Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

চরণদাস বাবাজীর রহস্যময় জীবন,charandas babaji biography Bengali, বাঙালি সাধু, Indian monk biography Bengali, all famous sadhu,

 চরণদাস বাবাজী


১২৬০ বঙ্গাব্দের ২৯ চৈত্র । যশাের জেলার নারায়ণ মহকুমার অন্তর্গত । মহিষ খেলা গ্রামে জন্ম হয়েছিল এই মহাসাধকের । তার পূর্বাশ্রমের নাম । ছিল রাইচরণ ঘােষ । বাবা মােহনচন্দ্র ঘােষ এবং মা কনকসুন্দরী ছিলেন । মানুষ । আরও দুটি পুত্রের অকালমৃত্যুতে রাইচরণ মানুষ হলেন পিতামাতার একমাত্র স্নেহের দুলাল হিসেবে । কিন্তু শৈশবেই তিনি পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হন । যখন তার বয়স মাত্র পাঁচ বছর , তখন তার পিতার মৃত্যু হয় । কাকা এবং মায়ের স্নেহে বড়াে হয়ে উঠতে থাকেন । স্নেহশীলা জননীর নানাধরনের গুণ ছােটোবেলা থেকেই তিনি আত্মস্থ । করেছিলেন । ছােটোবেলা থেকেই তিনি সমাজসেবামূলক কাছে নিজেকে নিয়ােগ করেন । বাল্য এবং কৈশাের প্রাচুর্যের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয় । শিক্ষা । জীবন শেষ করে গার্হস্থ্য জীবনে প্রবেশ করেন । স্বর্ণময়ীদেবীর সঙ্গে বিয়ে । হল রাইচরণের । জমিদারের অধীনে সরকার হিসাবে চাকরি গ্রহণ করলেন । নায়েব এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন । পুষ্করিণী খনন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন — প্রতিটি সামাজিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখলেন । কিন্তু সংসার জীবনের ভিত্তি ক্রমশ শিথিল হয়ে এল । দুই পুত্রসন্তানের মৃত্যুর পর পুত্রসন্তান কামনায় আবার দুটি বিয়ে । করেছিলেন তিনি । কিন্তু এই জীবনে তা সফল হল না । তান্ত্রিক বংশের সন্তান রাইচরণ । কুল গুরু শক্তিমান তন্ত্রসাধক । তাঁর কাছ থেকে তান্ত্রিক মতে দীক্ষা গ্রহণ করলেন । একদিন প্রখর মধ্যাহ্নে আহার্য ফেলে উত্তরবঙ্গের পথে ছুটে গেলেন । তাঁর গন্তব্য ভবানীপুরের শক্তিপীঠ । এইসময় রাইচরণ জমিদারের বিভিন্ন অন্যায় হুকুম তামিল করতে পারছিলেন না । তাই হয়তাে এইভাবেই সবকিছু ত্যাগ করলেন । এলেন সরযূতীরের আশ্রমে । দীর্ঘ তপস্যায় নিজেকে পরিচিত করলেন বৈষ্ণব চরণদাস বাবাজী হিসাবে । এবার গুরু শঙ্করানন্দ আদেশ । করেছিলেন — তুমি যে অমৃতের স্বাদ আস্বাদন করেছ তা সর্বজন সমক্ষে উপস্থাপিত করে বেড়াও । এভাবেই তােমার সাধনার সিদ্ধিলাভ হবে । অযােধ্যার পূণ্যভূমি ত্যাগ করে তিনি এলেন নবদ্বীপ ধামে । জয় নিত্যানন্দ জয় বলে গৌরীপুর ধাম নাম সংকীর্তন করতে থাকলেন । জগদানন্দ দাস বাবাজীকে আশ্রমে আশ্রয় দিলেন । তখন তার দিন কাটছে । এক নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব সাধকের মতাে । ধীরে ধীরে শিষ্য সংখ্যা বাড়তে থাকল । নামসংকীর্তনের মধ্যে দিয়ে প্রাণচঞ্চলতার সৃষ্টি করলেন । ভক্তদের সঙ্গে এলেন কালনায় । শ্রীগৌরী । নিত্যানন্দ বিগ্রহের সামনে কীর্তনে হলেন বিভাের । হঠাৎ এক অভাবনীয় ব্যাপার ঘটল । পাঁচ বছরের শিশু গৌরভাবে মত্ত হয়ে দু’হাত তুলে নৃত্য করতে লাগল । তখন শিশুর ভাবােন্মাদ অবস্থা । চরণদাস বাবাজী বুঝতে পারলেন , মহাপ্রভুই শিশুরূপে আবির্ভূত হয়েছেন । অবিরাম নাম গান চলতে লাগল । সমস্ত কালনার মানুষ মেতে উঠলেন । শােনা গেল মৃদঙ্গের ধ্বনি । হরিবােল ধ্বনিতে মুখরিত হল আকাশ - বাতাস । এবার চরণদাস বাবাজী চলেছেন নীলাচলের পথে । সঙ্গে কয়েকজন অনুরাগী ভক্ত ।


 তাঁর সুদীর্ঘ সুঠাম দেহ , আজানুলম্বিত বাহু আর কণ্ঠ নিঃসৃত গান শুনে কৃষ্ণনাম পিপাসু জনপদের মানুষেরা হলেন আহ্লাদিত । দুর্গম পথ অতিক্রম করে এলেন সাক্ষীগােপাল । সেখানকার মন্দিরে আশ্রয় নিলেন । গভীর রাত্রিতে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন , এক মহাপুরুষ বলছেন— “ বাবা , এই মন্ত্র নাও । এটি তুমি নিত্য জপ করবে এবং প্রকৃত অধিকারী ভক্তদের হৃদয়ে এই নামের বীজ বপন করে দেবে । ” দ্বাবিংশ । অক্ষর যুক্ত একটি গৌরমন্ত্র দিয়ে ওই জ্যোতির্ময় পুরুষ কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেলেন । চরণদাস বুঝতে পারলেন , প্রভু নিত্যানন্দের কৃপা ছাড়া এমন ঘটনা । কখনােই ঘটত না । তার মধ্যে নিত্যানন্দের আবেশ হল । পুরীধামের প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল চরণদাস বাবাজীর । যে পুরীতে মহাপ্রভুর জীবনের মহামূল্যবান আঠারােটি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে , সেই পুরী ছিল তার সব থেকে প্রিয় জায়গা । একদিন বৃন্দাবনধামে বসে গৌরাঙ্গের হাতছানি দেখতে পেলেন । অগ্রসর হলেন নীলাচলের পথে , ঝাঝপিঠা মঠ অভিমুখে । জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি নিত্যানন্দ এবং গৌরাঙ্গ — এই দুজনের নামকীর্তন করে বিভাের হয়ে কাটিয়েছেন । একদিন তার জীবনের লীলা শেষ হয়ে গেল । নামব্রতই ছিল তার জীবনের ব্রত । এখনাে হয়তাে শ্রীক্ষেত্রের মানুষ মহাবৈষ্ণব চরণদাস বাবাজীর সুরেলা কণ্ঠের সেই নামধ্বনি শুনতে পান— “ আবার বলাে — হরিনাম , আবার বলাে হরিনাম । ”


Power by © YogiKathaOfficial

www.yogsiddhi.in

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.