Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

গৌতম বুদ্ধ। गौतम बुध के जीवन। Gautam Buddha Biography Bengali। All Indian monk biography,

 গৌতম বুদ্ধ 



সন্ত্রাসদীৰ্ণ পৃথিবীতে আমরা এখনও গৌতম বুদ্ধকে পরম শ্রদ্ধাসহকারে স্মরণ করে থাকি । আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে কপিলাবস্তুতে দেবমানব বুদ্ধদেবের আবির্ভাব হয় । আজকের কোহানাই পুরাকালের কপিলাবস্তু । আজ আর সেই রাজকীয় বৈভব নেই । শুধু পড়ে আছে । তার ব্যথার্ত স্মৃতি চিহ্নগুলি । এই কপিলাবস্তু ছিল গৌতমবুদ্ধের পিতা রাজা শুদ্ধোধনের রাজধানী । শুদ্ধোধন ছিলেন শাক্যবংশীয় রাজা । সূর্যবংশীয় ইাকু রাজ যে বংশ সৃষ্টি করেছিলেন , তার একাংশ থেকে এই শাক্যবংশের উৎপত্তি হয় । আগে শাক্যজাতি , নেপালের তরাই অঞ্চলে তিলৌরাকোটে বসবাস করতেন । কপিলমুনির নামানুসারে রাজধানীর নাম রাখা হয় কপিলাবস্তু । প্রধান রানি মায়াদেবী ছিলেন কোলবংশীয় । কোনাে এক পরিত্যক্তা । শাক্যকন্যার গর্ভে ঋষি কোলের ঔরসে এই বংশের মূলপুরুষের আগমন ঘটেছিল । তাই এই বংশের নামকরণ করা হয় কৌলীয় বংশ । মায়াদেবী হলেন শাক্যমুনি বা বুদ্ধদেবের গর্ভধারিণী জননী । বিয়ের পর এগারাে বছর কেটে গেছে , শুদ্ধোধন কোনাে পুত্রসন্তান লাভ করতে পারেননি । তাই রাজপ্রাসাদের সর্বত্র বিরাজ করছে বিষন্ন শােকবিহ্বল পরিবেশ । হঠাৎ একদিন গভীর নিশীথে মায়াদেবী এক অপূর্ব স্বপ্ন দেখলেন , তিনি দেখলেন একটি সাদাবর্ণের হাতি তার উদরে প্রবেশ করছে । রাজজ্যোতিষীরা মায়াদেবীর স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনলেন । তাঁরা বললেন , মহারাজার ঘরে এক মহাপুরুষের আবির্ভাব হতে চলেছে । জ্যোতিষীদের এই ভবিষ্যৎবাণী শুনে মহারানি আনন্দে আত্মহারা হলেন । শুদ্ধোধনের দুটি চোখ আনন্দাশ্রুতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল । সপ্তাহ কেটে গেল , অতিক্রান্ত হল মাস , এল এক নতুন বছর । বৈশাখী পূর্ণিমায় পিত্রালয়ে যাবার পথে লুম্বিনী উপবনে মায়াদেবীর গর্ভ থেকে এক দিব্যশিশুর আবির্ভাব হল । খ্রি . পূ . ৬২৩ অব্দে অথবা খ্রি . পূ . ৫৬৪ অব্দে বুদ্ধের জন্মগ্রহণ হয়েছিল । এই সুসংবাদ শুনে নবজাত শিশুকে উপবন থেকে রাজঅন্তঃপুরে । নিয়ে আসা হল । শিশু জন্মের সপ্তম দিনে আবার একটি ভয়ঙ্কর শােক । বিহ্বল ঘটনা ঘটে গেল । মায়াদেবী ইহকাল থেকে চিরবিদায় নিলেন । রাজা শুদ্ধোধন সদ্যজাত শিশুটির মুখের দিকে চেয়ে এই নিদারুণ শােক সংবরণ করলেন । শিশু জন্মগ্রহণ করায় রানি এবং রাজার সমস্ত কামনা সিদ্ধ হয়েছিল বলে তার নাম রাখা হল সর্বার্থসিদ্ধ । সর্বার্থসিদ্ধ থেকেই সংক্ষেপে সিদ্ধার্থ । মায়াদেবীর মৃত্যুর পর নবজাত