Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

মীরাবাঈ, Mirabai biography in Bengali, All Indian monk biography in Bengali | Mirabai Krishna,কৃষ্ণসাধিকা মীরাবাঈ,

 কৃষ্ণসাধিকা মীরাবাঈ 

আজও মীরাবাঈয়ের ভজন গান শুনলে আমার চোখ দুটি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে । মীরাবাঈ বিরহের পাষাণ প্রতিমা । কৃষ্ণপ্রেমে আকুল হয়ে উঠেছিলেন । স্ব - ইচ্ছায় ত্যাগ করেন রাজৈশ্বর্য । ভক্তিবাদের অন্যতম সাধিকা হিসাবে মীরাবাঈয়ের নাম আমরা । কখনাে ভুলতে পারব না । তার উপলব্ধিতে হিন্দুধর্মের ভক্তিবাদ এবং ইসলামের সুফিবাদ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে । ভালােবাসার মাধ্যমে ভগবানের উপাসনা করাই ছিল ভক্তিসাধিকা মীরাবাঈয়ের সাধনার প্রথম এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য । রামানুজ , রামানন্দ , গুরু নানক , কবীর , চৈতন্যদেব , নামদেব প্রমুখরা ভক্তিবাদের যে পরম বাতাবরণ সৃষ্টি করেছিলেন , তারই । ফলশ্রুতি মীরাবাঈ । ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থানের উষর মরুপ্রান্তর বেষ্টিত কুড়কী নামক গ্রামে মীরাবাঈয়ের জন্ম হয় । তিনি রাঠোর বংশে জন্মেছিলেন । তার পিতা রত্নসিংহ ছিলেন মেড়তার অধিপতি রাও দুদাজীর চতুর্থ পুত্র । কুড়কী অঞ্চলের বারােখানা গ্রামের জায়গীর উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে তিনি কুড়কীতে গড় স্থাপন করেন । মীরাবাঈ তার একমাত্র কন্যা । মীরাবাঈয়ের শৈশব জীবনে কয়েকটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে যায় । একবার তিনি দেখলেন বিয়ের উৎসবে বরযাত্রীসহ বর চলেছেন । বাড়ির মেয়েরা সকলে অবাক হয়ে বরকে দেখছে । তখন ছােট্ট মেয়ে মীরা তার মাকে বলেছিলেন— “ মা , আমার বর এমন করে কবে । আসবে ? ” মেয়েকে শান্ত করার জন্য মা বললেন— “ ওরে তাের বর তাে ঘরেই আছে । ঠাকুরঘরে চলে যা , গিরিধারী গােপালজীকে দেখ , উনি তাের বর । ওনার সঙ্গেই তাের বিয়ে হবে । ” এই কথা শুনে মীরাবাঈ ভেবেছিলেন , সত্যি গােপাল বােধহয় । তার ইহজীবনের কর্তা । গিরিধারীকে ভালােবেসে ফেলেছিলেন তিনি । এভাবেই মা অজ্ঞাতসারে মেয়ের মনের মধ্যে কৃষ্ণপ্রেমের বীজ অঙ্কুরিত করলেন । মাত্র আটবছর বয়সে মীরার জীবনে একটি শােকাবহ ঘটনা ঘটে । যায় । হঠাৎ তার মায়ের মৃত্যু হয় । মেয়েকে নিয়ে বাবা খুবই বিপদে পড়লেন । তখন এগিয়ে এলেন ঠাকুরদাদা রাও দুদাজী । তিনি মীরাকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন । পিতামহের বিরাট রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে রাজকীয় বিলাসের মধ্যে মীরার শৈশব কাটতে থাকে । রাও দুদাজী ছিলেন ভক্তিমান পুরুষ । প্রাসাদের কাছে তিনি চতুর্ভুজজীর একটি সুরম্য মন্দির তৈরি করেছিলেন । সেখানে সাধু সন্ন্যাসীরা প্রায়ই এসে ধর্ম সম্পর্কে আলােচনা করতেন । ইতিমধ্যে মীরা এক বৈষ্ণব সন্ন্যাসীর কাছ থেকে গিরিধারির বিগ্রহ উপহার পেয়েছেন ! সবসময় তিনি এই বিগ্রহের সাথেই সময় কাটান । তার সেবা আর পূজার মধ্যে দিয়েই দিনরাত অতিক্রান্ত হয়ে যায় । প্রিয় গােপালকে নিজের লেখা গান গেয়ে শােনান মীরা । কিশােরী বয়স থেকেই তার মনের ভেতর কৃষ্ণপ্রেমের ব্যাকুলতা জেগেছিল । একটি পর একটি গান লিখে তাতে সুর সংযােজনা করতে থাকেন । একদিন গানের মাধ্যমে অন্তঃপুরবাসিনী আত্মীয়দের কাছে নিজের মনের বাসনা প্রকাশ করলেন , স্বপ্নে জগদীশের সঙ্গে হয়েছে আমার মালাবদল । বিয়ের সময় সমস্ত তনুবাহারে আমি মেখেছি হলুদ । রাজপ্রাসাদে আমার প্রিয় ভগবান স্বয়ং এসেছিলেন । স্বপ্নে দেখছি , মনােহর তােরণ তৈরি হয়েছে । এসেছেন আমার পরাণপ্রিয় । এইভাবেই তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করলেন । রাজেশ্বর্য তাঁকে বিন্দুমাত্র আকর্ষণ করতে পারল না । উপযুক্ত সময়ে বিয়ে হল মীরাবাঈয়ের । তার স্বামী ছিলেন রাজস্থানের চিতােরের শিশােদিয়া বিখ্যাত বংশের রানা সংগ্রাম সিংহের প্রথমপুত্র ভােজ রাজ । আবার টম সাহেবের রাজস্থান কাহিনি গ্রন্থে মীরাবাঈয়ের স্বামী হিসাবে রাণা কুম্ভের নাম করা হয়েছে । মেবারের রাজবংশের ইষ্টদেব একলিঙ্গজী । পূর্ববর্তী রাণা কুম্ভ কৃষ্ণ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন । মীরাবাঈ এলেন চিতােরে , তার আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বৈষ্ণব রসধারার প্লাবন দেখা গেল । তিনি নিয়মিত শাস্ত্রপাঠের ব্যবস্থা করেছিলেন । তার একান্ত আগ্রহে স্বামী ভােজরাজ শ্যামলাল বিগ্রহ স্থাপন করেন । বিবাহিত জীবনের কয়েক বছরের মধ্যে মীরাবাঈ তপস্বিনী মীরাবাঈতে । রূপান্তরিত হলেন । শ্যামলাল বিগ্রহের সেবার মধ্যে দিয়েই সময় কেটে যাচ্ছে । দাম্পত্য জীবন যাপনের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না তার । ভােজরাজ তার পত্নী মীরাবাঈয়ের মনােগত বাসনার কথা বুঝতে পেরেছিলেন । একবার ভােজরাজ তার স্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন— তার ইহজীবনের স্বপ্ন কী ? স্মিত হেসে নিজের লেখা গানের মাধ্যমে মীরাবাঈ তার স্বপ্নের কথা জানিয়ে ছিলেন এইভাবে । —গিরিধারি ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই । তার শিরে ময়ুরমুকুট , তিনি যে আমার পতি । তাত , মাতা , ভ্রাতা কেউ নয় । আপনার , ছেড়ে দিয়ে কুলের মান , এই কথাই আমি শুধু মনে ভাবি । আজ লােকাজ ছেড়ে , ওড়না ছিড়ে ফেলে , পরিচ্ছন্ন বসন ও মণিমুক্তা পরিহার করে পরেছি বনমালা । অশ্রুজল সিঞ্চন করে বাড়িয়েছি । প্রেমলতাকে । স্বামী ভােজরাজ তার সুন্দরী স্ত্রীর মুখ নিঃসৃত এই ভক্তিসঙ্গীত শুনে । অবাক হয়ে গেলেন । এদিকে মীরাবাঈয়ের এই জীবনযাপনের কথা রাজপ্রাসাদের বাইরে ছড়িয়ে পড়ল । চিতােরের সাধারণ মানুষের চোখে তিনি হয়ে উঠলেন কৃষ্ণসাধিকা । রাজ পরিবারের অনেকেই মীরাবাঈয়ের এই জীবনযাত্রাকে মানতে পারলেন না । তাই মীরাকে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় । এই সময় হঠাৎ তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয় । তখন মীরাবাঈ পূর্ণ যুবতী । কিছুদিন বাদে রানা সংগ্রামসিংহ ইহলােক ত্যাগ করেন । এটি ১৫২৮ সালের কথা । পতি বিয়ােগের মাধ্যমে মীরাবাঈয়ের সাথে সংসারের সকল বন্ধন ছিন্ন হল । কিন্তু এবার তাকে পরিবারের বয়ােঃজ্যৈষ্ঠদের ধারাবাহিক আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে হল । তারই মধ্যে চলেছে কৃষ্ণ সাধনা । একটির পর একটি গান লিখে সুর সংযােজন করে গাইছেন তিনি । মনে হচ্ছে । একটুকরাে স্বর্গ বুঝি মাটির পৃথিবীতে নেমে এসেছে । তখন বিক্রমসিং হয়েছেন রাণা । তিনি লুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন সুন্দরী মীরাবাঈয়ের তনুবাহারের দিকে । মীরাকে নিজের আয়ত্তে আনার চেষ্টা করলেন । কিন্তু মীরাবাঈকে তিনি কিছুতেই বশ করতে পারলেন না । শেষ অবধি তাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন । চরণামৃতের পাত্রের মধ্যে বিষ রাখলেন । ফুলের ঝুড়ির মধ্যে রাখলেন বিষধর সাপ । কৃষ্ণকৃপায় প্রত্যেকবার মীরাবাঈ বেঁচে গেলেন । শেষ পর্যন্ত তিনি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মেড়তায় চলে এলেন । সেখান থেকে চললেন বৃন্দাবন ধামের উদ্দেশ্যে , শ্রীচৈতন্যের শিষ্য এবং ভক্তরা ইতিমধ্যে বৃন্দাবনের লুপ্ত তীর্থ উদ্ধার করেছেন । তারা নানা জায়গাতে মঠ স্থাপন করেছেন । স্থাপিত হয়েছে শ্যামসুন্দরের বিগ্রহ । তখন সেখানকার বৈষ্ণব মণ্ডলীর আচার্য ছিলেন শ্রীরূপ গােস্বামী । মীরাবাঈ তাঁকে দেখতে চাইলেন । কিন্তু তিনি কোনাে স্ত্রীলােকের সঙ্গে দেখা করবেন না । এই কথা শুনে মীরাবাঈ বললেন- “ গোস্বামীজি কি ভাগবতের কথা ভুলে গেছেন ? বাসুদেবই তাে এই পৃথিবীতে একমাত্র পুরুষ আর সব কিছুই তাে প্রকৃতি । বৃন্দাবনের একমাত্র পুরুষ হলেন শ্রীকৃষ্ণ । তবে কেন গােস্বামীজি আমার সামনে নিজেকে প্রকাশ । করছেন না । ” মীরাবাঈয়ের এই তত্ত্ব পূর্ণ কথা শুনে শ্রীরূপ গােস্বামী তার সঙ্গে কৃষ্ণকথা বিষয়ে আলােচনা করছিলেন । বৃন্দাবনে আসার পর মীরাবাঈয়ের আধ্যাত্মিক জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যায় । দিকে দিকে তার নাম প্রচারিত হয় । রাজস্থান এবং উত্তর - পশ্চিম ভারতে তিনি এক কিংবদন্তী নারী হিসাবে পূজিতা হলেন । আবার একদিন মীরাবাঈ ব্রজধামের লীলা সাঙ্গ করে চললেন দ্বারকা । অভিমুখে । সেখানে গিয়ে রণছােড়জী বিগ্রহের সামনে ভজন পূজনে নিজেকে নিয়ােগ করলেন । এই দ্বারকাধামেই তাঁর ইহজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে । অনেকে বলে থাকেন , মীরার দেহ রণছােড়জীর শ্রীবিগ্রহে লীন হয়ে গিয়েছিল ।


Power by: © YogiKathaOfficial

                      www.yogsiddhi.in

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.