Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

দুর্গা মানে কী?,What does Durga mean?,কলাগাছ কে?,Who is the banana tree?,

 মাকে জানা বা পাওয়া খুবই কঠিন।  তাই তাঁর নাম দুর্গা।

লেখাটা পড়ে ভাল লাগল তাই আপনাদের জন্য পাঠালাম। 


  স্বামী সোমেশ্বরানন্দ

                  এর কলমে।


মা দুর্গা



দুর্গা মানে যাকে জানা কঠিন। দুঃ=কঠিন। গ=যাওয়া। যেমন দুর্গে (fort) ঢোকা কঠিন। দুর্গম, যেখানে যাওয়া কঠিন। দুর্গের সাথে আ-কার যোগ করে দুর্গা। মাকে জানা বা পাওয়া খুবই কঠিন। তাই তাঁর নাম দুর্গা।


     মায়ের দশ হাত। অর্থাৎ দশদিকেই তিনি রয়েছেন, সর্বত্রই তাঁর অস্তিত্ব। পাশে শিব, সাথে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ। মায়ের কৃপায় সাধক সবকিছু পান। শিব বা ব্রহ্মজ্ঞান যেমন পাওয়া যায়, তেমনি লাভ করা যায় বিদ্যা, সম্পদ, শৌর্য, সিদ্ধি। চণ্ডীতে আছে, সুরথ ও সমাধি একই সাথে তপস্যা করেছিলেন। কিন্তু মায়ের বরে সুরথ ফিরে পেলেন তার রাজ্য, সমাধি লাভ করলেন ব্রহ্মজ্ঞান।


মাতৃমন্ডপে কলাগাছ? অনেকে বলেন গণেশের বউ! না। একে নবপত্রিকা বলা হয়। সাত রকম গাছ। পত্রিকা=যার পত্র (পাতা) আছে তাকে বলে পত্রিকা। কলা, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বেল, দাড়িম, অশোক, মান ও ধান। নবদুর্গার অন্য রূপ। এরও পুজো হয়। কেন? বলছি তা একটু পরে।


     মন্ডপে মায়ের প্রতিমা মাটির। আর অষ্টমীর দিনে কুমারী পুজো। মাকে পুজো করা হচ্ছে গাছ, মাটি, মানুষ রূপে। মাটি জড়, গাছ যেন জড় ও জীবের মধ্যে (প্রাণ আছে কিন্তু সচল নয়), আর কুমারী হলো মানুষ। অর্থাৎ মাকে তিন রূপে আবাহন করা হয়। বিভিন্ন রূপে তিনিই রয়েছেন সর্বত্র।


     মাতৃপ্রতিমার সামনে ঘট রাখা হয় কেন? ঐ ঘট হলো ভক্তের প্রতীক। ঘট=শরীর। ঘটের মধ্যে জল=মন (mind)। ঘটের মুখে আম পাতা= ইন্দ্রিয়। আর জলের নীচে রাখা সোনা (gold) = জীবাত্মা। অর্থাৎ সমবেত ভক্তদের প্রতীক এই ঘট। 


     দেবতাদের সমবেত শক্তির ফলে মায়ের আবির্ভাব। অর্থাৎ ঐক্যই শক্তি। আজ সমাজে ভাল লোকেরা, সৎ মানুষেরা কেন নিজেদের অসহায় মনে করে? কারণ তারা ঐক্যবদ্ধ নয় যেখানে অসৎ লোকেরা দলবদ্ধ। চণ্ডীর তাৎপর্য এটাই। সংঘে শক্তি কলৌ যুগে = কলিযুগে সংঘবদ্ধ হলেই শক্তি।


     মায়ের হাতে অস্ত্র কেন? কারণ ভাল লোকদের হাতেই অস্ত্র থাকা দরকার। তারাই সঠিক প্রয়োগ করতে সক্ষম। অসৎ লোকের হাতে অস্ত্র সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর।


     শিবের তেজে সৃষ্টি হলো মায়ের মুখ। শিব সারাক্ষণ ধ্যানস্থ। অর্থাৎ কঠিন পরিস্থিতি এলে শান্ত মনে তার মোকাবিলা করতে হয়, এই শিক্ষাই দেওয়া হচ্ছে এখানে।


     বিষ্ণুর তেজে মায়ের হাত। বিষ্ণু স্থিতি বা পালনের দেবতা। এর তাৎপর্য, আমাদের কর্মের দ্বারা জগতের বা সমাজের কি কোনো উপকার হচ্ছে অথবা শুধু নিজের জন্যই কাজ করি? যদি অন্যদের উপকারের জন্য হয় তবে তা দিব্য কর্ম।


     ব্রহ্মার তেজে মায়ের পা। চলতে হয় পদক্ষেপ নিতে নিতে। ব্রহ্মা সৃষ্টির দেবতা। কিন্তু আমাদের পদক্ষেপ বা কাজ কি সৃজনশীল (creative) ? চণ্ডীর উপদেশ, গতানুগতিক কাজের উপরে উঠে সৃষ্টিশীল হও।


     শিব নিজের শূল দিলেন মাকে। ত্রিশূল অর্থাৎ সত্ত্ব, রজ, তম। এই তিনের উপরে উঠতে পারলেই প্রকৃত জ্ঞান লাভ হবে। দন্ডের একমুখে ত্রিশূল, অন্যমুখে এক শূল। জগতের দুই রূপ। একদিকে ত্রিগুণের খেলা, অন্যদিকে অদ্বৈত অনুভব। মহিষাসুর ত্রিগুণে মত্ত ছিল বলে মা তাকে এক শূল দিয়ে মুক্তি দিলেন।


     বিষ্ণু নিজের চক্র দিলেন মাকে। চক্র অর্থাৎ সংসারের আবর্তন। চক্র সবসময়েই ঘুরছে, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে সর্বদা। কিন্তু চক্রের মাঝে যে ছিদ্র, ঐ কেন্দ্রে আঙ্গুল রাখলে স্থির থাকা যায়। চণ্ডীর উপদেশ, শ্রীরামকৃষ্ণের মতই, বুড়ি  ছুঁয়ে খেলা করো, বাসা পাকড়ে রঙ দেখো। অর্থাৎ ঈশ্বরকে ধরে কাজ করো।


       ব্রহ্মা মালা দিলেন। এই মালা ফুলের নয়, রুদ্রাক্ষের মালা। সাধনার মালা। তাৎপর্য? মানুষের জীবন এক সাধনা। পশু জন্ম থেকেই পশু, পাখী ডিম ফুটে বাইরে বেরিয়েই পাখী। কিন্তু মানুষ জন্মের পর এক জীব মাত্র। তাকে সাধনা করতে হয় মনুষ্যত্ব লাভের জন্য। এই কথারই ইঙ্গিত চণ্ডীতে।


জয় মা দুর্গা। সকলকে শুভ শারদীয়ার প্রীতি, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। 🙏🙏

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.