Type Here to Get Search Results !

   Choose Your Language   

উৎপন্না একাদশী কি?,এই একাদশী ব্রত পালন করলে কোন ফল লাভ হয়?,What is Uppanna Ekadashi?, What are the benefits of observing this Ekadashi Vrat?,

 উৎপন্না একাদশীর ব্রতকথা--------


উৎপন্না একাদশী

ভবিষ্যোত্তরপুরাণে শ্রীকৃষ্ণ-অর্জুন সংবাদে এই ব্রত-মাহাত্ম্য দৃষ্ট হয়। 

শ্রীনৈমিষারণ্য-ক্ষেত্রে বহু ব্রাহ্মণ-মুনি-ঋষি সমক্ষে শ্রীসূত মুনি বললেন—হে মুনি-ঋষিগণ! শ্ৰীকৃষ্ণ এই ব্ৰত মাহাত্ম্য যে ভাবে বলেছিলেন, সে ভাবে যদি কোন ব্যক্তি শ্রদ্ধা-ভক্তি সহকারে শ্রবণ, পঠন ও পালন করেন, তাঁর ইহলোকে যশ-কীর্তি ও ধন এবং পরলোকে পরাগতিস্বরূপ ভগবল্লোক প্রাপ্তি ঘটে।

 

একবার ধনুর্ধর অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন,—হে জনার্দন! এই একাদশীব্রত মহিমা কৃপাপূর্বক আমার নিকট বর্ণনা করুন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, হে পার্থ! তুমি শ্রদ্ধাপূর্বক আমার কথা শ্রবণ কর। হেমন্ত ঋতু প্রারম্ভে অগ্রহায়ণ মাসে কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশী দিবসের শেষভাগে একবার অন্নভোজন করলে নক্ত ভোজন হয়। প্রাতঃকালে স্তবস্তুতি করতঃ দ্বিপ্রহরে স্নান আহ্নিক সমাপন করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধানপূর্বক শ্রীবিষ্ণুপূজা ও উপবাস সহযোগে সাধুসঙ্গে নাম-সংকীর্তন করলে পূর্বজন্মার্জিত পাপসকল বিদূরিত হয়। পুনঃ অর্জুন বললেন, হে জগন্নাথ ! আপনি পিতা, আপনি মাতা, আপনি সকলের শরণ্য, জনগণের পালক ও দুষ্টদের বিনাশকর্তা কালস্বরূপ। আবার ব্রহ্মাণ্ডের সকলের মঙ্গল সাধনকারী,ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরেরও অধিকর্তা। হোম মন্ত্রতন্ত্র যা’ কিছু নিয়ন্ত্রকসূত্রে ত্রিজগতে চরাচর প্রাণিসমূহেরও আপনার নিত্যসত্তা বর্তমান। দৈত্যকর্তৃক স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে বৈভবরহিত দেবগণও আপনার চরণে শরণাপন্ন হয়ে থাকে। আপনি শরণাপন্ন দেবগণকেও রক্ষা করেন। একবার দেবরাজ ইন্দ্র আপনার চরণে কাতরভাবে অসুরকর্তৃক নিপীড়িত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে দেবগণাধিপতে! ভক্তানুগ্রহকারীন্! হে ভগবান্! নাড়ীজঙ্ঘ নামে এক অসুরপুত্র মহাবলশালী ‘মুর’নামে এক মহা অসুর মহানগরী চন্দ্রাবতী রাজধানীতে বসবাস করত। একবার ‘মুর’স্বর্গের দেবতাদের বিতাড়িত করে তথায় বসবাস করতে লাগল। যম- অগ্নি-বরুণ-ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণের পদসমূহ সে একাকী দখল করেছিল। দেবগণ সকলে মিলে ‘মুর’কে বধ করার চেষ্টা করেও তাকে জয় করতে সমর্থ হয়নি। দেবরাজ ইন্দ্ৰ শ্রীকৃষ্ণচরণে নিবেদন করলেন, হে প্রভো! আপনি আমাদের রক্ষা করুন, দেবদ্রোহী ‘মুর’ হতে আমাদের বিজয়ী করুন। ইন্দ্র-বাক্য শ্রবণে শ্রীকৃষ্ণ ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, মুরকে আমি বধ করব, স্বর্গ থেকে ওদের বিতাড়িত করে পুনঃ দেবরাজ্য প্রতিষ্ঠিত করা হবে, আমার সঙ্গে তোমরা সকলে মিলিত হয়ে চন্দ্রাবতী নগরাভিমুখে যাত্রা কর। একদিকে কোটি কোটি দেবগণের হুঙ্কার, অপরদিকে অসুরদের গর্জন—ত্রিভুবন প্রকম্পিত হতে লাগল। অসুরদের প্রচণ্ড প্রহারে দেবগণ ইতস্ততঃ বিচরণ করতে লাগলেন, কিন্তু ভগবান অসুরদের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে একে একে সব অসুরগণকে পরাস্ত করেছিলেন কিন্তু মুরকে সংহার করা ভগবানের পক্ষেও এক ভীষণ কঠিন হয়ে উঠেছিল। অজস্র অজস্র অস্ত্রশস্ত্র প্রয়োগ করে প্রায় দশহাজার বর্ষকাল মল্লযুদ্ধ করে আপাততঃ ‘মুর’কে পরাস্ত অবস্থায় রেখে ভগবান বদরিকা আশ্রমাভিমুখে গমন করলেন। তথায় নির্জন হেমবতী নাম্নী এক গুহায় বিশ্রামের জন্য প্রবেশ করেন। অতি অল্প সময়ে মুর শয়নরত ভগবানকে বধ করবার জন্য উদ্যত হলে এমন সময় ভগবানের শয়ন অবস্থায় তাঁর দিব্যশরীর হতে এক দীপ্তিময়ী কন্যা উৎপন্না হয়ে দিব্য অস্ত্রদ্বারা সুসজ্জিত ঐ দুষ্ট ‘মুর’ নামক অসুরকে বধ করেছিলেন। অসুরের মস্তক ছেদিত হলে অন্যান্য অসুরগণ ভয়ে পালাতে শুরু করল। ভগবান ঐ সময় গাত্রোত্থান করে দেখতে পেলেন সেই ভয়ঙ্কর মুরের মৃতদেহ আর তার নিকটে করজোড়ে নম্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দিব্যরূপধারী নারী মূর্তিটি। প্রভু প্রশ্ন করলেন, কে তুমি কন্যে? কোথা হতে এসেছো? কন্যা বলল, আমি আপনার দেহ থেকে উৎপন্না হয়েছি। আপনার ঘুমন্ত অবস্থায় এই দৈত্য আপনাকে বধ করতে এসেছিল, আমি সেই জন্য ওকে বধ করেছি। ভগবান বললেন, হে দেবী! আমি তোমার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি, তুমি আমার নিকট বর প্রার্থনা কর। তখন সেই কন্যা বর প্রার্থনা করায় ভগবান বললেন,—তুমি আমার পরাশক্তি এই একাদশীতে উৎপন্না হয়েছো, সেই হেতু তোমার নাম ‘উৎপন্না’ রাখা হল। যদি কেউ এই একাদশী পালন করে, তবে সুমেরুতুল্য পাপরাশিও ধ্বংস হয়ে অক্ষয় বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্ত হয়। সেই দিন থেকে এই একাদশী ব্রত প্রচলিত হয়ে আসছে। 


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে অর্জুন! এই একাদশী ব্রত পালনে আমি পরাগতি প্রদান করি। ইন্দ্রিয় সংযম, অন্ন-পানাদি গ্রহণ বর্জন, তৈলমর্দন ও যাবতীয় ভোগ-বিলাসিতা সর্বতোভাবে নিষিদ্ধ।  

🙏🏻🙏🏻জয় গুরু মহারাজ 🙏🏻🙏🏻

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.