শিশুর লালনপালনের দায়িত্ব অর্পিত হল রানির ভগিনী এবং রাজা শুদ্ধোধনের দ্বিতীয়া পত্নী । মহাপ্রজাপতি গৌতমীর ওপর । তিনি আন্তরিক স্নেহে শিশুটিকে লালন পালন করতে থাকেন । তাই শিশুটির আরেকটি নামকরণ করা হয় । গৌতম । রাজার অনুরােধে আটজন ব্রাহ্মণ এসে এই নবজাত শিশুটির ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন । তারা বিচার করে মন্তব্য করলেন , ভবিষ্যতে ইনি একজন সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী হবেন । গণনার ফলাফল শুনে রাজা খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন । ধীরে ধীরে দিন কাটতে থাকে , শিশু গৌতমের শৈশব ও বাল্যলীলার অবসান হয় । এখন তিনি এক কিশাের । রাজা শুদ্ধোধন তার কিশাের পুত্র সিদ্ধার্থকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুগৃহে পাঠালেন । তিনি সর্বশাস্ত্রবিদ ব্রাহ্মণ সর্বমিত্রের কাছে গিয়ে ব্যাকরণ এবং বেদ শিক্ষা করতে থাকলেন । গৌতমের মেধা ও প্রতিভার পরিচয় পেয়ে আচার্যদেব মুগ্ধ হয়েছিলেন । সেযুগের সমাজে নানা কুসংস্কারের আবির্ভাব ঘটে । মানুষ । বেদ - উপনিষদের তত্ত্ব একেবারে ভুলে গিয়েছিল । কিশাের বয়সেই সিদ্ধার্থ দেশের সামাজিক বিধি - বিধানের এবং ধর্মীয় অচার - আচরণের কথা চিন্তা করলেন । তিনি ভাবলেন কী করে মানুষকে এই অন্ধকার জগৎ থেকে উদ্ধার করা যায় । তাই সুযােগ পেলেই তিনি রাজপ্রাসাদের বাইরে কোনাে এক নির্জন প্রান্তরে গিয়ে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে থাকতেন । আসলে দৈনন্দিন জীবনের এই বিলাস এবং কামনা চরিতার্থতা তাকে বিরক্ত করেছিল । একদিন ধ্যান করতে করতে তিনি সমাধিস্থ হয়ে পড়লেন । এই অবস্থার কথা রাজ - অন্তঃপুরে ছড়িয়ে পড়ল । রাজা এলেন পুত্রের কাছে । পুত্রের মুখ মণ্ডলে তখন এক অলৌকিক আভার বিচ্ছুরণ চোখে পড়ল । রাজা শুদ্ধোধন বুঝতে পারলেন , তার সন্তানের মধ্যে বৈরাগ্য লক্ষণ দেখা দিয়েছে । কিছুক্ষণ বাদে সিদ্ধার্থের ধ্যান ভঙ্গ হল । তিনি পিতাকে দেখে লজ্জিত হয়ে তার সঙ্গে রাজপ্রাসাদে ফিরে এলেন । সেই সময় সিদ্ধার্থের চরিত্রে বেশ কতকগুলি গুণ প্রকট হয়ে ওঠে । তিনি সকলকে ভালােবাসার বাঁধনে বাঁধতে চেয়েছিলেন । তার মধ্যে ছিল সর্ব জীবে দয়া , স্নেহ এবং মমতা । তার জীবনের ছােট্ট একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের পথ চলা নির্দিষ্ট হল । একদিন কিশাের সিদ্ধার্থ একটি উপবনে নির্জনতার মধ্যে বসেছিলেন । হঠাৎ একটি আহত রক্তাক্ত শরবিদ্ধ পাখি তার পায়ের কাছে এসে পড়ল । পাখিটির এই অবস্থা দেখে সিদ্ধার্থ খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন । তিনি পাখিটিকে বুকে তুলে নিয়ে বিদ্ধ বানটি