গুরুদেব ও শিষ্য,
গুরু যেমন তার শিষ্যকে চিনতে দেরি হয় না। আবার শিষ্যেরও গুরু কে চিনতে দেরি হয় না। গুরুদেবের কাছে দীক্ষা না নেওয়া সত্বেও আমি অন্তর থেকে গুরুদেব মেনে নিলাম। গুরুদেব ও তার শিষ্য মেনে নিলেন। দুজনের মধ্যে ভাব আদান-প্রদান শুরু হল। গুরুর তেজ অনুভব শুরু করলাম। গুরুদেবের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলাম। কবে গুরু শিষ্যের মিলন হবে? আর দেরি সয়না। এভাবে কিছুদিন অপেক্ষা করার পরে সেই আনন্দের মুহূর্তটা এসে উপস্থিত হলো। কৌশিকী অমাবস্যার পরের দিন শুক্রবার দীক্ষা হলো তন্ত্র মতে । গুরুদেব বললেন তুই আধ্যাত্মিক জীবন অনেক এগিয়ে আছিস বাপ। আর কতদূর এগোতে চাস? গুরুদেব কে আমি বললাম বাবা যতদূর আগানো যায়, সমুদ্রের কি শেষ আছে? গুরুদেব বললেন তোর তো এখানে আসতেই হত হিসাবটা একটুখানি মিলিয়ে দেখ। সত্যি সেদিন আমি হিসাবটা মিলাতে কি অবাক হয়ে গেলাম।
..................
গুরুদেব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
আরো অনেক কথা হলো সেগুলো অপ্রকাশ্য।
গুরুদেবের সাধক জীবন।
গুরুদেব ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক সূত্রে পুজো পদ্ধতি ইত্যাদি সঙ্গে যুক্ত।
উপনয়ন হওয়ার পর একজন পুরোহিত গুরুর সান্নিধ্য লাভ করে। যেহেতু ব্রাহ্মণ পরিবারে সন্তান শাস্ত্র পুঁথিগত জ্ঞান অনেক বেশি ছিল। তা সত্ত্বেও মনের খিদে মিট ছিল না ।
এমত অবস্থায় পুরোহিত গুরুদেব অপারক হয় তখন তার কাছ থেকে আদেশ নিয়ে নতুন গুরু খোঁজার সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।
ছোট্ট চৌদ্দ বছরের ছেলেটা কোথায় পাবে গুরু। তখনকার দিনে এত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল না কোথায় পাবে এমন গুরু যে তার মনের খিদে মেটাতে পারে।
এভাবে হঠাৎ একদিন স্বপ্নে এক মহাত্মা মুখ ভেসে ওঠে এবং তাকে গুরুদেব পুজো করছেন স্পষ্ট দেখতে পান।
গুরুদেব তাকে আগে থেকেই চিনতেন । তার এক আত্মীয়র বাড়িতে সিংহাসনে তার ছবি দেখেছেন।
এভাবে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পরে একটা শুভ মুহূর্তে নিগমানন্দ পরমহংসদেবের আশ্রমের মহারাজ এর সান্নিধ্যে লাভ করেন। তন্ত্র মতে দীক্ষা হয় এবং শাক্ত অভিষেক হয়।
এরপরে তার গুরুদেবের আদেশ এই কামাখ্যায় চলে আসেন।
কামাখ্যায় এসে নাথ কুলে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এখানে এসে গুরুদেব পূর্ণতা লাভ করেন। তারপর গুরুদেবের নাম হয় বিজন ভট্টাচার্য থেকে শ্রী বিমলানন্দ নাথ হলো।
গুরুপরিচয় হল মূল কথায় আসি।
সেদিন সাক্ষাৎ নর-রূপে নারায়নের দর্শন হলো কি জানি না যোগ, শাস্ত্র, তন্ত্র ষোল কলা পূর্ণ একজন সাক্ষাৎ মহাপুরুষ ।
মঙ্গলময় ঈশ্বর তিনি তার সন্তানদের সর্বদাই মঙ্গল করেন। এবং শুদ্ধচিত্তে ,শুদ্ধজ্ঞানে ,শুদ্ধভক্তিতে তাকে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং সন্তানের মঙ্গল কামনায় সর্বদাই তিনি ব্যতিব্যস্ত ।
সেদিন মায়ের লীলা বুঝতে পারলাম সেদিন একটুখানি মনে মনে বলতে লাগলাম।
অজ্ঞান-তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন-শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ
মন্ত্রঃ সত্যং পূজা সত্যং সত্যং দেবো নিরঞ্জনঃ।
গুরোর্বাক্যং সদা সত্যং সত্যমেব পরং পদম্ ,
অখন্ড-মন্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তত্পদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নম
মন্ত্রমূলং গুরুর্বাক্য
ধ্যানমূলং গুরুমূর্ত্তি
পূজামূলং গুরুপদ
মোক্ষমূলং গুরুকৃপা
মন্নাথ শ্রী জগন্নাথ , মদ্গুরু শ্রী জগদ্গুরু । মহাত্মা সর্ব্বভূতাত্মা ,তস্মৈ শ্রী গুরবে নমঃ
🙏জয় গুরু মহারাজ 🙏
🙏হরে কৃষ্ণ 🙏
🙏কৃতজ্ঞতা স্বীকার 🙏
বিষ্ণু আনন্দ গোস্বামী