Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

মানবদেহে শ্রী গণেশের কি কাজ?, কেন তাকে সিদ্ধিদাতা বলা হয়?,

 গনেশ_ঠাকুরঃ----

.............



🙏শ্রী শ্রী গনেশ 🙏
 


★ গনেশ জনগণের প্রজ্ঞাস্বরূপ ঈশ্বর । প্রত্যেক মানুষ চরম প্রজ্ঞালাভ না করলে তার শারীরিক মানসিক, আধ্যাত্মিক জ্ঞানের সম্যক উত্থান হয় না । ভগবতী দুর্গা বহুদিন স্থিতপ্রজ্ঞ অবস্থায় থাকার ফলে তাঁর প্রজ্ঞা থেকে ক্ষিতিতত্ত্বের দেবতা সিদ্ধিদাতা গণেশ আবির্ভূত হলেন এবং ভগবতীর গভীর স্নেহে প্রতিপালিত হয়ে পরিণত হলেন মহাপ্রজ্ঞানঘন পুরুষরূপে ।


★ ক্ষিতিতত্ত্বই গণেশতত্ত্ব । ক্ষিতির মধ্যে জল - অগ্নি - পবন - আকাশ — সমস্ত তত্ত্বই লুকিয়ে আছে । ক্ষিতি থেকে গন্ধ জন্মায় । সেই গন্ধ আমরা নাক দিয়ে টেনে নিই । এই নাক দিয়ে আমরা শ্বাসবায়ু বা প্রাণবায়ু গ্রহণ করে থাকি ।

সাধনা দ্বারা শ্বাসবায়ুকে সুসংযত করতে না পারলে সংসার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয় । হাতির শুঁড় যে লম্বা , সেজন্যে হাতি মিনিটে চারটে থেকে ছটা শ্বাস নেয় । তার আয়ুও তেমনি দেড়শো বছর । কচ্ছপ মিনিটে দু - তিনটে শ্বাস নেয় । আয়ু দুশো বছর । কাজেই শ্বাস নিয়ন্ত্রণই বৃত্তি - নিয়ন্ত্রণ । শ্বাসের উপর প্রভুত্ব আত্মসাক্ষাৎকারের সহজ উপায় । শ্বাসহীন অবস্থাই অর্থাৎ সমাধি অমরত্ব অবস্থা । শ্বাসবায়ুকে সুনিয়ন্ত্রিত করতে পারলে মানুষ সমস্ত জীবভাব ও বীভৎসভাব থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে । গণেশের শুঁড় লম্বা থাকার জন্যে গণেশ প্রজ্ঞানঘন পুরুষ । এই প্রজ্ঞানই ব্রহ্ম। গণেশের নাসিকাকে ইচ্ছামতো চতুর্দিকে ঘোরাতে পারেন । সিদ্ধপুরুষ ক্রিয়াযোগ সাধনকৌশল দ্বারা খেচরী ভ্রামরী ও বিচরণী অবস্থায় নিজেকে এনে শ্বাসযন্ত্রকে ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন । ফলে সংসারের সর্ববিধ অবস্থার মধ্যে থেকে এই প্রাণ ও অপানকে সমান করে নিয়ে প্রাণায়াম পরায়ণ হয়ে সর্বদা নিজের ভেতরে ভগবানকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে কৈবল্যমুক্তি লাভ করতে পারেন ।


★ প্রাণায়াম সাধনই প্রকৃত সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজা । শ্বাসবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে মন - বুদ্ধি - অহংকার - চিত্ত নিরোধ করতে না পারলে কোনো সাধনাতেই সিদ্ধিলাভ হয় না । তাই গণেশের পূজা সর্বপ্রথমে করার বিধি । গণেশ তপস্বী ও জিতেন্দ্রিয় পুরুষ । সবসময় তিনি ব্রহ্মভাবে বিভোর । 


