Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

বৈষ্ণব অপরাধ কী?,What is Vaishnava crime?,

 বৈষ্ণব অপরাধের দৃষ্টান্তঃ----

.........

বৈষ্ণব অপরাধ, Vaishnava Crime,



ভরত মহারাজের জীবনী নিয়ে শিক্ষণীয় একটি গল্প যার নাম অনুসারে নামকরন হয়েছিল ভারতবর্ষ।

# ভগবানের অনেক অবতার এর মধ্যে একটি হলো ভগবান রৃষভ দেব। রৃষভ দেবের একশ পুত্র ছিল। 

তাদের মধ্যে অন্যতম ও বড়ো পুত্র ছিলেন ভরত মহারাজ। রৃষভ দেব তাকেই সমস্ত পৃথিবীর রাজা বানিয়ে ছিলেন।


# পুরাকালে রাজা ভরত ছিলেন একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনি একসময় ভাবতেন যে একশ বছর রাজত্ব করবেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর চেতনা সমৃদ্ধ হয়। ভরত ছিলেন মহাজ্ঞানী, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই ঐশ্বর্য্য ও সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী নয়। তিনি ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন একজন রাজার শরীররও শেষ পর্যন্ত ধূলো বা, ছাই এ পরিণত হয়। কিন্তু এই দেহের মধ্যে রয়েছে অবিনশ্বর আত্মা। সেটিই প্রকৃত সত্তা। যোগভ্যাসের মাধ্যমে আত্ম উপলব্ধি ঘটলে সেই জীবাত্মাকে পুনরায় ফিরে আসাতে হয় না। 


# প্রকৃতপক্ষে পুনজন্ম চক্র থেকে মুক্তি পাওয়াই হল মানুষ্য জীবনের মূল উদ্দেশ্য। তাই তিনি সবকিছু পরিত্যাগ করে হিমালয়ের পাদদেশে পবিত্র পুলহাশ্রমে চলে যান। সেখানে তিনি একাকী বাস করতেন। সেই স্থানে ভরত নিজের জীবন যাত্রার অমূল পরিবর্তন করেন। রাজকীয় পোষাকের পরিবর্তে মৃগচর্মের বসন পরতেন। এমনকি ক্ষৌরকার্যও করতেন না। ফলে তাঁর চুল এবং দাড়ি ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং ত্রি সন্ধ্যা স্নানের জন্য তার জটা ও দাঁড়ি সবসময় সিক্ত থাকত। তিনি সর্বদাই পরমেশ্বর ভগবানের আরাধনা করতেন এবং সামান্য ফল মূল ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদ পেতেন। 

কিন্তু এর মধ্যে একটি ঘটনা ঘটল। নদীর তীরে রাজা ভরত ধ্যান করছিলেন, এমন সময় একটি হরিণী নদীতে জল খেতে আসে, হরিণ টি ছিল সন্তান সম্ভবা। কাছাকাছি সিংহের গর্জন শুনে প্রানভয়ে ভীত হরিণ টি নদীতে ঝাঁপ দেয়। প্রসব হয়ে তখনই ছোট্ট হরিণ শাবকের জন্ম হয়। অসময়ে প্রসব হওয়ায় মাতা হরিণ টি মারা যায়। 

রাজা ভরতের সদ্যজাত শাবকটিকে দেখে করুনা হল। তিনি শিশু টিকে নিজ আশ্রমে নিয়ে গেলেন, কারন তিনি জানতেন যে কোনও জীবের মধ্যে আত্মা পরমাত্মা আছে। 

হরিণ শাবকটিকে আানার পর ভরতের জীবনযাপনে পরিবর্তন আসল। কিছু সময় শাবকটির পরিচর্যায় চলে যেত। 


# ক্রমশ হরিণ শাবকটির প্রতি আসক্তি বাড়তে থাকে এবং তিনি ভগবানের সেবা থেকে বিচ্যুত হতে থাকলেন। 

একদিন ভরত ধ্যান করছিলেন, হঠাৎ ই তিনি ভগবানের পরিরর্তে শাবকটির কথা ভাবতে লাগলেন, ভাবতে ভাবতে মনসংযোগ নষ্ট হল। ধ্যান ভঙ্গ করে তিনি শাবকটিকে খুঁজতে লাগলেন। খুঁজতে খুঁজতে বনের ভেতরে হঠাৎ তিনি পড়ে যান সাংঘাতিক আঘাত পান। একসময় তিনি মৃত্যুর কাছাকাছি চলে এলেন, মৃত্যুর সময় তিনি হরিণ শাবকটিকে দেখতে পেলেন। তার মনে হল শিশু টি নিজ পুত্রের মতো শোক প্রকাশ করছে। ফলে মৃত্যুর সময়ও রাজার মন পুরোপুরি শাবকেই নিবিষ্ট ছিল। ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, জীব যে চিন্তা করে দেহ ত্যাগ করে, সেই অনুসারে সে নিঃসন্দেহে পরবর্তী শরীর প্রাপ্ত হয়। 