তুলে ফেলার চেষ্টা করলেন । তারপর ঝরনার জলে তার রক্তসিঞ্চন বন্ধ । করলেন । পাখিটি সিদ্ধার্থের মুখের দিকে তাকাল । সর্বশাস্ত্রবিদ ব্রাহ্মণ সর্বমিত্রের কাছে গিয়ে ব্যাকরণ এবং বেদ শিক্ষা করতে থাকলেন । গৌতমের মেধা ও প্রতিভার পরিচয় পেয়ে আচার্যদেব মুগ্ধ হয়েছিলেন । সেযুগের সমাজে নানা কুসংস্কারের আবির্ভাব ঘটে । মানুষ বেদ - উপনিষদের তত্ত্ব একেবারে ভুলে গিয়েছিল । কিশাের বয়সেই সিদ্ধার্থ দেশের সামাজিক বিধি - বিধানের এবং ধর্মীয় অচার - আচরণের কথা চিন্তা করলেন । তিনি ভাবলেন কী করে মানুষকে এই অন্ধকার জগৎ থেকে উদ্ধার করা যায় । তাই সুযােগ পেলেই তিনি রাজপ্রাসাদের বাইরে কোনাে এক নির্জন প্রান্তরে গিয়ে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বসে । থাকতেন । আসলে দৈনন্দিন জীবনের এই বিলাস এবং কামনা । চরিতার্থতা তাকে বিরক্ত করেছিল । একদিন ধ্যান করতে করতে তিনি সমাধিস্থ হয়ে পড়লেন । এই অবস্থার কথা রাজ - অন্তঃপুরে ছড়িয়ে পড়ল । রাজা এলেন পুত্রের কাছে । পুত্রের মুখ মণ্ডলে তখন এক অলৌকিক আভার বিচ্ছুরণ চোখে পড়ল । রাজা শুদ্ধোধন বুঝতে পারলেন , তার সন্তানের মধ্যে বৈরাগ্য লক্ষণ দেখা দিয়েছে । কিছুক্ষণ বাদে সিদ্ধার্থের ধ্যান ভঙ্গ হল । তিনি পিতাকে দেখে লজ্জিত হয়ে তার সঙ্গে রাজপ্রাসাদে ফিরে এলেন । সেই সময় সিদ্ধার্থের চরিত্রে বেশ কতকগুলি গুণ প্রকট হয়ে ওঠে । তিনি সকলকে ভালােবাসার বাঁধনে বাঁধতে চেয়েছিলেন । তার মধ্যে ছিল সর্ব জীবে দয়া , স্নেহ এবং মমতা । তার জীবনের ছােট্ট একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনের পথ চলা নির্দিষ্ট হল । একদিন কিশাের সিদ্ধার্থ একটি উপবনে । নির্জনতার মধ্যে বসেছিলেন । হঠাৎ একটি আহত রক্তাক্ত শরবিদ্ধ পাখি । তার পায়ের কাছে এসে পড়ল । পাখিটির এই অবস্থা দেখে সিদ্ধার্থ খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন । তিনি পাখিটিকে বুকে তুলে নিয়ে বিদ্ধ বানটি তুলে । ফেলার চেষ্টা করলেন । তারপর ঝরনার জলে তার রক্তসিঞ্চন বন্ধ করলেন । পাখিটি সিদ্ধার্থের মুখের দিকে তাকাল ।হঠাৎ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন তার খেলার সাথী দেবদত্ত । তিনি পাখিটিকে দাবি করলেন । কারণ পাখিটা তারই শরে বিদ্ধ হয়েছে । এবার দৃঢ়কণ্ঠে সিদ্ধার্থ বললেন— “ না ভাই , তােমাকে পাখিটা দেওয়া হবে না । যে শরাঘাতে তাকে হত্যা করে , সেকি প্রকৃত দাবিদার ? নাকি যে তার প্রাণ বাঁচায় সেই পাখিটিকে তার কাছে রাখবে ? ” তারা গেলেন রাজপুরােহিতের কাছে বিচারের জন্য । শেষ পর্যন্ত রাজপুরােহিত সিদ্ধার্থের হাতেই পাখিটাকে তুলে দিয়েছিলেন । কিশাের সিদ্ধার্থের বয়স তখন উনিশ বছর , পিতা শুদ্ধোধন পুত্রের বৈরাগ্যভাব দূর করার জন্য ঠিক করলেন তার বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে । এক শুভ দিনে দণ্ডপাণিশাক্যের রূপবতী কন্যা যশােধরা বা গােপার সঙ্গে সিদ্ধার্থের বিয়ে হল । রাজা শুদ্ধোধন নিশ্চিন্ত হলেন । দিনে দিনে তার মনে বৈরাগ্যভাব তীব্র হয়ে ওঠে । একদিন জরাগ্রস্ত এক বৃদ্ধকে রাজপথে দেখতে পেলেন , দেখতে পেলেন কঠিন রােগে । আক্রান্ত একটি মানুষকে , তারপর একটি মৃতদেহাকেও দেখলেন । তিনি বুঝতে পারলেন জরা , ব্যাধি এবং মৃত্যুর হাত থেকে কোনাে মানুষের । পরিত্রাণ নেই । এই জীবনের প্রান্তে আছে মৃত্যুর বিভীষিকা । তিনি ভাবতে লাগলেন , অহেতুক সংসারের মধ্যে থেকে আমরা কি কোনাে নিত্য পদার্থের সন্ধান করতে পারি ? কোথায় সেই পথ ? কোথায় গেলে । সেই চরম কাঙ্খিত পথের সন্ধান পাব ? এমন মানসিক অবস্থায় হঠাৎ রথে ভ্রমণরত অবস্থায় এক শান্ত সৌম্য মূর্তির মানুষকে দেখতে পেলেন । তার হাতে কমণ্ডলু , সর্বাঙ্গে বিভূতি ভূষিত , মুগ্ধ অভিভূত সিদ্ধার্থ জিজ্ঞেস করলেন সারথি ছন্দককে— “ ইনি কে ? ’ ছন্দক বললেন— “ কুমার , ইনি একজন সন্ন্যাসী । করেছেন । ” তিনি বিষয় বাসনা পরিত্যাগ করে ভগবানের চিন্তায় নিজেকে উৎসর্গ । সিদ্ধার্থ বুঝতে পারলেন , তাকে সন্ন্যাস গ্রহণ করতে হবে । এতদিন বাদে তিনি সত্যিকারের পথের সন্ধান পেয়েছেন । দশ বছর সংসারাশ্রমে থাকার পর হঠাৎ রাত্রি নিশীথে সিদ্ধার্থ গৃহত্যাগ করলেন । পুষ্যানক্ষত্রের রাত্রি তৃতীয় প্রহর । চারপাশ নৈঃশব্দ্যে ভরা । তার স্ত্রী গােপা শিশুপুত্র রাহুলকে বুকে জড়িয়ে শান্তিতে ঘুমােচ্ছে । নিঃশব্দে শয্যা পরিত্যাগ করে সিদ্ধার্থ উঠে দাঁড়ালেন । দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । দেখতে পেলেন তার স্ত্রী এবং শিশুপুত্রকে । শেষবারের মতাে তাকালেন তাদের মুখের দিকে । তারপর ? তারপর পিতামাতার উদ্দেশে প্রণাম জানিয়ে ঊনত্রিশ বছরের যুবা পুরুষ সিদ্ধার্থ সংসার জীবন ত্যাগ করলেন । আগে থেকেই সারথি ছন্দককে বলা ছিল । তার অশ্ব কন্টককে নিয়ে আসা হল । সারারাত ধরে চলে অনােমা নদীর তীরে এসে অশ্ব উপস্থিত হল । সেখানে সিদ্ধার্থ তার মূল্যবান পােশাক পরিত্যাগ করলেন । তিনি পরিব্রাজকের বেশ ধারণ করলেন । তারপর সারথিকে বিদায় দিলেন । সিদ্ধার্থ এলেন বৈশালী নগরে । লিচ্ছবি ক্ষত্রিয়রা এই নগরটি শাসন করত । এটি ছিল জ্ঞান - বিজ্ঞানের প্রধান কেন্দ্র । তিনি এসে ঋষি আড়ার কালামের আশ্রয় নিলেন । তার কাছ থেকে ধ্যান এবং সাধন প্রক্রিয়া । শিক্ষা লাভ করলেন । কিন্তু এতাে লৌকিক শিক্ষা । তিনি ভাবলেন । লােকোত্তর শিক্ষা কোথায় পাওয়া যাবে ? তিনি রাজগৃহের পথে যাত্রা করলেন । রাজগৃহ ছিল