাইলেন । সেই জন্মকুণ্ডলি বিচার করে পণ্ডিতরা অত্যন্ত ভীত এবং সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিলেন । তারা বললেন , শঙ্করের আয়ু বেশি নয় , তিনি যােলাে বছর অথবা বত্রিশ বছর বেঁচে থাকবেন । এই কথা শুনে শঙ্করের মা অত্যন্ত দুঃখ পান । আর শঙ্কর তখনই চিন্তা করেন স্বল্পকালীন জীবনে সংসার করে কী লাভ ? আমি অমৃতের সন্ধানে সন্ন্যাস গ্রহণ করব । ওই বালক বয়সেই শঙ্কর সংসার ত্যাগ করে নর্মদা পরিক্রমার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন । এই পরিব্রাজন কালে তিনি মহাযােগী গােবিন্দপাদের নাম শুনেছিলেন । ঋষি পতঞ্জলি নাকি ওই মহাত্মার দেহ আশ্রয় করে আছেন । গােবিন্দপাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য চললেন ওঙ্কারনাথ পাহাড়ের দিকে । ওঙ্কারনাথ গিরিগুহায় এসে গােবিন্দপাদের শরণাপন্ন হলেন । গােবিন্দপাদ শঙ্করকে দেখে তাঁকে শিষ্যরূপে গ্রহণ করলেন । শঙ্কর সেখানে তিন বছর অবস্থান করেছিলেন । গােবিন্দপাদের সার্বিক সহযােগিতায় অসামান্য যােগসিদ্ধি এবং তত্ত্বজ্ঞান লাভ করেন । তার এই তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধি করে আশ্রমের অন্যান্য পণ্ডিতরা অবাক হয়ে যান । গােবিন্দপাদের আদেশে এবার শঙ্কর এলেন হিমালয়ের নিভৃত ধাম বদরিকা আশ্রমে । সেখানে নির্জনে প্রাকৃতিক বাতাবরণের মধ্যে বসে বেদান্ত ভাষ্য প্রভৃতি গ্রন্থ রচনার কাজে মন দিলেন । যােলাে বছর বয়সেই তিনি গ্রন্থ লেখার কাজ শেষ করেন । ইতিমধ্যে বালক শঙ্কর রূপান্তরিত হয়েছেন । আচার্য শঙ্করে । মুণ্ডিত মস্তক , পরণে কৌপীন , হাতে কমণ্ডলু । এই প্রতিভাদীপ্ত তরুণকে দর্শন করার এবং তার জ্ঞান পূর্ণ কথা শােনার জন্য  সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন । সে যুগের বহু বয়স্ক পণ্ডিত তার কাছে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন । শঙ্কর প্রতি মুহূর্তে তার স্বল্পায়ু জীবনের কথা চিন্তা করতেন । তিনি জানতেন , তাঁকে অতি অল্প সময়ের মধ্যে হিন্দুধর্মের পুনরুত্থানের কাজটি শেষ করতে হবে । এবার তিনি শিষ্যদের নিয়ে ভারত পরিভ্রমণে বের হলেন । হিমালয় থেকে কন্যাকুমারিকা এবং দ্বারকা থেকে কামাখ্যা পর্যন্ত । সর্বত্র তার নামে জয় ধ্বনি ঘােষিত হল । তিনি বৌদ্ধ , জৈন এবং দ্বৈতবাদী , তান্ত্রিক সমস্ত পণ্ডিতদের তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করলেন । ভারতবর্ষে আবার অদ্বৈতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত হল । এবার শঙ্কর এলেন কাশীধামে । কাশী ছিল সে যুগের জ্ঞান চর্চার প্রধান কেন্দ্র । দেশ - বিদেশ থেকে অনেক পণ্ডিতবর্গ কাশীতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন । শঙ্করাচার্য তার শিষ্য পদ্মপাদ এবং অন্যান্যদের নিয়ে কাশীতে অবস্থান