মহারাজ ভরতের মৃগ শরীর প্রাপ্তি:----


★ পরবর্তী জন্মে মহারাজ ভরত একটি হরিণের দেহ লাভ করলেন। কিন্তু পরবর্তী জীবনে সুদৃঢ় ভক্তির প্রভাবে সেই হরিণ শরীর ধারনের কারণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। হরিণ শরীর প্রাপ্ত হলেও ভরত একটি মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি নিজের আত্ম উপলব্ধি উন্নত করতে পেরেছিলেন, ফলে তিনি সমস্ত জাগতিক চাহিদা থেকে সরে আসতে পেরেছিলেন। তিনি হরিণ সঙ্গী এবং মাকেও ত্যাগ করে জন্মস্থান কালঞ্জর পর্বত থেকে পুনরায় পুলস্ত্য-পুলহ আশ্রমে ফিরে গিয়েছিলেন। এই জন্মে তিনি খুব সর্তক ছিলেন , সবসময় মুনি-ঝষিদের কাছে থাকতেন, ভগবানের কথা শ্রবন করতেন। এইভাবে একসময় হরিণটির দেহ ত্যাগ এর সময় এল হরিণ টি ভগবানের কথা স্মরণ করতে করতে দেহ ত্যাগ করল। 


🌼জড় ভরতের জীবন🌼


★ পরবর্তী জন্মে ভরত এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাঁর নাম ছিল জড়ভরত। ভগবানের কৃপায় তিনি পূ্র্ব জন্মের কথা স্মরণ করতে পেরেছিলেন। এই জন্মে ভরত যখন বড় হয়ে উঠল আত্মাীয়-ও বন্ধু দের থেকে দূরে থাকতো। তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান হলেও অন্যদের কাছে নিজেকে উন্মাদ, অন্ধ, বধির, জড় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করতেন। যাতে কেউ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা না করে। কিন্তু তিনি অন্তরে সবসময় ভগবানের কথা চিন্তা করে এবং নিরন্তর তিনি ভগবানের মহিমা কীর্তন করে যেতেন যা তাকে জন্ম মৃত্যুর আবর্তন থেকে মুক্তি দিতে পারে। এদিকে তাঁর পিতা আন্তরিক ভাবে চাইত জড়ভরত ভবিষ্যতে জ্ঞানী পন্ডিত হয়ে উঠুক। কিন্তু জড়ভরত বোকার মত কাজ করতেন। পিতা যা বলত ঠিক তার উল্টো আচরণ করতেন। 

পিতার মৃত্যুর পর জড়ভরতের নয় জন বৈমাত্রেয় ভাই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় এবং ক্রীতদাসের মতো অমানুষিক পরিশ্রম করায়। ভাইরা তাকে দিয়ে প্রচন্ড পরিশ্রম করালেও দিনের শেষে তাকে খেতে দিত খুৃদ, খইল, তুষ, পোকা খাওয়া শস্য। জড়ভরত এই বিষয়ে কোনোদিন বিদ্বেষ পোষণ করতো না। এইভাবে জড়ভরত জড়জগতে থেকে শুদ্ধ আত্মার ভূমিকা পালন করছিলেন। 


★ ইতিমধ্যে এক দস্যু ভদ্রকালীকে পূজা দেওয়ার জন্য নরবলির আয়োজন করে তাই এক বোকা নির্বোধ মানুষের খোঁজ করছিল। ডাকাতের লোকেরা রাতের অন্ধকারে নির্বোধ মানুষকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ জডভরতকে দেখতে পেল। সে তখন একটি শূয়োরের হাত থেকে শস্য রক্ষা করছিল। বলি দেওয়ার জন্য ডাকাতরা জড়ভরতকে উপযুক্ত মনে করল। ভরতকে শক্ত দড়ি দিয়ে বেধেঁ ডাকাতরা মন্দিরে নিয়ে আসে। জড়ভরতের যেহেতু ভগবানের ওপর আস্থা ছিল তাই সে ডাকাতদের বাধা দেয়নি। 


★ মন্দিরে এনে দস্যুরা জড়ভরতকে বলি দেওয়ার জন্য স্নান করায়, নতুন বস্ত্র, অলঙ্কার ও মালা পড়ায়। বলির সময় হলে তারা জড়ভরতকে হাঁড়িকাঠে সামনে বসতে বাধ্য করে। প্রধান পুরোহিত, একটি তীক্ষ্ণ খড়গ নিয়ে ভরতকে বলি দিতে উদ্যত হলেন।