নৃপতি বিম্বিসারের রাজধানী । রাজপথে হঠাৎ একদিন সম্রাট বিম্বিসার এই । তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে বললেন— “ আপনি কেন কঠোর সন্ন্যাসীর ব্রত গ্রহণ করেছেন ? দয়া করে আসুন , আচার্য হিসাবে আমার প্রাসাদে সুখে শান্তিতে থাকুন । ” সেদিন মৃদু হেসে সিদ্ধার্থ বলেছিলেন— “ সম্রাট , যে পরম বস্তু লাভের জন্য আমি স্বেচ্ছায় সংসার ত্যাগ করেছি , তা না পাওয়া পর্যন্ত কীভাবে নিরস্ত হই ? ” রাজগৃহে এসে তিনি আচার্য রুদ্রকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন । পাণ্ডব পাহাড়ের নিভৃত গুহায় কঠোর তপশ্চর্যায় ব্রতী হলেন । কিন্তু সত্য তখনও লাভ হল না । এবার সিদ্ধার্থ প্রব্রজ্যার পথে বের হলেন । গয়ার দিকে যাত্রা । করলেন । এসে উপস্থিত হলেন উরুবি গ্রামে । গ্রামের অদূরেই নৈরঞ্জনা নদী প্রবাহিত । সেখানে স্নান করে তপস্যায় নিমগ্ন হলেন । তিনি ভাবলেন , কী করে পরম জ্ঞান লাভ করা যায় ? এইভাবে সুদীর্ঘ ছয় বৎসর কাল কঠোর তপস্যা করে সুকুমার দেহকে কঙ্কালসার করলেন । কঠোর কৃচ্ছসাধনের ফলে তার শরীর দুর্বল হয়ে গেল । এবার তিনি মধ্যপথ গ্রহণ করলেন । সামান্য আহার্য এবং পানীয় গ্রহণ করতেন । আবার একটি বটবৃক্ষের নীচে আসন রচনা করে তপস্যায় নিমগ্ন হলেন । উরুবি গ্রামের কয়েকজন ভক্তিমতী রমণী এই সময় তাকে আহার্য সরবরাহ করত । ধীরে ধীরে সিদ্ধার্থ জ্ঞান ও সমাধির এক একটি স্তর অতিক্রম করলেন । শেষ অবধি তিনি মহাজ্ঞান লাভ করলেন । তার সমস্ত দেহ জ্যোতির্ময় হয়ে উঠল । সাধক হলেন তথাগত , অর্থাৎ যে পথে গমন করলে নির্বাণের পরম অবস্থা লাভ হয় , সেই পথের পথিক হলেন । তিনি হলেন বুদ্ধ , অর্থাৎ বােধি বা পরম জ্ঞান লাভ করলেন । এবার গৌতমবুদ্ধ স্থির করলেন তিনি এই জ্ঞান সাধারণ মানুষের কল্যাণে বিতরণ করবেন । এলেন ভারতের ধর্মীয় আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র বারাণসী ধামে শহরের অনতিদূরে মৃগদাবে এসে আসন পাতলেন । এই স্থানটি পরবর্তীকালে সারনাথ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে । এখানে সম্রাট অশােক এক চৈত্য নির্মাণ করেছিলেন । তার সাধনার কথা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ল । অনেকে তার আশ্রয় গ্রহণ করলেন । তিনি বললেন , যাগযজ্ঞ হােম কিছু করা উচিত নয় । মাতাপিতার সেবা করা হল পরমধর্ম । পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে । দীন - দুঃখীকে সুখী করতে হবে । শ্রদ্ধা , বিনয় , সন্তোষ , কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে । বুদ্ধদেব তার পঞ্চশিষ্যকে নবধর্মে দীক্ষিত করলেন । তাদের পাঠালেন বিভিন্ন দিকে নতুন বাণীপ্রচারের জন্য । তখন