করেন । সেখানেও তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়কে তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করেন । কাশীতেও অদ্বৈতবাদকে স্থাপন করেন । সন্ন্যাসী এবং সাধুদের সামনে তখন তিনি মহাজ্ঞানী আচার্যদেব নয় , দেবাদিদেব শঙ্করের অবতার রূপে প্রতিভাত । এবার শঙ্কর প্রয়াগধামে এসে বৈদিক জগতের অন্যতম পণ্ডিত কুমারিল ভট্টের সম্মুখীন হলেন । শঙ্করদের কুমারিল ভট্টের কাছে তার অভিশাপের জানালেন । কুমারিল ভট্ট বললেন— “ আমি আপনার নাম শুনেছি । আমি লােকমুখে এও শুনেছি যে , আপনি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী । কিন্তু এখন আমি আপনার সাথে তর্কবিচারে অবতীর্ণ হতে পারব না । কারণ আগেকার সঙ্কল্প অনুযায়ী এখনই আমাকে দেহত্যাগ করতে হবে । তবে আমি বিচারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছি । আমার শিষ্য মণ্ডন মিশ্র , আপনি তার সাথে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হন । যদি তর্কবিচারে সে পরাস্ত হয় তাহলে জানবেন আমিই হেরে গেছি । ” শঙ্করাচার্য এবার ছুটলেন দক্ষিণের মাহিষমতী নগরের দিকে । নর্মদা এবং মহিষমতী নদীর সঙ্গমের কাছে মণ্ডন মিশ্রের ভবন । তিনি এক মহাযাজ্ঞিক এবং ধর্মগুরু । যখন শঙ্করাচার্য সেখানে পৌঁছলেন , তখন তিনি দরজা বন্ধ করে হােম করছিলেন । এই সময় সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না । দ্বারপাল বাধা দিল । কিন্তু যােগবলে শঙ্কর যজ্ঞস্থলে মণ্ডন মিশ্রের সামনে এসে । উপস্থিত হলেন । মণ্ডন মিশ্র তাঁকে আসতে দেখে যথেষ্ট রেগে গিয়েছিলেন । তিনি । শঙ্করের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলেন , এই আগন্তুক এক শক্তিধর রুষ । তখন তিনি তর্কদ্বন্দে রাজী হলেন । ঠিক হল মাহিষমতী নগরে পণ্ডিত সমাজের সামনে তর্কসভার আসর বসবে । বিচারক হবেন তার সহধর্মিণী সারসবাণী । বিচারে যে পরাজিত হবে সে তার ধর্ম পরিত্যাগ করে বিজয়ীর ধর্মমত গ্রহণ করবে । সারসবাণী ছিলেন অসামান্যা মনীষার অধিকারিণী । আঠারাে দিন ধরে উভয়ের মধ্যে তর্কযুদ্ধ চলল । শেষ পর্যন্ত সারসবাণী স্বামীর পরাজয় ঘােষণা করলেন । এই ঘটনায় মাহিষমতী নগরে আলােড়নের সৃষ্টি হল । শর্তানুযায়ী মণ্ডল মিশ্র শঙ্করাচার্যের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন । তাঁর নতুন নামকরণ করা হল সুরেশ্বরাচার্য । পরবর্তীকালে তিনি ভারতের এক অন্যতম বৈদান্তিক সন্ন্যাসী হিসাবে । নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । এবার সারসবাণী শঙ্করাচার্যকে সরাসরি তর্কযুদ্ধে আহ্বান করলেন । তিনি ছিলেন সুচতুরা । তিনি বললেন— “ সন্ন্যাসীপ্রবর , আমাদের তর্কের বিষয়বস্তু হবে কামশাস্ত্র । ” এই কথা শুনে শঙ্কর অবাক হয়ে গেলেন । তিনি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী । কখনাে কোনাে নারীর সংসর্গ করেন নি । তিনি কী কামশাস্ত্র বিষয়ে । আলােচনায় প্রবৃত্ত হবেন । তিনি সারসবাণীর কাছ থেকে কিছুটা সময় প্রার্থনা করলেন । সারসবাণী তার এই অনুরােধ মেনে নিলেন । শিষ্যদের নিয়ে শঙ্কর সেখান থেকে বেরিয়ে গেলেন ।।  