জন্মান্ধ সুরদাসের কৃষ্ণভক্তিঃ
...........
![]() |
Surdas ar krishna vokti |
প্রাচীন কালে সুরদাস নামে ভগবানের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি জন্মাবধি ছিলেন অন্ধ। একবার এক রাতে অন্ধকারে হাতে হারিকেন নিয়ে সুরদাস যাচ্ছেন পথ ধরে। সবাই জিজ্ঞাস করছেন, সুরদাসজী আপনি তো চোখে দেখেন না। হারিকেন কেন হাতে?
সুরদাসজী বললেন -- যাদের চোখ আছে আমি তাদের জন্য হারিকেন নিয়ে যাচ্ছি।
হঠাৎ কিছু দূর গিয়ে তিনি একটা গর্তে পড়ে গেলেন। সুরদাস চিৎকার করে বললেন -- কেউ আছেন, আমি গর্তে পড়ে গিয়েছি, সাহায্য করুন।
পথটি নির্জন ছিল আর কেউই সাহায্যে এগিয়ে এল না।
এইদিকে বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণ নিভৃত কুঞ্জে সখীদের সাথে গান শুনছিলেন। সুরদাসের গলা শুনে ভগবান ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। ভগবান কৃষ্ণ রাধাকে বললেন -- সুরদাস আমার ভক্ত, সে বিপদে পড়ে আর্ত স্বরে সাহায্য প্রার্থনা করছে।
তুমি কত করূণাময় সুরদাসের গলা শুনে এমন ব্যাকুল হয়ে উঠলে! --রাধা বললেন -- চল না সুরদাসকে রক্ষা করি।
ভগবান বললেন -- আমি যাব কিন্তু সুরদাস যেন বুঝতে না পারে।
রাধা বললেন -- বেশ তাই হবে।
রাধা ছমছম নুপুরের ধ্বনি তুলে চললেন ভগবানের সাথে।
গর্তের কাছে গিয়ে ভগবান কৃষ্ণ সুরদাসকে বললেন -- এত রাতে এইভাবে একা একা ঘুরলে এমনই হয়।
সুরদাস বললেন -- আমাকে আগে উপরে টেনে তোল।
ভগবান সযত্নে সুরদাসের দুই হাত ধরে উপরে টেনে তুললেন। সুরদাস অন্ধকারে হাত দিয়ে তার লাঠি খুঁজতে লাগলেন।
উপরে উঠে লাঠি খুঁজতে খুঁজতে ভক্ত সুরদাসের হাতটা লাগল রাধারানীর শ্রী চরণে। সাথে সাথে তার হাতে লাগল রাধারাণীর চরনের নুপুর। নুপুর হাতে লাগার সাথে সাথে যে সুন্দর আওয়াজ হল তা শুনে বুদ্ধিমান সুরদাস বললেন -- এই নুপুর যার সে সাধারন কেউ নয়। নূপূর যার তার চরন এত কোমল, সাধারণ নারীর তা হতেই পারে না! সে নিশ্চয়ই আমার করুনাময়ী রাধারানী। আর রাধারাণী তো একা আসবেন না! যে কোমল হত দুটি আমাকে গর্ত থেকে টেনে তুলল সে নিশ্চয়ই আমার গোবিন্দ।
সুরদাসের বুদ্ধিমত্তায় খুশি হয়ে রাধারানী সুরদাসকে বর দিতে চাইলেন। সুরদাস কিন্তু কিছু বর চাইলেন না।
কৃষ্ণ বললেন -- তুমি কি বর চাও। রাধে করুনাময়ী, তোমায় কিছু দেবেন সুরদাস। তুমি বর চাও।
কৃষ্ণের কথায় সুরদাস বর চাইলেন -- বর যখন দেবেই তখন আমাকে দিব্যদৃষ্টি দাও। আমি যেন রাধাকৃষ্ণ যুগল দর্শন করতে পারি।
বলা মাত্র সুরদাস দিব্যদৃষ্টি পেলেন। নয়ন ভরে যুগল রাধাশ্যাম দর্শন করলেন। রাধারানী চরনে সুরদাস হাত জোড় করে নিবেদন করলেন -- রাধে আমায় আবার অন্ধ করে দাও। আমি আর এইজগত দেখতে চাই না। যুগল দর্শনের পর আর কিছুই চাই না আর।
শ্রীমতি রাধা জানতে চাইলেন -- অন্ধ হয়ে কেন থাকতে চাও তুমি?
সুরদাস বললেন, এই জগত যার থেকে সৃষ্টি তাকে দেখলাম, আর কিছু দেখতে চাই না।
🙏জয় গুরু মহারাজ 🙏