আমার ঠাকুরদা ছিলেন নিগমানন্দ পরমহংসদেবের পরম্পরায় । আমার দাদু ছিলেন একজন আচার্য সাধনার পূর্ণতা লাভ না করলেও কিছু জানতেন তার দৌলতেই ও আশীর্বাদে আমার জন্ম হয়। তার কিছু শিষ্য ছিলেন। বাড়িতে একটা কালীমন্দির ছিল এবং কৃষ্ণ মন্দির একসাথে তিনিই পূজা করতেন। আমাকে বিভিন্ন গল্প শোনাতেন। ছোটবেলায় দাদু যেখানে যেতেন সেখানে আমাকে নিয়ে যেতেন।
![]() |
শ্রী শ্রী নিগমানন্দ পরমহংসদেব |
বাড়িতে মন্দির থাকার দরুন আমার মায়ের প্রতি ছোটবেলা থেকেইএকটা টান জন্ম হলো। দাদুর অবর্তমানে ও বর্তমানেও আমি মন্দিরে সময় কাটাতে এবং পুজো করতে ভালবাসতাম।
একটু যখন বড় হলাম তখন ঠাকুরদা দেহ তে নেই আমি পুজো করতাম মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানতাম না তো মায়ের সামনে বসে মাকে ডেকে বলতাম মা আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছু জানি না সর্ব অপরাধ ক্ষমা করে হে মা তুমি এই পূজা গ্রহণ করো এই বলে মায়ের ধ্যান করতাম যতটুকু জ্ঞান ছিল তখন আমার সেই অনুযায়ী । জয় মা কালী জয় মা কালী বলতে বলতে দীর্ঘ সময়ের পর জম্মা জম্মা উচ্চারণ হতো জপ করতে করতে। আমার ছোটবেলার বন্ধুরা জানে যে আমি আমার মাকে জম্মা বলেই ডাকতাম।
এইভাবে অনেক কিছু অলৌকিকও হয়েছে যেগুলো প্রকাশ করলাম না।
কালী ছিল আমার একমাত্র আর আরাধ্য।
এভাবে এক সময় আমি পুজো পার্বণ এবং বাড়ির বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশে আমি পুজো পার্বণ মাকে ডাকা বন্ধ করে দিলাম। যেটুকু ভালোবাসা ছিল মনে মনে এর থেকে আর কিছু করতাম না।
এমত অবস্থায় দু তিন বছর কেটে যাওয়ার পর।
তখন আমার জীবনে ভব পারের পারি হয়ে বৈষ্ণব পরম্পরায় আমার পরম পূজনীয় গুরুদেব যোগাচার্য রবীন্দ্রনাথ গোস্বামী নিজে থেকেই আমার ছোট মামার হাত ধরে আমার বাড়িতে আসলেন। উনার সাথে কিছু কথা বলার পরে গুরুদেব বললেন কালী তোমার সোগার (মুলা ধারে) মধ্যে আছে। আমি রেগে গেলাম আমার আরাধ্য দেবতা আমার ওখানে আছে গুরুদেব দু তিনটে কর্ম দেন বললেন এগুলো কর তুমি নিজেই জেনে যাবে। তিনদিনেই আমার কিছু উপলব্ধি হলো। উনি দেখিয়ে দিলেন যে ওখানেই আছে কালী। এভাবে কিছু পাওয়ার পর উনার সাথে আমার যোগাযোগ পাকাপোক্ত হতে শুরু করল। উনার সাথে সময় কাটাতে আমি বেশি পছন্দ করতাম আমার জীবনে খুব একটা বন্ধু-বান্ধব নেই বললেই চলে। উনি ছিলেন আমার ভবপারের প্রকৃত বন্ধু। আমার সমস্ত অজ্ঞানতা দূর করে উনিই জ্ঞানের আলো আমার ভিতর প্রবেশ করালেন। আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সরল এবং সহজ ভাষায় দিতেন।
গুরুর চরণতলে এসে গুরু চরণ ধরে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক জীবনে এগোতে শুরু করলাম। জীবনের একটাই চাওয়া পাওয়া কিভাবে আধ্যাত্মিক জীবনে এগিয়ে যাওয়া যায় কিভাবে এই দুর্লভ মানব জীবন সার্থক করা যায়। উনার কিপায় ওনার পছন্দ মতন একটা মেয়েকে বিয়ে করলাম এবং সন্তানও হলো উনার আশীর্বাদে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় উনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন যেদিন আমার সন্তান জন্ম নিল সেদিন গুরুদেব চিরকালের মতন এই দেহ বন্ধন থেকে মুক্ত হলেন।
আমি ৭-৮ দিন প্রায় পাগলের মতনই ছিলাম না খেতেই ভালো লাগছিল না ঘুমাতে ভালো লাগছিল ঘুম আমার চোখেই নেই একদিকে ছেলের জন্মের আনন্দ আবার গুরুদেবের চলে যাওয়া দুঃখমাঝখানে আমি। শুধু কাঁদতাম আর অনাথ হয়ে যাওয়ার কষ্টে বুক ফেটে যেত। এবং এই ভাবনা হতো এর পরের আমার কি হবে? এখনো যে আধ্যাত্মিক জীবনের পথ বাকি। এভাবে গুরুদেবের ধ্যানে আমি থাকতে শুরু করলাম মাঝে মধ্যে । হে গুরুদেব তুমি আমাকে পথ দেখাও তুমি সত্য তোমার বাক্য সত্য আমার এখন কি করনীয়। এভাবে উনি যেরকম ভাবে আমাকে চলতে বলেছেন যে রকম ভাবে উনি পথ দেখিয়েছেন আমি সেরকম ভাবেই চলতে শুরু করলাম।
হঠাৎ একদিন ব্রহ্ম মুহূর্ত গুরুদেবের ধ্যান করতে করতে গুরুদেবের রূপটা পরিবর্তন হয়ে গেল আমি ভাবলাম হয়তো গুরুদেব কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে আমাকে। সত্যিই তাই কিছুদিন পর ধীরে ধীরে আমি জিনিসটা বুঝতে পারলাম গুরুদেবের একটা কথা মনে পরল আমি যদি নাও থাকি তোমার যদি কর্মের প্রতি নিষ্ঠা ভক্তি থাকে কেউ না কেউ এসে তোমায় কিছু দিয়ে যাবে। সত্যিই তাই হল আমার জীবনে নতুন দিশা খুঁজে পেলাম।