হঠাৎ শুনলেন অমরুক নামে এক তরুণ রাজার মৃত্যু হয়েছে । তার মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা হচ্ছে । শঙ্করাচার্য তখন যােগবলে নিজের দেহকে একটি গুহার ভেতরে রাখলেন । তারপর রাজার দেহের ভেতরে প্রবেশ করলেন । তিনি শিষ্যদের আদেশ দিয়েছিলেন ওই মৃতদেহটিকে রক্ষা করতে । মৃত রাজার দেহে প্রাণের সঞ্চারণ ঘটেছে , এই খবর রাজপ্রাসাদে পৌঁছে গেল

 


। বয়ে গেল আনন্দের ঢেউ । রানির সঙ্গে শঙ্করদেবের কামলীলা চলতে থাকল । রানি ছিলেন সুচতুরা , অনুভূতিপ্রবণ এবং বুদ্ধিসম্পন্না । তিনি বুঝতে পারলেন , এই রাজার মধ্যে কোনাে একটি শক্তি ভর করেছে । হয়তাে কোনাে যােগী এই রাজার দেহে প্রবেশ করেছেন । তিনি কিছুতেই রাজাকে চোখের আড়াল করলেন না । এমনকি তিনি তাঁর অনুচরদের নির্দেশ দিলেন শহরের সর্বত্র অনুসন্ধান । করতে , কোথাও কোনাে মৃতদেহ থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তা জ্বালিয়ে দিতে রাজকর্মচারীরা রানির নির্দেশ পালনের জন্য সর্বত্র অনুসন্ধান করতে শুরু করল । শেষ পর্যন্ত তারা ওই বিশেষ গুহাটির সন্ধান পেল । সনন্দন ব্রাহ্মণ ভিখারির বেশ ধরে রাজপ্রাসাদে পৌঁছে গেলেন । রাজার কাছে গিয়ে সব কথা জানালেন । সঙ্গে সঙ্গে শঙ্করদেব যােগবলে । রাজদেহ পরিত্যাগ করে নিজের দেহের ভেতর প্রবেশ করলেন । রাজার দ্বিতীয়বার মৃত্যু হল । চারিদিকে শােকের ছায়া নেমে এল । দৃপ্তভঙ্গিতে শঙ্করাচার্য এলেন মণ্ডন মিশ্রের গৃহে । এবার সারসবাণীর সম্মুখীন হলেন । কামশাস্ত্রে তিনি এখন যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়েছেন । সারসবাণী বুঝতে পারলেন , শঙ্করকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় । তাই তিনি বিনা যুদ্ধে হার স্বীকার করলেন । কয়েকদিন বাদে যােগবলে দেহত্যাগ করেন । মণ্ডন মিশ্র এবং তার বিদুষী স্ত্রীর পরাজয়ের ফলে সমগ্র দক্ষিণ ভারতে শঙ্করাচার্যের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হল । এতদিন পর্যন্ত কর্মকাণ্ডের ধ্যানধারণা অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছিল , এবার সেখানে এল জ্ঞানকাণ্ডের সাধনা । শঙ্করাচার্য বুঝতে পেরেছিলেন , ক্ষয়িষ্ণু হিন্দুধর্মকে রক্ষা করতে হলে কতগুলি সুকঠোর নিয়মনীতি প্রবর্তন করা উচিত । তিনি চারটি স্থানে চারটি মঠ স্থাপন করলেন । দ্বারকাতে স্থাপিত হল সারদা মঠ , পুরী অথবা নীলাচল ধামে গােবর্ধন মঠ , জ্যোতির্বামে যােশী মঠ এবং রামেশ্বরে শৃঙ্গেরি মঠ । তিনি তার শিষ্যদের নামানুসারে দশটি সম্প্রদায় প্রবর্তন করলেন ।  