★ পুষ্টি তাঁর পত্নী । ব্রহ্মভাবে বিভোর হবার নামই পুষ্টি । যা সম্পূর্ণরূপে বিদ্যমান , তাই পুষ্টি । যিনি অকামকামী পুরুষ , পুষ্টির মতো অকামকামী রমণী তাঁর পত্নী হিসেবে কল্পিত হয়েছে । গণেশের ভাবে যেমন ব্রহ্মত্ব , তাঁর রূপের মধ্যেও তেমনি ব্রহ্মত্ব আছে । তাঁর একদন্ত খর্বতনু মহাকায় লম্বোদর গজানন ও রক্তবর্ণ মূর্তি স্বাভাবিকতার ঊর্ধে । তাঁর ব্রাহ্মীস্থিতি অবস্থার জন্যে তিনি প্রথম থেকে প্রপূজিত এবং শেষ পর্যন্ত প্রপূজিত । আরম্ভে তিনি শান্ত , সমাপ্তিতেও শান্ত । এই শান্ত অবস্থাই ভগবৎ অবস্থা। তাছাড়া অধ্যাত্মভাবে বিভোর মেরুদণ্ডের মধ্যে ক্ষিতি,  অপ,  তেজ,  মরুৎ ব্যোম ও কূটস্থে শিবশক্তির আবাসভূমি আছে ।


★ক্রিয়াযোগ দ্বারা মেরুদণ্ডের নিচের থেকে সহস্রার পর্যন্ত সাতবার পরিক্রমা করলে বিশ্বপরিক্রমা হয় । এটিকেই প্রতিকীরূপে গনেশের সপ্তবার পিতামাতাকে প্রদক্ষিন করে বিশ্ব প্রদক্ষিনের গল্প বলা হয়েছে।


★ গণেশের বাহন মূষিক হচ্ছে ধর্মের অবতার । মূষিকের বল ও বুদ্ধি অতি তীক্ষ্ণ । তার গতিও অত্যন্ত দ্রুত । সেজন্যেই গণেশ মুষিকবাহনে বিশ্বপরিক্রমা করেছেন ।


★ গণেশ তাঁর নাসিকা দ্বারা শ্বাসবায়ুকে স্থির করেছিলেন । সেজন্যে প্রজ্ঞানঘন অবস্থায় থেকে কার্তিকের আগে অধ্যাত্ম উপায়ে বিশ্বপরিক্রমা করতে পেরেছিলেন । এই প্রজ্ঞানই বলবীর্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ।


★ সুতরাং সিদ্ধিদাতা গণেশ সর্বজনপূজিত ও শ্রেষ্ঠ । তাই সকল দেবতার পূজার আগে তাঁর পূজা । এ থেকে বোঝা গেল , মানুষ যদি তার শ্বাসকে সাম্য অবস্থায় আনতে না পারে অর্থাৎ তার জীবভাবকে ক্রিয়াযোগ - সাধনা দ্বারা সম্পূর্ণ রূপান্তরিত করতে না পারে , তাহলে তার সিদ্ধিলাভ হয় না । কাজেই চিত্তের সাম্য অবস্থা ও অতিমানব অবস্থা লাভের জন্যে ক্রিয়াযোগ - সাধনা দ্বারা আমাদের শ্বাস - প্রশ্বাসকে সুনিয়ন্ত্রিত করতে পারলে যথার্থ বিঘ্ননাশকারী গণেশের পূজা অনুষ্ঠিত হবে । ফলে সংসারের সর্ববিধ অবস্থার মধ্যে থেকে প্রাণ ও অপানকে সমান করে নিয়ে প্রাণায়াম পরায়ণ হয়ে সর্বদা নিজের মধ্যে ভগবানকে পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে মানুষ কৈবল্যমুক্তি লাভ করতে পারবে , সফল করতে পারবে মানবজন্ম ।


{কৃতজ্ঞতাঃ- রতন কর্মকার,ঢাকা, বাংলাদেশ }

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.