ভারতের আধ্যাত্মিক জীবনে দেখা দিয়েছে কলুষতা । সাধারণ মানুষ অদ্বৈতবাদ আলােচনা করতে পারছে না । বুদ্ধদেব সহজ সরল ভাষায় তার ধর্মের কথা সকলকে বুঝিয়ে বললেন । মগধরাজ বিম্বিসার এবং কোশলের অধিপতি প্রসেনজিৎ তার শিষ্যত্ব । গ্রহণ করলেন । এমনকী মগধের খ্যাতনামা দার্শনিক পণ্ডিত কাশ্যপ ও আচার্য সজ্ঞয়ের শিষ্য সারিপুত্র ও মৌদগল্যায়নও তার শিষ্যত্ব গ্রহণ । করেন । বােধিত্ব লাভের পর দীর্ঘ পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে গৌতমবুদ্ধ তার নব্যধর্ম প্রচার করেছিলেন । তিনি বছরের আট মাস দেশে দেশে পর্যটন করে ধর্মপ্রচার করতেন , আর বর্ষাকালের চারমাস মঠে অবস্থান করতেন । তিনি ছিলেন অক্লান্ত কর্মী । ধীরে ধীরে তার অনুগামীদের সংখ্যা বাড়তে লাগল । পুত্রকে দর্শন করার জন্য রাজা শুদ্ধোধন রাজগৃহে আটজন দূতকে পাঠালেন । বুদ্ধের উপদেশের প্রভাবে দূতেরা সকলেই বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করলেন । অনেকেই বুদ্ধের সঙ্গে সেখানেই থেকে গেলেন । মাত্র দুজন । কপিলাবস্তুতে ফিরে এলেন । অবশেষে একদিন গৌতম বুদ্ধ এলেন তার জন্মভূমি কপিলাবস্তুতে । তিনি রাজবাটীতে না থেকে পিতার তৈরি করা মঠে অবস্থান করতে লাগলেন । হাজার হাজার মানুষ তাকে দেখার জন্য এবং তার মুখনিঃসৃত অমৃতবাণী শ্রবণ করার জন্য ছুটে এলেন । হাতে ভিক্ষাপাত্র , মুণ্ডিত কেশ , এই অবস্থায় সিদ্ধার্থকে দেখে পিতা শুদ্ধোধন কেঁদে ফেললেন । গৌতমী এবং অন্য ভাইরা ও রাজপরিবারের । সকলে তাকে দর্শন করলেন । উন্মাদিনীর মতাে ছুটে এলেন স্ত্রী । যশােধরা । মনে হল তিনি বুঝি সত্যি সত্যি এক দেবমানবে পরিণত হয়েছেন । যশােধরা স্বামীর চরণে লুটিয়ে পড়লেন । চোখের জলে সিক্ত করলেন তার চরণ দুটি । বুদ্ধদেব তাকে শান্ত করে দীক্ষা দান করলেন । রাজপরিবারের প্রায় সকলে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন । শাক্য যুবক এবং নারীরা স্বতঃপ্রণােদিত হয়ে এই অহিংসার ধর্ম গ্রহণ করেন । যশােধরা চোখের জল মুছে একদিন বালক পুত্র রাহুলকে বললেন— “ বৎস , এই শ্রমণ হলেন তােমার পিতা । ওনার কাছে অমূল্য সম্পদ আছে , যাও , তুমি তা চেয়ে নাও । ” মায়ের আদেশ মতাে পুত্র বুদ্ধদেবের কাছে গিয়ে এই সম্পদ । প্রার্থনা করল । বুদ্ধদেব বললেন— “ বৎস , অর্থ - মণি - মাণিক্য আমার কাছে নেই ; আমার কাছে আছে সত্য , তােমাকে আমি সেই ধন দিয়ে যাব । ” তিনি রাহুলকে এই নবধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন । তাঁর হাতে দিয়েছিলেন শ্রমণের ভিক্ষা পাত্র । দুমাস কপিলাবস্তুতে থেকে তিনি আবার প্রব্রজ্যার পথে বেরিয়ে এলেন । দ্বিতীয়বার তিনি কপিলাবস্তুতে এসেছিলেন পিতৃদেবের অন্তিমকালে , পুত্রের মুখে ধর্মকথা শুনতে শুনতে শুদ্ধোধন দেহ রক্ষা করেন । বুদ্ধদেব রাজগৃহ এবং শ্রাবস্তী নগরের উপবনের বিহারে , জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে দিলেন । হাজার হাজার মানুষ তার মায়াদণ্ডের স্পর্শে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল । বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে ব্রাহ্মণ পরিচালিত সনাতন হিন্দুধর্মের জনপ্রিয়তা অনেকখানি কমে যায় । দীর্ঘদিন বৌদ্ধ ধর্ম একটি আঞ্চলিক ধর্ম হিসাবে প্রচলিত ছিল । খ্রি . পূ . দ্বিতীয় শতকে মৌর্যসম্রাট অশােক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে বিভিন্ন অঞ্চলে তা প্রচলন করেন । তখন বৌদ্ধধর্ম সমগ্র ভারতবর্ষ এবং ভারতবর্ষের সীমানা অতিক্রম করে জাপান , কোরিয়া , যবদ্বীপ , ব্রহ্মদেশ , সিংহল , সিরিয়া , ম্যাসিডােনিয়া , গ্রিস , রােম প্রভৃতি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দেশে প্রচারিত হয় । অর্থাৎ আঞ্চলিক ধর্ম থেকে সেটি হয়ে ওঠে এক সর্বজনীন ধর্ম । পরবর্তীকালে কুষাণ রাজা কণিষ্কের সময়ে বৌদ্ধধর্ম মধ্য এশিয়ার তিব্বত ও চীনে বিস্তার লাভ করে । খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে হর্ষবর্ধনের সময়ে বৌদ্ধধর্ম ভারতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল । মৌর্যযুগে সমস্ত ভারতবর্ষ ছিল বৌদ্ধধর্মের অধীন । পালযুগে বাংলা ও বিহারে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব দেখা যায় । অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর বুদ্ধদেব বুঝতে পারলেন , এবার তাকে ইহজীবনের লীলা সংবরণ করতে হবে । তিনি রাজগৃহ থেকে যাত্রা করলেন কুশীনগর অভিমুখে । গােরক্ষপুরের কাছে কাসিয়া জনপদই হল অতীতের সেই কুশীনগর । সেখানকার একটি শালবৃক্ষমূলে আশ্রয় নিলেন । তার পরিনির্বাণের মুহূর্তটি এগিয়ে এল । খ্রি . পূ . ৫৩৪ অব্দে অথবা খ্রি . পূ . ৪৮৩ অব্দে আশি বছর বয়সে গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু হয় । গৌতম বুদ্ধ রাজকুমার হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন , কিন্তু মানুষের দুঃখ - দুর্দশা দেখে সবকিছু পরিত্যাগ করে সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করেন । আজও পৃথিবীর নানাপ্রান্তে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বসবাস করেন । তারা অহিংসার মন্ত্রে দীক্ষিত । তারা গৌতম বুদ্ধকে তাঁদের জীবনের দেবতা হিসাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন ।


Power by © YogiKathaOfficial

www.yogsiddhi.in

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.