কিন্তু স্বয়ং ভদ্রকালী এটি সহ্য করতে পারলেন না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই পাপিরা ভগবানের পরম ভক্তকে হত্যা করতে চাইছে। হঠাৎই বিগ্রহ বিদীর্ণ করে দেবী স্বয়ং প্রকাশিত হলেন। তাঁর শরীর অসহ্য তেজে জ্বলছিল। প্রচন্ড ক্রোধে দেবীর চোখ দুটি আরক্ত হয়ে উঠেছিল। এইভাবে দেবী ভয়াবহ রূপ ধারণ করে বেদী থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে এসে যে খড়গ দিয়ে দস্যুরা ভরতকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল সেই খড়গ দিয়েই দস্যু দের মস্তক ছেদন করতে লাগল। 


মহারাজ রহূগনকে জড়ভরতের নিদের্শ :------


# ভদ্রকালীর মন্দির থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লোকালয় থেকে দূরে থাকতেন। কিন্তু এর মধ্যেও অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে থাকল। 


# একদিন সৌবীরের রাজা রহূগন শিবিকায় করে জড়ভরত যেখানে থাকতেন, তার কাছাকাছি স্থান দিয়ে কপিলাশ্রম যাচ্ছিলেন। শিবিকা বাহকরা পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল তাই তারা শিবিকা বাহকের খোঁজ করতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে তাঁরা জড়ভরতের দেখা পেল। বোকা দেখে সাধারণ মানুষটি কে অনুচরদের শিবিকাবাহক হিসাবে খুব পছন্দ হল। কারন দেখতে নির্বোধের মতো হলেও জড়ভরত ছিলেন ষাঁড়ের মতো বলিষ্ঠ। শিবিকা বহন করার ক্ষেত্রে জড়ভরত কোনো প্রতিবাদ জানালো না। কিন্তু চলার সময় পাছে তাঁর পায়ের তলায় কোনো পিঁপড়ের মৃত্যু হয়, এই ভয়ে তিনি অতি সাবধানে পা ফেলছিলেন।(#কেননা প্রতিটি জীবই বিশেষ জড় শরীরে আবদ্ধ হয়ে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করতে হয়। তাই কোন প্রানীকে তার নিদিষ্ট আয়ু শেষ হওয়ার আগে বধ করা হয় তবে সেই জীবাত্মাকে আবার অনুরূপ প্রজাতির ওপর একটি দেহ ধারণ করতে হয় অবশিষ্ট কর্তব্য শেষ করার জন্য। এই কারনেই বেদে বলা হয়েছে জীবকে অকারনে বধ করা উচিত নয়।) এদিকে জড়ভরত ধীরে ধীরে চলায় পিছিয়ে পড়ছিল। ফলে শিবিকা বহনে দেরী হচ্ছিল। শিবিকা দুলছে দেখে রাজা রহূগন ক্রোধিত হলেন। তিনি জড়ভরত কে তিরস্কার করলেন।জড়ভরত জানতেন দেহের বিনাশ হলেও আত্মার বিনাশ হয় না, তাই তিনি বিচলিত না হয়ে আগের মতো শিবিকা বহন করতে লাগলেন। কিন্তু রাজা ক্রোধ দমন করতে না পেরে পুনরায় চিৎকার করে বললেন "তুই কি করছিস? তুই কি জানিস না আমি তোর প্রভু? এই অবজ্ঞার ফলে আমি তোকে শাস্তি দেব।

 

★ জড়ভরত বললেন, হে রাজা আপনি আমার সম্পর্কে যা বলেছেন তা সত্য, আমি শিবিকা বহনে যথেষ্ট পরিশ্রম করিনি। আমার শরীর এটিকে বহন করছে, কিন্তু আমি আমার দেহ নই। আপনি বলেছেন আমি হৃষ্টপুষ্ট নই, এর থেকেই বোঝা যায় আপনি আত্মা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। দেহ দুর্বল বা শক্তিশালী হতে পারে কিন্তু কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি আত্মা সম্বন্ধে এই কথা কখনোই বলবে না। 


★ আজ আপনি রাজা ও আমি ভৃত্য-এই সম্পর্ক সবসময় ঠিক না পরজন্মে এর উল্টো হতে পারে। কারন এটি ক্ষনস্থায়ী। 


★ জড়ভরত তখন নিজের পূর্ব জন্মের কথা বললেন যে কিভাবে তিনি পারমার্থিক কর্তব্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হরিণ শরীর ধারন করেছিলেন। 


★ জড়ভরতের শিক্ষা সমাপ্তে সিদ্ধান্ত স্বরুপ রাজাকে বলেন, যিনি জন্মান্তরের চক্র থেকে মুক্তি পেতে চান তাকে সবসময় ভগবানের পরমভক্তের সঙ্গ করতে হবে। এই সঙ্গ প্রভাবে যে কোনো ব্যক্তি পূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে পারে। জ্ঞান রুপ তরবারি দ্বারা জড় জগতের মোহের বন্ধন ছিন্ন করা সম্ভব।


🙏জয় গুরু মহারাজ 🙏

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.