এই দশটি সম্প্রদায়কে বলা হয় দশনামী সম্প্রদায় । তার প্রধান চারজন শিষ্য ছিলেন — পদ্মপাদ , হস্তামলক , সুরেশ্বর এবং ত্রোটক । পদ্মপাদের দুই প্রিয় শিষ্যের নাম তীর্থ ও আশ্রম । হস্তামলকের দুই প্রিয় শিষ্য বন ও অরণ্য । সরস্বতী , পুরী এবং ভারতী নামে সুরেশ্বরের তিনজন প্রিয় শিষ্য ছিলেন । ত্রোতকের তিন প্রিয় শিষ্য ছিলেন গিরি , পর্বত এবং সাগর । এই দশজনের নামে সৃষ্টি হল দশ নামী সম্প্রদায় নামে দশটি সম্প্রদায় । তখন শঙ্করাচার্য শৃঙ্গেরি মঠে বসে দেব আরাধনায় মগ্ন ছিলেন । হঠাৎ মায়ের কণ্ঠস্বর তার কানে প্রবেশ করল । তিনি সন্ন্যাস গ্রহণের সময় মাকে কথা দিয়েছিলেন তার অন্তিমলগ্নে অবশ্যই এসে পৌঁছােবেন । বুঝতে পারলেন , মায়ের এবার মৃত্যুর সময় এসে গেছে । অতি দ্রুত কালাড়ি অভিমুখে যাত্রা করলেন । চব্বিশ বছর বাদে মায়ের সঙ্গে সন্তানের দেখা হল । শঙ্করাচার্যকে দেখে মায়ের দু’চোখে অশ্রু নির্গত হল । শঙ্করাচার্য মায়ের পাশে বসে ভগবানের মহিমা কীর্তন করতে লাগলেন । সেখানে এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি হল । শঙ্করের মা চিরনিদ্রা গ্রহণ করলেন । সংসারের সামান্যতম বন্ধনও ছিন্ন হল । শঙ্করকে তখন আকুল আহ্বানে ডাক দিয়েছে মগ্ন মৈনাক হিমালয় । তার তুষার ধবল শৃঙ্গগুলি হাতছানি দিয়ে শঙ্করকে ডাকছে । সমস্ত পথ পেছনে রেখে শঙ্কর হিমালয় অভিমুখে এগিয়ে গেলেন । উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ ধামে পেঁৗছলেন । সেখানে এসে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় অনেকগুলি দিন কাটালেন । ধ্যানমগ্ন হিমালয়ের কোলে বত্রিশ বছর বয়সে মহাত্মা শঙ্করাচার্য মহাসমাধিতে নিমগ্ন হন । এই স্বল্প সময়সীমার মধ্যে তিনি হিন্দুধর্মের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব এনেছিলেন । তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে হিন্দুধর্মের জয়পতাকা আবার উড্ডীন হল । এছাড়া তিনি ব্রহ্মসূত্র ভাষ্য রচনা করেছেন । আরও অসংখ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ লিখেছেন । শঙ্করাচার্যের সবথেকে বড়াে কৃতিত্ব হল তিনি সাধারণ মানুষদের জন্য সবসময় ভাবনা চিন্তা করতেন । তিনি বিশ্বাস করতেন কাজের মাধ্যমেই আমরা ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারি । ঈশ্বরের আরাধনা করার জন্য সংসার ত্যাগ করে অরণ্য প্রান্তরে প্রবেশ করা উচিত নয় , যার ওপর ভগবান যে কর্ম ন্যস্ত করেছেন , সেই কাজ করার ফাকে ফাকে ঈশ্বরের আরাধনা করতে হয় । এইভাবে শঙ্কর একটি অতি বাস্তবসম্মত সাধন প্রণালীর কথা বলে গেছেন ।

www.yogsiddhi.in

Power by: © YogiKathaOfficial

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.