Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

ঋষি শ্রীঅরবিন্দ এক মহা জীবন। Sri Aurobindo biography in Bengali,aravinda ghosh Bengali, All Indian monk biography in Bengali, indian monk biography in Bengali, Bengali sadhu,

 ঋষি শ্রীঅরবিন্দ 



তার জীবনকাহিনী শুনলে মনে হয় আমরা বুঝি রূপকথার গল্প শুনছি । এক জীবনে একজন মানুষ এত বিচিত্রমুখী অভিযাত্রায় অংশ নিতে পারেন , তা ভাবলে অবাক হতে হয় বৈকি । পাশ্চাত্য ভাবধারায় দীক্ষিত পিতার সন্তান হিসাবে ইংল্যাণ্ডে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য । মনের মধ্যে ছিল স্বদেশ চিন্তার চেতনা । শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে ভারতে ফিরে এলেন , যােগ দিলেন প্রশাসনিক কাজে । তারপর ? সশস্ত্র আন্দোলনের অন্যতম ধারক ও বাহক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেন প্রকাশিত হল তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা । লেখনীর মাধ্যমে জনগণকে উজ্জীবিত করলেন । কারারুদ্ধ অবস্থায় ঈশ্বরানুভূতি লাভ করে সর্বস্ব ত্যাগ করে এলেন পণ্ডিচেরীতে । স্থাপন করলেন বিশ্বধর্ম সমন্বয়ের মহাকেন্দ্র । আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমি কোন মহামনীষীর কথা বলছি । তিনি হলেন ঋষি অরবিন্দ । কলকাতা মহানগরীর ৮ , শেক্সপীয়ার সরণীতে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের । ১৫ আগস্ট তার জন্ম হয় । বাবা ডাক্তার কৃষ্ণধন ঘােষের তৃতীয় পুত্র ছিলেন তিনি । মায়ের নাম স্বর্ণলতাদেবী । মা ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিভাধর নেতা এবং ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ঋষি রাজনারায়ণ বসুর কন্যা । তাঁদের আদি নিবাস ছিল কোন্নগর গ্রামে । বিলেত থেকে এম . ডি , ডিগ্রি লাভ করে দেশে ফিরলেন কৃষ্ণধন । কোন্নগর গ্রামের নেতারা তাকে প্রায়শ্চিত্ত করার বিধান দিলেন । তিনি এই কুসংস্কারের কাছে মাথা নিচু করলেন না । কোন্নগর ত্যাগ করে চলে এলেন কলকাতায় কৃষ্ণধনের চরিত্রের মধ্যে ছিল মাধুর্য এবং দৃঢ়চিত্ততা , তা সঞ্চারিত হয়েছিল পুত্র অরবিন্দের মধ্যে । কৃষ্ণধন তার তিন পুত্রকে বালক অবস্থায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লন্ডনে । তিনি চেয়েছিলেন তার পুত্ররা যেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠেন । অরবিন্দকে প্রথমে দার্জিলিং - এর সেন্ট পলস্ স্কুলে পড়তে পাঠানাে হয় । সাত বছর বয়সে এলেন লন্ডনে । ইংল্যান্ডে ছিলেন চোদ্দ বছর । তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ছাত্র । প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি লাভ করেন । ভর্তি হন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত কিংস কলেজে । তখন থেকেই তার মনে দেশপ্রেমের ধারণার জন্ম হয়েছিল । পিতা চেয়েছিলেন পুত্র আই . সি . এস . হয়ে দেশে ফিরবেন । অরবিন্দ এই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন । তখন ভারতীয় প্রবাসী । ছাত্রদের ‘ মজলিস ’ নামে একটি আলােচনা সভা ছিল । এই সভায় অরবিন্দ যােগ দিলেন । চিত্তরঞ্জন দাশও সেখানে যােগ দিয়েছিলেন । ব্যারিষ্টারি অধ্যায়নরত অরবিন্দ একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা দেবার জন্য ব্রিটিশ রাজের কুনজরে পড়লেন যুক্ত হলেন লােটাস অ্যান্ড ড্যাগার — নামে একটি গুপ্ত বৈপ্লবিক সংগঠনের সঙ্গে । ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান দখল করলেন । কিন্তু ঘােড়ার চড়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলেন না । অনেকে বলেন , পাছে ব্রিটিশের গােলামি করতে হয় তাই অরবিন্দ ইচ্ছে করেই এই পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছিলেন আই . সি . এস . পড়ার সময় বঙ্কিমচন্দ্রের ‘ আনন্দমঠ ' পাঠ করেন । এই বই তাঁর বৈপ্লবিক চিন্তার স্ফুরণ ঘটায় । ১৮৯২ সালে ক্লাসিক্স ট্রাইপস পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হলেন । তিনি ছিলেন বহু ভাষাবিদজানতেন ফরাসি , জার্মান , ইংরাজি , গ্রিক , ল্যাটিন , রাশিয়ান , হিব্রু ও সংস্কৃত ভাষা । আই . সি . এস . পরীক্ষায় অরবিন্দ অকৃতকার্য হয়েছেন এই সংবাদ শুনে তাঁর পিতার মৃত্যু হয় । ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে বরােদা এস্টেটে চাকরি নিয়ে অরবিন্দ ভারতে এলেন । মহারাজা তাকে বরােদা কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত করলেন । ১৯০১ সালে ভূপালচন্দ্র বসুর কন্যা মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে অরবিন্দের বিয়ে হয় । বরােদায় থাকার সময় হিন্দি ও মরাঠা ভাষা শেখেন । লােকচক্ষুর আড়ালে থেকে বৈপ্লবিক সাধনায় নিজেকে নিয়ােগ করেন । আনন্দমঠের অনুকরণে ভবানী মন্দির - এর পরিকল্পনা করলেন । তিনি চেয়েছিলেন দেশের তরুণ এবং যুবকরা এই মন্দিরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন । তাঁদের কাজ হবে সমাজ সেবা করা এবং দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মােচনের জন্য চেষ্টা করা । মহারাষ্ট্রীয় যােগী বিষ্ণু ভাস্কর লেলের কাছ থেকে যােগক্রিয়া পদ্ধতি শিক্ষা করলেন । এইভাবেই তিনি হয়তাে ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলেন । তাই পরবর্তীকালে বিপ্লবীদের দীক্ষা গ্রহণের সময় বলেছিলেন — এক হাতে গীতা , অপর হাতে তলােয়ার নিয়ে দীক্ষা গ্রহণ করতে হবে । ১৯০২ সালে বরােদায় নিবেদিতার সঙ্গে শ্রী অরবিন্দের যােগাযােগ । হল । নিবেদিতা অরবিন্দকে বলেছিলেন — কলকাতা আপনাকে চায় , আপনার উপযুক্ত স্থান হল বাংলাদেশ । ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাদেশিকতার আগুন জ্বলে উঠল । অরবিন্দ আর স্থির থাকতে পারলেন না । চলে এলেন । বাংলাদেশে । বঙ্গীয় জাতীয় কলেজ স্থাপনের জন্য এক লক্ষ টাকা দান করলেন ওই কলেজে অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করলেন । তারপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরােধ দেখা দিল । ১৯০৭ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেন । এই সময় বিপিনচন্দ্র পাল বন্দেমাতরম্ ' নামে ইংরাজী পত্রিকা প্রকাশ । করতে শুরু করেছেন । অরবিন্দকে তিনি ডাক দিলেন । অরবিন্দ এই পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেন । কংগ্রেসের মধ্যে যেসব প্রগতিশীল যুবক ছিলেন , তাদের সংযুক্ত করা হল । অগ্নিস্পর্শী ভাষায় প্রবন্ধ লিখে ব্রিটিশ সরকারের সমালােচনা করতে লাগলেন ।  অরবিন্দ এবং লােকমান্য তিলকের নেতৃত্বে ভারতীয় যুবকদল নতুন করে উদ্দীপিত হলেন । সে যুগে জাতীয় আন্দোলনের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি স্বায়ত্ত শাসনের কথা বলেছিলেন । অরবিন্দ কিন্তু স্বরাজ্যের বাণী ঘােষণা করলেন । সুরাট কংগ্রেসে জাতীয় দলের সঙ্গে নরমপন্থীদের সংঘর্ষ হল জাতীয় দলের সভায় সভাপতি হলেন অরবিন্দ । সুরাট থেকে কলকাতা ফেরার পথে নানা জায়গাতে । জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন । ইংরেজ সরকার তাকে এক বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসাবে ঘােষণা করল । বন্দেমাতরম্ কাগজে রাজদ্রোহমূলক প্রবন্ধ লেখার জন্য তাকে ১৯০৭ সালের ২৭ জুন কারারুদ্ধ করা হল রবীন্দ্রনাথ বললেন — অরবিন্দ রবীন্দ্রের লহ নমস্কার । শেষ পর্যন্ত সরকার প্রমাণ করতে পারল না যে , অরবিন্দই ওই পত্রিকার সম্পাদক । ১৯০৮ সালে ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকি কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে মিসেস কেনেডি এবং তার কন্যাকে হত্যা করলেন । প্রফুল্ল চাকি ধরা পড়ে নিজের রিভলবার দিয়ে আত্মহত্যা করলেন । বিচারে । ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসির হুকুম হল । এই সূত্রে অরবিন্দকে কারারুদ্ধ করা হল । অরবিন্দের বিচার চলে দীর্ঘ এক বছর ধরে ১৯০৯ সালের মে মাসে । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বাগ্মীতায় তিনি মুক্তি পেলেন । এবার শুরু হল তার জীবনের আর এক অধ্যায় । আলিপুরে নির্জন কারাগারে বসে তিনি অধ্যাত্ম জীবনের সন্ধান পেলেন । তিনি বুঝতে পারলেন যে , মানুষের মধ্যে একটা দর্শন অভিলাষ ক্রিয়া করছে । দিব্য চেতনায় উদ্বুদ্ধ হলেন । ছিলেন অধ্যাপক , সাংবাদিক , বিপ্লবী নেতা , এবার হলেন ঋষি অরবিন্দ । কারাগার থেকে বেরিয়ে অধ্যাত্ম জীবনকেই অবলম্বন করলেন । ইংরাজিতে ‘ কর্মযােগীন ’ আর বাংলায় ‘ ধর্ম ' নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশন  করতে থাকলেন । ইংরেজ সরকার সিদ্ধান্ত নিলেন , অরবিন্দকে আবার জেলখানায় পাঠাতে হবে । নিবেদিতা মারফত এই খবর পৌঁছে গেল তার কাছে । তিনি ১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চলে এলেন ফরাসি অধিকৃত চন্দননগরে । সেখানে দেড়মাস ছিলেন । সব সময় যােগাসীন অবস্থায় থাকতেন । ১৯১০ সালের ৪ এপ্রিল পন্ডিচেরির পথে যাত্রা শুরু করলেন । রাজনীতির জগৎ থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়ে যােগসিদ্ধ ঋষি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন । ( তার জীবনে এক আশ্চর্য রূপান্তর ঘটে গেল । ১৯১৪ সালের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত হল ‘ আর্য ’ পত্রিকা । এই পত্রিকার মাধ্যমে অরবিন্দ তার জ্ঞানদৃপ্ত বুদ্ধিমত্তাকে চার দিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন । ধর্ম , দর্শন , রাজনীতি , সমাজনীতি থেকে শুরু করে মানব মনীষার প্রতিটি বিষয় তার লেখনীর স্পর্শে আলােকিত হয়ে উঠল । ফরাসি কূটনৈতিক এবং লেখক মসিয়ে পল রিচার্ড এবং মিসেস মীরা রিচার্ড পণ্ডিচেরীতে এলেন । তারা অরবিন্দকে দেখে এক মহাত্মা যােগপুরুষ হিসাবে চিহ্নিত করলেন । স্ব - ইচ্ছায় আর্য পত্রিকার সংস্করণ প্রকাশের দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা দেশে ফিরে যান , আবার ভারতে আসেন ১৯২০ সালে । মিস্টার রিচার্ড দেশে গেলেন , কিন্তু মিসেস মীরা রিচার্ড হলেন আলােকময়ী শ্রীমা । শ্রীমা আশ্রম পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর অরবিন্দ বাইরের জগতের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন । বছরে মাত্র তিনদিন মানুষের সামনে আসতেন ।। অরবিন্দ বিশ্বাস করতেন , জীবনের মধ্যে ভগবত সত্তাকে নামিয়ে আনতে হবে । The Life Divine ' গ্রন্থ রচনা করে তার দার্শনিক তত্ত্বের কথা বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে বললেন । এইভাবে তিনি সমস্ত বিশ্ববাসীর কাছে এক নতুন দার্শনিক সত্তা তুলে ধরলেন । এই ঋষিকল্প মহাযােগী ১৯৫০ সালের ৫ ডিসেম্বর পণ্ডিচেরী আশ্রমেই মহাসমাধিতে নিমগ্ন হলেন । কোনাে কৃত্রিম উপায় ছাড়াই তার পঞ্চভৌতিক দেহ তিনদিন অবিকৃত অবস্থায় থাকে ।

Power by: © YogiKathaOfficial

                   www.yogsiddhi.in

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.